জলজট by পলাশ মাহবুব

উভয় সংকট কাকে বলে, ঢাকা ও চট্টগ্রামবাসী তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। দেশ থেকে ঋতুবৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। এ হতাশায় আমরা ভুগছি বেশকিছু বছর ধরে। ষড়্ঋতুর দেশে ছয় ঋতু খুঁজে পাওয়া যায় না। গরমটা টের পাওয়া যায় বেশ। আসতে আসতে চলে যায় শীত।


মাঝে গুমোট আবহাওয়া। আর বর্ষা সীমাবদ্ধ দু-চার ফোঁটা বৃষ্টিতে। এ নিয়ে আফসোসের সীমা নেই।
বর্ষার খোঁজে তাই বর্ষা বন্দনায় মাঠে নামি আমরা। 'আল্লাহ মেঘ দে পানি দে'র পাশাপাশি ডিজিটাল ফরম্যাটে পত্রিকা-টেলিভিশনে আষাঢ়ের প্রথম দিন নিয়ে আমাদের ভীষণ মাতামাতি।
'কদম ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ আষাঢ়।' সাংবাদিকরা প্রতিবেদন লিখছেন।
কবি-সাহিত্যিকরা মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখছেন গদ্য আর পদ্য। আষাঢ় রবীন্দ্রনাথকে সমৃদ্ধ করেছে আর নজরুলকে বিমুখ করেনি তার করুণাধারা থেকে। তাদের লেখায় উঠে আসে সেসব খতিয়ানও।
এ বছরও এ চেষ্টা চলেছে। বেশ ঘটা করে পালিত হয়েছে আষাঢ়স্য প্রথম দিন। পত্রিকার পাতায় সুন্দর কদম ফুলের ছবি ছাপা হয়েছে। দেখলে মনটাই ভিজে যায়। টেলিভিশন চ্যানেলে আষাঢ় নিয়ে দেখানো হয়েছে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান, যেখানে শিল্পীরা গেয়েছেন আষাঢ় নিয়ে নানা পদের গান। পাঠ করা হয়েছে কবিতা। বর্ষা কামনায় তাদের এতটাই নিবেদিত মনে হয়েছে যে, সুযোগ থাকলে হয়তো তারা 'এসো হে বৈশাখ' গানটাকে বদলে 'এসো হে আষাঢ়' বানিয়ে গেয়ে ফেলেন।
লাইভ এক অনুষ্ঠানের উপস্থাপককে তো আক্ষেপ করতে দেখা গেল। 'আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন, কিন্তু আকাশ ধারণ করে আছে রুদ্রমূর্তি। এবারও কি আষাঢ়কে তার চিনচেনা রূপে পাব না আমরা!'
উপস্থাপকের আক্ষেপে কাজ হয়েছে।
এবারের বর্ষাকাল অনেকটাই চিরচেনা রূপে ধরা দিয়েছে। আষাঢ় শুরু হওয়ার পর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং উভয় সংকটের সৃষ্টি হয়েছে তার পর থেকেই।
আমাদের ঢাকা শহর যে জসীম উদ্দীনের কবিতার আসমানীদের 'ভেন্না পাতার ছানি' সেটা নতুন করে টের পেয়েছে নগরবাসী। এ নগরে পানি জমতে যে বৃষ্টির দরকার হয় না, মেঘ ডাকলেই যথেষ্ট।
আবহাওয়া অধিদফতরের মতে, গত কয়েক দিনে ঢাকা শহরে স্বাভাবিক মাত্রার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিন্তু তার প্রতিক্রিয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে অস্বাভাবিক মাত্রার। সামান্য বৃষ্টিপাতে ঢাকা শহরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও এলাকা পানিতে তলিয়ে যেতে দেখেছি আমরা। জলাবদ্ধতার যে চিত্র তাতে মনে হতে পারে, ডিএনডি কিংবা বড় কোনো বাঁধ ভেঙে শহরে পানি ঢুকে পড়েছে। যে কারণে এ ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। আর অল্প বৃষ্টির এই বড় জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীর যে বেহাল দশা, সেটা আরও করুণ। ঘর থেকে বেরোতেই কোমরসমান পানি। এর মধ্যে চলাচল করতে গিয়ে রিকশা উল্টে পানিতে নাকাল হচ্ছে অনেকেই। রাস্তার গাড়িকে মনে হয় উভচর যান।
রাজধানীর জলাবদ্ধতার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব যাদের, সেই ওয়াসা অবশ্য এ বিষয়ে নির্বিকার। রাজধানীর এ অনভিপ্রেত জলাবদ্ধতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওয়াসার শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা মজার একটি তথ্য দেন, যেটাকে আমরা জলাবদ্ধতা বলছি, সেটাকে তিনি জলাবদ্ধতা মানতে নারাজ। তবে কী সেটা?
তার মতে, এটা হচ্ছে জলজট।
উত্তরটা তিনি ভালোই দিয়েছেন। ঢাকা শহরের মানুষ এত দিন শুধু যানজটই চিনত। এবারের স্বাভাবিক বর্ষা মৌসুমে এসে তারা নতুন একটা জটের সঙ্গে পরিচিত হলো_ জলজট। যানবাহনের জটলার কারণে যানজট সৃষ্টি হয় আর পানির জটলা থেকে জলজট। জটলায় ভরা এ শহরে জলজট তো হতেই পারে।
এ শহরের যানজট কখন ছাড়বে সেটা যেমন আমরা জানি না, তেমনি ওয়াসাও জানে না কখন ছুটবে মৌসুমি বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট নতুন মোড়কের 'জলজট'।
palashmahbub82@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.