প্রতিক্রিয়া-সাংস্কৃতিক খাতে বিশেষ বরাদ্দ না থাকায় ক্ষোভ হতাশা by আজিজুল পারভেজ

সাংস্কৃতিক খাতে সরকারের প্রতিশ্রুত বিশেষ বরাদ্দ মেলেনি। গত বছর এই খাতে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ ছিল। বলা হয়েছিল, আগামী বছরে বরাদ্দ আরো বাড়ানো হবে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পেশ করা বাজেট প্রস্তাবে সেই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন নেই। এ নিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ আর হতাশা।


সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, 'বর্তমান সরকারকে আমরা সংস্কৃতিবান্ধব হিসেবে ভেবেছিলাম। অথচ তারাও যে অতীতের সরকারগুলোর মতো আচরণ করবে, তা ছিল আমাদের কল্পনারও বাইরে। দূরদৃষ্টিহীন আমলাতান্ত্রিকতায় আবদ্ধ সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডে আমরা সাংস্কৃতিক কর্মীরা দারুণভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ।'
দেশজ সংস্কৃতির বিকাশ ও সারা দেশে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক কর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মহাজোট সরকার ২০১০-১১ অর্থবছরে বাজেটের বাইরে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। যদিও শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির ভিত্তিতে অর্থ ছাড় দেওয়া হয় ৬০ কোটি টাকা। এই বরাদ্দের ফলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১৯টি প্রতিষ্ঠান ৩৮টি বিশেষ কর্মসূচি ও প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু অর্থবছর শেষ হওয়ার মাত্র তিন মাস আগে অর্থ ছাড় করায় এক বছরের কর্মসূচি তিন মাস, অর্থাৎ জুন মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো হিমশিম খায়। সময়স্বল্পতার কারণে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর গৃহীত কর্মসূচি প্রায় ৬৪ ভাগই অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর বিশেষ কর্মসূচিতেও বিশেষ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। নাটক, নৃত্য, আবৃত্তি, সংগীত এবং যাত্রাশিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা ও মানোন্নয়নের জন্য শিল্পকলা একাডেমীর অধীনে তিন কোটি ৭১ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। এর সুবাদে সংস্কৃতির নানা শাখার তৎপরতায় সারা দেশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।
জানা গেছে, ২০১১-১২ অর্থবছরের বিশেষ বরাদ্দের জন্য জাতীয়ভিত্তিক সংগঠনগুলো যথাসময়েই কর্মসূচি প্রণয়ন করে জমা দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ঝুনা চৌধুরী বলেন, 'সরকারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয়ভিত্তিক সংগঠনগুলো নানামাত্রিক কর্মসূচি প্রণয়ন করে জমা দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বরাদ্দ না দেওয়ায় আমরা হতাশ। এ নিয়ে একটি গোলকধাঁধা তৈরি করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব আসেনি আর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বলে, অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় দেয়নি। সাংস্কৃতিককর্মীদের দাবি আদায়ে এবার আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।'
সাংস্কৃতিক খাতে বিশেষ বরাদ্দ না দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর গত সোমবার জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সংস্কৃতিমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদলিপি দেয়। প্রতিবাদলিপিতে সাংস্কৃতিক খাতে বিশেষ বরাদ্দ না দেওয়া ও সরকারের উদাসীনতার সমালোচনা করা হয়েছে। প্রতিবাদলিপিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ এবং নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করেছেন।
এ বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রতিবছরের মতোই সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সংস্কৃতি খাতের বিশেষ বরাদ্দ সম্পর্কে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
গত বছর দেওয়া সরকারের বিশেষ অনুদানের ফলে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আইটিআই), জাতীয় পথনাটক পরিষদ, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, পিপলস থিয়েটার, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, থিয়েটার ডিজাইনারস অ্যাসোসিয়েশন, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা, নজরুলসংগীত শিল্পী পরিষদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, যাত্রাশিল্পী এবং জাদুশিল্পীরাও নিজ নিজ শাখার উন্নয়ন ও প্রসারে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
এ ছাড়া সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাংলা একাডেমী, নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় জাদুঘর, শিল্পকলা একাডেমী, লোক ও কারুশিল্পী ফাউন্ডেশন, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, আর্কাইভ অধিদপ্তর, শিশু একাডেমী, বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমী এবং বেসরকারি এশিয়াটিক সোসাইটি বিশেষ বরাদ্দ পায়। এ প্রতিষ্ঠানগুলোও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ ছাড়া সরকার কবিগুরুর সার্ধশততম জন্মজয়ন্তী ভারতের সঙ্গে যৌথ আয়োজনে উদ্যাপন করে। বিশেষ বরাদ্দ না থাকায় চলতি বছরে ওই সব সংগঠনের কর্মসূচিগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সাংস্কৃতিককর্মীরা।

No comments

Powered by Blogger.