ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ায় চার ব্যক্তিত্ব

যেন আলোর মেলা বসেছিল ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া হাউসে। চার মহান ব্যক্তিত্ব আলোকিত করেছিলেন মিডিয়া হাউসের কনফারেন্স রুম। 'বাংলাদেশ প্রতিদিন' আয়োজিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁদের কথা শুনলেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের চার পত্রিকার সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা যাঁরা উপস্থিত ছিলেন।


বর্ণপরিচয় শেখার সময়ই বাংলা ভাষার জাদু পেয়ে বসেছিল। এর পর রক্তঝরা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ছিলেন স্পর্ধিত। এর পর কেটে গেছে দীর্ঘ ছয় দশক। বয়সের এই ভার নিয়েও নতুন প্রজন্মের কাছে অবিরাম মেলে ধরতে চান চেতনার পাখনা। সিরাজগঞ্জের চর এলাকার সেই ছেলেটিকে দেশ আজ চেনে 'ভাষা মতিন' নামে।
আরেকজন এবিএম মূসা। কলম হাতে একদিন অন্যায়, অসংগতি আর অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন যুবক বয়সে। এখন বয়স হয়েছে, তবু কলম ছাড়েননি। সাংবাদিকতার সৎ সাহস বুকে নিয়ে সত্যের কথা বলে চলেছেন অবিরত। এদিকে যন্ত্রণাদগ্ধ জীবনে স্বস্তি দিতে দিনমান রোগীদের সেবায়, সেবাচিন্তায় মগ্নতার নাম প্রাণগোপাল দত্ত। আরেকজন অভিনয়ে জীবন অন্যভাবে ফুটিয়ে পরিচিত হয়েছেন 'নায়করাজ' হিসেবে।
দেশের চার কৃতী পুরুষ ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, সাংবাদিক এবিএম মূসা ও নায়করাজ রাজ্জাককে আজীবন এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. প্রাণগোপাল দত্তকে বিশেষ সম্মাননা দিল দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন।
গত শনিবার এই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কনফারেন্স কক্ষে। উপস্থাপনা, বিশিষ্টজনদের উপস্থিতি, সম্মাননা পাওয়া গুণীদের অভিজ্ঞতাসঞ্জাত আলোচনায় অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে বর্ণাঢ্য।
ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন তাঁর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গিয়ে গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেছেন, 'আমার প্রেরণা হচ্ছে মানুষের সমর্থন ও ভালোবাসা। আমি এই ভালোবাসা পেয়েছি। এই সম্মাননা পেয়ে তা গ্রহণ করেছি। আমি চাই প্রজম্মের চেতনাকে জাগাতে। এই আকাঙ্ক্ষা বুকে নিয়েই আমি ঘুরছি সম্ভাবনার স্বপ্ন নিয়ে।' তিনি আরো বলেন, 'কাজের মানুষ কথা বলে কম, কাজ করে বেশি।' গতকাল কালের কণ্ঠ থেকে ফোন করা হলে সম্মাননা পাওয়া সাংবাদিক এ বি এম মূসা বললেন, 'সিরিয়াস একটা ইন্টারভিউ দিচ্ছি।'
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে স্বনামধন্য চিকিৎসক ডা. প্রাণগোপাল দত্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সম্মাননা গ্রহণ করেছি। কিন্তু তা কি আমি বইতে পারব? কারণ এই সম্মাননার জন্য, এই স্বীকৃতির জন্য আমার দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল। ভালো কাজের জন্য এই স্বীকৃতি আমার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে বহুদিন। এই সম্মাননা আমার জন্য অনন্ত অনুপ্রেরণা।'
বাংলাদেশ প্রতিদিনের ওই সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মুস্তাফা কামাল। তিনি গুণীদের হাতে সম্মাননা পদক তুলে দেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমানের সঞ্চালনায় ছিল অন্য রকম প্রাণের উৎস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম। অনুষ্ঠানে সম্মাননা পাওয়া গুণীজনদের ফুল দিয়ে বরণ করেন কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন ও ডেইলি সানের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জামিলুর রহমান।
অনুষ্ঠানে ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মূসা ও অধ্যাপক ডা. প্রাণগোপাল দত্ত উপস্থিত থাকলেও বোনের অসুস্থতার জন্য অনুপস্থিত ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। রাজ্জাক এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
প্রধান অতিথি বিচারপতি মুস্তাফা কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্মাননা প্রদান উদ্যোগের ভুয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, ভালো কাজের সুরভি চারদিকে ছড়াবেই। তা কেউ আটকাতে পারবে না। আর মন্দ কাজের গ্লানি কেউ লুকিয়ে রাখতে পারবে না।
সংবাদসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে এই প্রথম সম্মাননা পাওয়ার সরল স্বীকারোক্তি করে বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট এ বি এম মূসা বললেন, এ জীবনে অনেক সম্মাননা পেয়েছি। কিন্তু কোনো সংবাদসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে এই প্রথম সম্মাননা পেলাম।
অনুষ্ঠানে 'ভাষা মতিন' বললেন, এ জাতি কখনো মাথানত করেনি। তবে আমাদের নতুন প্রজন্মের অনেকেই শেকড় ভুলে গেছে। তরুণদের শেকড়ের সন্ধান করতে হবে। যেমনটি করে আমি বর্ণপরিচয় শিখতে গিয়ে ভালোবেসে বাঙালি হয়ে গেছি। এ দেশের ভাষা, কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষকে নতুন প্রজন্ম ভালোবাসবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. প্রাণগোপাল দত্ত সম্মাননা অনুষ্ঠানে বলেন, হাসপাতাল ডাক্তারদের মন্দির আর রোগীরা দেবতা। দেশের সব ডাক্তারকে এ চিন্তা থেকে কাজ করে যেতে হবে। ডাক্তার সমাজ ঈশ্বর ও দেবতার মাঝামাঝিতে অবস্থান করেন। একজন রোগীর আস্থা অর্জন চিকিৎসকের জন্য বড় ব্যাপার।
বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, প্রতিদিন পরিবার এ পর্যন্ত যত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, এর কোনোটি আজকের মতো নয়। এটি ব্যতিক্রমী একটি অনুষ্ঠান। প্রতিদিন পরিবারের জন্য এটি গৌরব ও অহংকারের। এ অনুষ্ঠানে দেশের এমন সব গুণী মানুষকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে যাঁরা দেশ ও জাতির পথচলায় সাহায্য করবেন।
কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, যাঁদের সম্মাননা দেওয়া হয়েছে তাঁরা বাংলাদেশের গৌরব। আমরা প্রায়ই শুনি, বাংলাদেশ হতাশায় ডুবে গেছে। আমি মনে করি, হতাশার কোনো কারণ নেই। কারণ এই আলোকিত গুণী মানুষদের আলোয় বাংলাদেশ অনেকবার আলোকিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা আবু তৈয়ব, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শেখ আহমেদ মুক্তাদীর আরীফ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.