অভিমত ভিন্নমত

এরশাদ-নাটকের যবনিকা হোক উচ্চ আদালতের রায়ে এরশাদের করা সংবিধান সংশোধনী এবং তাঁর ১০ বছরের সামরিক শাসন অবৈধ ঘোষণা গণতান্ত্রিক মহলের অনেককেই আশাবাদী করেছিল। আমরা ভেবেছিলাম, বাংলাদেশের রাজনীতির ঘাড়ে সিন্দবাদের ভূতের মতো চেপে থাকা এই ব্যক্তিকে বোধ হয় এবার আইনি পন্থায় নিষ্কাশন করা সম্ভব হবে। কিন্তু ঈশ্বর বুঝি এই আশাবাদের বহর দেখে মুচকি হাসলেন।


কেননা, আশার বাষ্প ঠিকঠাক বৃষ্টি হয়ে ঝরার আগেই দেখলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পতিত সামরিক স্বৈরশাসক কাম রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সুযোগ দিয়েছেন তাঁর কাছে যাওয়ার। শুধু তা-ই নয়, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে একান্তে ৪৫ মিনিট ধরে বৈঠকও করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে জানলাম। এবং হতাশ হলাম, কেননা এরশাদের দল জাতীয় পার্টি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের একটি শরিক দল হলেও আদালত যখন তাঁকে বাতিল করে দিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী তাঁকে আর এতটা গুরুত্ব ও সময় না দিলেই ভালো হতো।
অবশ্য দুর্ভাগ্যের কথা ভুলি না: যে এরশাদ ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির এক অশুভ উপদ্রব, তাঁকে এবং তাঁর সেনাশাসনের ঔরসে জন্ম নেওয়া জাতীয় পার্টিকে শরিক করেছিল বাংলাদেশের রাজনীতির উজ্জ্বল নক্ষত্রস্বরূপ প্রধান দুটি দলই। নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের মুখে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত এরশাদ আবার যে সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেলেন, তা তো তাঁকে ও তাঁর দলকে পালাক্রমে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের জোটে ভেড়ানোর কারণেই। কখনো সরকারি জোটে, কখনো বিরোধীদলীয় জোটে এরশাদকে বরণ করে নেওয়ার মাধ্যমেই তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছে নিজের নির্বাচনী রাজনৈতিক গুরুত্ব টিকিয়ে রাখা। ক্ষমতার মোহে এরশাদের ১০ বছরের অনাচার তাঁরা ভুলে যেতে পেরেছেন, কিন্তু এরশাদ আমলে নিহত অজস্র ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক শহীদদের পরিবার কিংবা এরশাদের হাতে নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত গণতান্ত্রিক কর্মীরা কি তা ভুলতে পারবেন? এরশাদ আমলের বিশিল্পায়ন, অবাধ দুর্নীতির বিস্তার, গণতন্ত্র দমন, রাষ্ট্রধর্ম বিল পাস এবং রাজনীতিতে পেশিশক্তির জন্ম দেওয়ার মতো ব্যাধির ক্ষত তো এখনো বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজের দেহে শুকিয়ে যায়নি। ইনিই তো সেই ব্যক্তি, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যিনি পাকিস্তানের ঘাতক সামরিক জান্তার হয়ে পাকিস্তানে বসে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী সেনাবাহিনীর বাঙালি সদস্যদের বিচারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধেই তো জিয়া ও মঞ্জু হত্যার নেপথ্যের কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ এখনো বহাল। বাংলাদেশে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার এবং ধর্মব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর অবদান(!) জাতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির যে ক্ষতিসাধন করেছে তা এক কথায় অপূরণীয়। এমন একজন ব্যক্তি, যাঁর অন্যায়-অপরাধের সীমা-পরিসীমা নেই, তিনি মাত্র কয়েকটি বছর কারাবাস করেই ক্ষমা পেতে পারেন না।
আদালত এরশাদের শাসনামলকে বাতিল করে দিয়েছেন। কিন্তু এরশাদের রাজনীতি এবং বিত্তশালী ক্ষমতাবান মানুষের মতো মুক্তভাবে চলেফিরে বেড়ানো যে বাতিল করা যাচ্ছে না, তা কোনো রহস্যময় ব্যাপার নয়। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের সংকীর্ণ স্বার্থের কারণেই জনগণ নব্বইয়ে যেমন, এখনো তেমনি এরশাদের উপযুক্ত বিচার দেখতে পারছে না।
যে ব্যক্তি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশের জনগণের ঘাড়ে চেপে বসেছিলেন, দীর্ঘ নয় বছরে যিনি দেশকে দুর্নীতিবাজদের আখড়ায় পরিণত করেছিলেন; যিনি নিজে এত বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন যে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিশ বছরেও তাঁর টাকা শেষ হচ্ছে না, তাঁর অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। পুরো আশির দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের আত্মদানের মর্যাদা রক্ষা করতেও এরশাদের বিচার হওয়া উচিত। সেলিম, দেলোয়ার, জাফর, জয়নাল, দীপালি সাহা, রাউফুন বসুনিয়া, নূর হোসেন, ডা. মিলন—এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য এরশাদের বিচার হওয়া উচিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যে স্বৈরশাসক রাষ্ট্রের ওপর বলাৎকার করেছেন, যিনি একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগিতা করেছেন, যিনি অর্থনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন, যিনি রাজনীতিতে অনৈতিকতার মূর্তিমান উপস্থিতি, তাঁর কবল থেকে বাংলাদেশকে রেহাই দিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিন।
আরিফ রায়হান
দক্ষিণ মৈশুণ্ডি, ঢাকা।

যেমন ভোক্তা তেমন বিক্রেতা
রমজান মাসের শুরু থেকে দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়েছে। অথচ রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার কথা নয়, কারণ পবিত্র রমজান ভোগের মাস নয়, সংযমের মাস। ২৬ আগস্ট প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর ছিল পান্তা, চডা ও পানি দিয়ে ইফতার করছে দরিদ্র মানুষগুলো। বাস্তবে তাদের জন্য তো সব মাসই সমান। তাদের জন্য এমন কোনো মাস নির্ধারণ করা নেই, যে মাসে তারা ধনীদের কাতারে আসতে পারবে আর সারা মাস বিশ-পঁচিশ রকম উপাদেয় ইফতার খেতে পারবে। সৃষ্টিকর্তা বিত্তবানদের সুযোগ করে দিয়েছেন দরিদ্রদের কষ্ট বোঝার। কিন্তু আমরা যারা দরিদ্রদের কাতারে দাঁড়ানোর জন্য রোজা রাখছি, তারা কী দিয়ে ইফতার করছি? এই সংযমের মাসে সংযমের নামে চলছে ভোজনের উৎসব। সারা দিন সবাই অপেক্ষায় থাকি ইফতারে কী কী খাব। আর দোকানে দোকানে চলছে বেশি দামি ইফতারের আয়োজন। বিক্রিও যে খুব ভালো তা প্রতিদিন ইফতারের আয়োজন দেখলেই বোঝা যায়। যে দেশের একটা বড় জনগোষ্ঠী পান্তা দিয়ে বা মুড়ি দিয়ে ইফতার করে, সে দেশে মোটামুটি ভালো দোকান থেকে একজনের জন্য ইফতার কিনতে ১০০ টাকার বেশি লাগে। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। এই মাসে চাহিদা এত কম থাকার কথা যে সব জিনিসের দামও কম থাকার কথা। অন্তত অর্থনীতির সূত্র তা-ই বলে।
সিয়াম সাধনার মাসে দ্রব্যমূল্য বেশি হওয়ার জন্য শুধু বিক্রেতাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। এর জন্য ভোক্তা আর বিক্রেতা সমানভাবে দায়ী। ভোক্তা হিসেবে আমরাও অসৎ। একজন বিক্রেতা যেমন আইন ও নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে জিনিসের দাম বাড়ায়, তেমনি ভোক্তারা রোজার আসল উদ্দেশ্যের ব্যত্যয় ঘটিয়ে খাবার বেশি পরিমাণে খায়। আমরা যদি সত্যি সত্যি রমজানের মর্ম অনুধাবন করি, তাহলে বেশি বেশি ইফতার করার পরিবর্তে কতটা কম খাওয়া যায় তা ভাবতে হবে। দরিদ্র মানুষগুলো না খেয়ে থাকলে কেমন লাগে তা না হয় না-ই বা অনুভব করলাম, অন্তত আল্লাহকে ভয় করে হলেও রোজার উদ্দেশ্য সফল করা উচিত।
সাবিনা পারভীন, ইন্দিরা রোড, ঢাকা।
sabink99@yahoo.com

যুবকের প্রতারণার শিকার
ফেনী জেলার প্রায় এক হাজার সাধারণ মানুষ যুবক নামের একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতারণার শিকার হয়ে এখন চরম হতাশা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। প্রায় সাত বছর আগে ফেনীর অনেক নারী-পুরুষকে অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে মাঠে নামে যুবক। তাঁদের প্রতি ৯৬ হাজার টাকায় ছয় মাসে ১৬ হাজার টাকা মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় যুবক। যুবক সরাসরি টাকা সংগ্রহ না করে ফেনীতে প্রায় ১০০ স্থানীয় সংগঠক নিয়োগ করেছিল, তাঁদের কাজ ছিল সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখানো। অনেকে জমি বিক্রি করে, ব্যাংক ও ডাকঘরে জমানো টাকা মেয়াদপূর্তির আগেই উঠিয়ে, কেউ কেউ স্বর্ণালংকার বিক্রি করে, সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীরা তাঁদের এককালীন টাকা খাটায় এই প্রকল্পে। যুবক বিশ্বাস অর্জনের জন্য অনেককে দু-এক কিস্তি মুনাফা দিয়েছিল। কিন্তু তিন বছর ধরে মুনাফা দূরে থাক, আসল টাকা দিতেও গড়িমসি করছেন যুবকের লোকজন।
গ্রাহকেরা টাকার জন্য চাপ দেওয়া শুরু করলে হঠাৎ ফেনীতে অবস্থিত অফিসগুলো বন্ধ করে দিয়ে কর্মকর্তারা চলে যান। বহু গ্রাহক টাকার শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কেউ পক্ষাঘাতে আক্রান্ত, কারও মস্তিষ্কবিকৃতি দেখা দেয়। অনেক নারী প্রবাসী স্বামীর বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা যুবকে খাটিয়েছিলেন। এখন তাঁদের অনেকেই স্বামীপরিত্যক্তা। অর্থ লগ্নিকারী কেউ কেউ মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে ফেনী সরকারি কলেজের একজন শিক্ষকও রয়েছেন।
প্রায় পাঁচ মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংবাদপত্রে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে গ্রাহকদের প্রমাণপত্রের অনুলিপি জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু পরে এ বিষয়ে কোনো তৎপরতার কথা জানা যায়নি। এখন একদিকে গ্রাহকেরা গভীর হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন, অন্যদিকে প্রতারক চক্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। চক্রটি বলছে, যা করার সরকার করবে, তাদের কথা বলা নিষেধ। এই অবস্থা থেকে আমরা যুবকের ফেনীর গ্রাহকেরা মুক্তি চাই এবং আমাদের টাকা ফেরত চাই।
যুবকের কাছে প্রতারিত ভুক্তভোগীরা
ফেনী।

শিশুশিক্ষা ও সাক্ষরতা জরিপ ২০১০
বিদ্যালয়ে ভর্তিযোগ্য শিশুদের শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করতে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশে একযোগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুশিক্ষা ও সাক্ষরতা জরিপ ২০১০-এর ফরম পূরণ করে উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দিয়েছেন। ফরমগুলোর উপজেলাওয়ারি সারসংক্ষেপ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এখন ফরমগুলো উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কম্পিউটার অপারেটর, কোথাও কোথাও বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কম্পিউটারে এন্ট্রি করছেন। এই এন্ট্রি-প্রক্রিয়া নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং যাঁরা ডেটা এন্ট্রি করার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন তাঁরা পড়েছেন লেজে গোবরে অবস্থায়। যেমন—শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফরম পূরণ করার কথা থাকলেও অনেক শিক্ষক নিজে না গিয়ে ওই গ্রামের বেকার, পড়ালেখা করছে অথবা ছেড়ে দিয়েছে এমন ছেলেমেয়েদের মাধ্যমে জরিপ ফরম পূরণ করিয়েছেন। হাতের লেখা খুব খারাপ, পাঠোদ্ধার করাই মুশকিল। আর তথ্যের দিকটা কী বলব। একটি প্রশ্ন রয়েছে ‘খানার মোট সদস্যসংখ্যা কত?’ তারপর রয়েছে ‘তার মধ্যে মহিলা কতজন?’ এখানে দেখা যায় মোট সদস্যসংখ্যার চেয়ে মহিলা বেশি দেওয়া আছে। অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন সদস্যদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা। খানার মোট সদস্যসংখ্যার চেয়ে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন সদস্যসংখ্যা বেশি দেখানো আছে। কোনো কোনো ফরমে ‘নিয়মিত স্কুলে যায় কি না’ এই ঘরও পূরণ করা হয়নি। ‘লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে থাকলে কারণ’—এটাও পূরণ করেননি অনেকে। কোনো কোনো শিক্ষক তাঁর পূরণ করা সব ফরমে ছয় বছরের কম বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে ‘লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়ার কারণ’ লিখেছেন ‘স্কুলে ভর্তি না করায়’। কেউ কেউ সব ফরমে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর কলামে ‘জানা নেই’ লিখেছেন। অনেকেই এমন সব কোড লিখেছেন যেগুলো আদৌ কোনো মান বহন করে না।
এবার কম্পিউটারে ডেটা এন্ট্রি প্রসঙ্গে। উপজেলার আয়তন ও জনসংখ্যার ঘনত্ব অনুযায়ী পনেরো হাজার থেকে দেড় লাখ পর্যন্ত খানা আছে। যেসব উপজেলায় জন্মহার বেশি সেখানে ০ থেকে ১৪ বছর বয়সের শিশুর সংখ্যাও বেশি। ফলে খানা কম থাকলেও বেশিসংখ্যক শিশুর নাম এন্ট্রি করতে হয় এবং প্রতি খানা এন্ট্রি করতে গড় সময় বেশি লাগে। আছে বিদ্যুৎ, কম্পিউটারের যান্ত্রিক সমস্যা। উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের কম্পিউটার নষ্ট থাকলে উপজেলা শিক্ষা অফিসের কম্পিউটারে কাজ করতে হয়। সেখানে কাজ করতে বসলে শিক্ষা অফিসের অনেক কাজ করে দিতে হয়, ফলে জরিপকাজে বিঘ্ন ঘটে। এ ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসার প্রমুখের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের কম্পিউটার-সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতে হয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং পিটিআইয়ের সুপারিনটেনডেন্টও বিভিন্ন সময় ডেকে পাঠান কাজ করে দেওয়ার জন্য। উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের করণিকের কাজ, প্রশিক্ষণ চলার সময়ে সহায়ক স্টাফের কাজ এমনকি যেখানে পিয়নের পদ শূন্য সেখানে পিয়নের কাজও করতে হয় ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকেই। এ অবস্থায় মাসে ১৫ দিন কাজ করা এবং দৈনিক গড়ে ১০০ থেকে ১৫০টি খানার বেশি এন্ট্রি করা সম্ভব হয় না। যেখানে খানা অনুপাতে শিশুসংখ্যা বেশি সেখানে তো আরও কম। এ ছাড়া রয়েছে বিদ্যালয় জরিপ ২০১০-এর ফরম এন্ট্রি, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা ২০১০-এর ডিআর এন্ট্রির কাজ। এগুলোর মধ্যে কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা মুশকিল। যার ফলে বিদ্যালয় থেকে চাঁদা উঠিয়ে বাইরে থেকে কাজ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন অনেক শিক্ষা অফিসার। তাতেও রয়েছে সমস্যা। উপজেলা পর্যায়ের দোকানের লোকজনের এই সফটওয়্যার সম্পর্কে সার্বিক ধারণা না থাকায় তাঁরা সঠিকভাবে এন্ট্রি করতে পারছেন না। যেখানে চাঁদা ওঠানো হয়নি, সেখানে একা একজন ব্যক্তি এ কাজ করে যাচ্ছেন। যাঁদের বাসায় কম্পিউটার আছে তাঁরা অফিস সময়ের পর বাসায় নিয়ে ডেটা এন্ট্রি করছেন।
এভাবে চলতে থাকলে এই ডেটা এট্রির কাজ শেষ করতে কত দিন সময় প্রয়োজন বা কাজটি আদৌ সুসম্পন্ন করা যাবে কি না, তা-ই এখন বিবেচ্য বিষয়। এই এন্ট্রি কার্যক্রম সম্পন্ন না হলে শতভাগ ভর্তি কেন নিশ্চিত হবে না, সেটাও সঠিকভাবে বোঝা যাবে না। তাই ওপরের সমস্যাগুলো বিবেচনা করে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ডেটা এন্ট্রির কাজটি সম্পন্ন করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নাগরিক।

ক্ষুদ্রঋণের জালে সাঁথিয়াবাসী
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অনেক গরিব মানুষ বিভিন্ন এনজিওর কাছে চড়া সুদে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বিপদে পড়েছেন। এক এনজিওর ঋণ শোধ করতে আরেক এনজিওর কাছে ঋণ নেওয়া—একাধিক এনজিওর কিস্তির টাকা শোধ করতে গিয়ে এসব পরিবারের অনেক কিশোর-তরুণ মাদক পাচারসহ বিভিন্ন বেআইনি পথে উপার্জনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ ঋণ শোধ করতে না পেরে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সাঁথিয়ায় আট-দশটি বেসরকারি ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা কাজ করছে। গরিব মহিলা, দিনমজুর, প্রান্তিক চাষি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে চড়া সুদে ঋণ নেন। দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তিতে তাঁদের ঋণের টাকা শোধ করতে হয়। কিন্তু তাঁরা ঋণের টাকার সদ্ব্যবহার করছেন কি না, তাঁদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটছে কি না—এসব পর্যালোচনা না করেই সংস্থাগুলো তাদের ঋণ দেয় এবং কিস্তি আদায় করে। ক্ষুদ্রঋণের সহায়তায় তাঁরা আত্মনির্ভরশীল হচ্ছেন না, বরং সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। সাঁথিয়া উপজেলা সদর, নন্দনপুর, ধুলাউড়ি, কাশীনাথপুর, করমজা, সোনাতলা, নাগডেমড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপ করে ক্ষুদ্রঋণ দানকারী সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বরং মানুষ বলছে, সংস্থাগুলো আধুনিক পদ্ধতিতে পুরোনো সেই মহাজনি সুদের ব্যবসাই চালিয়ে যাচ্ছে।
ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্যের কারণে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে অনেক সুনাম করেছে। মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর গ্রামীণ ব্যাংক এ জন্য নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন। সাঁথিয়ায় কেন ক্ষুদ্রঋণব্যবস্থা গরিবদের দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হচ্ছে না, তা নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগেরও হয়তো কিছু করণীয় আছে।
মো. আশিক ইকবাল, সাঁথিয়া বাজার, পাবনা।

যানজট নিরসনে রাজধানীর নৌপথ
এ বছর রাজধানী হিসেবে ৪০০ বছর পার করেছে ঢাকা শহর। ইতিহাসবিদদের তথ্যানুযায়ী, মোগল আমলে ঢাকাকে রাজধানী হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার অন্যতম কারণ ছিল নদী। রাজধানী হিসেবে ঢাকার মর্যাদা এখনো অক্ষুণ্ন থাকলেও সেই নদীর মর্যাদা আর আগের মতো নেই। রাজধানীর চারপাশ ঘেরা চারটি নদীর নাজুক অবস্থা সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় প্রায় প্রতিদিনই লেখা হচ্ছে, তার পরও কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙছে না। আজ চারটি নদী সুস্থ থাকলে নগরবাসী যানজটের মতো মহাদুর্ভোগ থেকে অনেকটাই রেহাই পেত।
বলা বাহুল্য, যানজট নিরসনে সরকারের প্রায় গলদঘর্ম অবস্থা। শত শত পরিকল্পনা, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও রাজধানী থেকে যানজট বিদায় করা যাচ্ছে না। যানজট নিরসনে সরকার তো স্থলপথে সমাধান না পেয়ে ইতিমধ্যে উড়ালপথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। সম্প্রতি প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীতে উড়াল সড়ক (এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে) নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
কিন্তু আজ রাজধানীর চারপাশ ঘেরা ১১২ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌপথ সচল ও সুগম থাকলে সরকারের হয়তো এ ধরনের ব্যয়বহুল প্রকল্প গ্রহণ করতে হতো না। বিশ্বের বহু উন্নত শহরেই নগরের নৌপথ কাজে লাগিয়ে শহরকে যানজটমুক্ত রাখা হয়েছে। কিন্তু আমরাই কেবল উল্টো পথে হেঁটেছি। নদীগুলোকে তো মেরেছিই, সেই সঙ্গে মহানগরের ভেতরে বিভিন্ন স্থানের খাল ও ঝিলগুলোও প্রায় সর্বাংশে বিলুপ্ত করতে বসেছি।
তবে একটি আশার খবর, গত ২৮ আগস্ট সরকার রাজধানীর যানজট নিরসনে আমিনবাজার-সদরঘাট নৌপথে ‘বুড়িগঙ্গা’ ও ‘তুরাগ’ নামের দুটি সুদৃশ্য জলযান (ওয়াটার বাস) চালু করেছে। যানজট নিরসনে এ ধরনের ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে সাধুবাদযোগ্য। তবে এ ধরনের উদ্যোগের ক্ষেত্রে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা খুব সুখকর নয়। ২০০৫ সালের তৎকালীন জোট সরকার ২৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীতে বৃত্তাকার নৌপথ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সেই বৃত্তাকার নৌপথ আজও ‘সমস্যার বৃত্ত’ থেকে বের হতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নদীর নাব্যতা রক্ষার কোনো উদ্যোগ না নেওয়া আর যথাযথ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় ওই প্রকল্প প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। যাত্রীসাধারণ বরাবরই সরকারের এ ধরনের শুভ উদ্যোগকে সানন্দেই গ্রহণ করে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলা-অব্যবস্থাপনার কারণে এসব উদ্যোগ সাফল্যের মুখ দেখতে পায় না।
তবে আমরা আশা করব, এবারের এই ওয়াটার বাস প্রকল্প অন্তত ব্যর্থ হবে না। ঢাকা মহানগরের দুর্বিষহ যানজট নিরসনে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ প্রকল্প জনপ্রিয় করা খুবই জরুরি। এ জন্য সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই সঙ্গে রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথও ভালোভাবে চালু করতে হবে।
রানা আব্বাস
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
rana_geographer@yahoo.com

‘আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়’
সরকারদলীয় একজন সাংসদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দলীয় এক কর্মীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে গুরুতর। এমপি হোস্টেলের মতো সুরক্ষিত জায়গায় এটি ঘটেছে। আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ হালকাভাবে নেওয়ার অবকাশ নেই।
ওই সাংসদের নামে আরও নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের রাজনীতিকদের অনেকেই ক্ষমতাসীন থাকলে ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। ক্ষমতা তাঁদের কাউকে কাউকে অন্ধ করে দেয়; এ ধরনের রাজনীতিকেরা কোনো আইনকে পরোয়া করেন না। ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে, জনপ্রিয়তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে—এসব জেনেও দল তাঁদের বিরুদ্ধে সচরাচর পদক্ষেপ নিতে চায় না। এ কারণে আইনের শাসন বাধাগ্রস্ত হয়, মানুষ আইনের প্রতি আস্থা হারাতে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন, অপরাধী যে দলেরই হোক, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা এ ঘোষণার যথাযথ বাস্তবায়ন দেখতে চাই। আমরা আশা করব, সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি যথাযথভাবে তদন্ত করা হবে এবং প্রকৃত অপরাধী বিচারের মুখোমুখি হবে। আইন সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য; কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়—এই সত্যের বাস্তব প্রতিফলন ঘটুক।
ফারহান তাম্বীরুল
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.