অষ্টম বর্ষে র‌্যাব

সাত বছর পেরিয়ে গেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব)। বাংলাদেশের 'এলিট ফোর্স' হিসেবে খ্যাত এই বাহিনী নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়ে আসছে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ তাদের জন্মের পর থেকেই। মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাদের মানবতাবিরোধী বলে আখ্যায়িত করে থাকে।


কিছু এনজিওর মন্তব্য দেখে অনেক সময় মনে হয়, র‌্যাবের অর্জন বলতে কিছু নেই। তারা যেন একান্তই মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজে নিয়োজিত। কিন্তু সাধারণ মানুষের মনোভাব তেমনটা নয়। তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে র‌্যাব সম্পর্কে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ পরিণতি ঠেকাতে এই বাহিনী যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছে। একইভাবে এলিট ফোর্স হিসেবে সন্ত্রাস এবং জঙ্গি দমনে নিজেদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এ ক্ষেত্রে র‌্যাবের সাফল্যকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনীর আধুনিক সংস্করণ হিসেবেই এ বাহিনীকে মূল্যায়ন করা হয়। আর সেদিক থেকে তাদের সুযোগ-সুবিধাও তুলনামূলক আধুনিক। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও অবকাঠামোগত সুবিধা তারা পেয়ে থাকে। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশকে আজকাল আধুনিক অনেক সুবিধাই দেওয়া হয়েছে। যে কারণে তাদের দ্বারা এ ধরনের অভিযানও পরিচালনা করা সম্ভব হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য ছিল অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে তাদের হাতে জঙ্গি বাহিনীর বেশ কিছু সদস্য আটক হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা যেতে পারে। অন্যান্য সন্ত্রাসী ধরার ক্ষেত্রেও তাদের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। সম্প্রতি র‌্যাবের প্রকাশিত সন্ত্রাসীদের নামের তালিকায় বাংলাদেশে বর্তমানে ৯০ হাজার সন্ত্রাসী রয়েছে, যাদের মধ্যে জঙ্গি সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত আছে। একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে এ সংখ্যা কম নয়। পুলিশ বাহিনীর মতো র‌্যাবও সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই বাহিনীর মাধ্যমে জঙ্গিদের আটক করাটা উদাহরণ হয়ে আছে। মুফতি হান্নান কিংবা পিচ্চি হান্নানের মতো জঙ্গি সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্তদের আটক করে তারা সুনাম অর্জন করেছে। পাশাপাশি তাদের কিছু কাজ বিভিন্ন মহলে প্রশ্নেরও জন্ম দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ক্রসফায়ারের বিষয়টি সবার আগে আসে। ক্রসফায়ারে মৃত্যুকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো ঠাণ্ডা মাথায় খুন বলে অবহিত করলেও সরকার কিংবা র‌্যাব এটাকে আত্মরক্ষার্থে গুলিবর্ষণ বলে দাবি করছে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতির বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়ে থাকে। নির্বাচনের আগে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, দেশে বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবে না।
এ কথা স্বীকার করতে অসুবিধা নেই যে সন্ত্রাস মোকাবিলা করতে এ ধরনের এলিট ফোর্স শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অন্য অনেক দেশেই রয়েছে। ওই সব এলিট ফোর্সের কর্মকাণ্ডও বিতর্কের বাইরে নয়। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ক্ষমতা নিয়ে নিশ্চয়ই কথা উঠতে পারে। তাদের যে অপরিসীম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা প্রযোজ্য কি না তা তলিয়ে দেখা দরকার। আবার দেশের প্রয়োজনেই তাদের উন্নত প্রশিক্ষণসহ আধুনিক সরঞ্জামাদি প্রদানের উদ্যোগটিও কার্যকর হওয়া দরকার। বাংলাদেশে জঙ্গি দমনে র‌্যাবের যে ভূমিকা সেটাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি মোকাবিলার ক্ষেত্রে তাদের অসুবিধায় পড়তে না হয়। বিতর্ক থাকার পরও সব মহলেই র‌্যাবের প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃত। শুধু বিতর্ক থেকে যতটা সম্ভব তাদের মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করাই এ মুহূর্তে বড় দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.