বাজেট বড় হলেও বাস্তবায়ন করতে পারব : প্রধানমন্ত্রী-বিচার বিভাগ নিয়ে বক্তব্যে সতর্ক থাকার নির্দেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'জাতীয় সংসদে পেশ করা ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সময়োপযোগী। বাংলাদেশের ১৫ থেকে ১৬ কোটি মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বড় বাজেটই করতে হবে। অনেকে এই বাজেটকে বড় বললেও আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।


' গণভবনে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, 'মানুষের দ্রুত উন্নয়নের জন্য বড় বাজেট প্রয়োজন। আমার বিশ্বাস, আমরা এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব।' প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, '৫ শতাংশ ঘাটতি নিয়েই বাজেট দিয়েছি। আগেও তাই ছিল। সাধারণ মানুষ এই বাজেটে শুভ ফল পাবে।' বৈঠক সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের আমলে সংশোধিত সংবিধানের আলোকেই কেবল বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনায় রাজি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই আলোচনা সংসদে বা সংসদের বাইরে হলেও আপত্তি থাকবে না দলটির। তবে সংশোধিত সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো আলোচনা বা কর্মকাণ্ড না করার ব্যাপারে তারা অনড়। বৈঠকে দল ও সরকারের এই অবস্থান ব্যাখ্যা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপের প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে শেখ হাসিনা তাঁর এই অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'আমরা সংবিধান সংশোধন করেছি। সুতরাং এর বাইরে গিয়ে কোনো আলোচনা সম্ভব নয়।' পাশাপাশি অনির্বাচিত সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন এ দেশে হবে না বলেও দলের নেতাদের জানান তিনি।
বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যকার সাম্প্রতিক বিতর্ক সম্মানজনকভাবে নিরসনের দাবি জানানো হয়েছে। দলের নেতারা বলেন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগ সবই একই দেশের। এ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আবদুল মতিন খসরু ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কথা বলেন। দলের নেতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে তিনি সংসদ সদস্যদের বিচার বিভাগ নিয়ে সতর্কভাবে বক্তব্য উপস্থাপনের নির্দেশ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, 'বিদ্যুৎ, কৃষিসহ মানুষের যেখানে প্রয়োজন সেখানে ভর্তুকি দিচ্ছি। ভবিষ্যতে বিদ্যুতে আর ভর্তুকি দিতে হবে না। আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি, তাতে ভবিষ্যতে ভালো ফল পাওয়া যাবে। আমাদের লক্ষ্য দেশীয় শিল্প রক্ষা করা। এ জন্য দেশীয় শিল্পকে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।'
সূত্র জানায়, বৈঠকে শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোবারক শিকদারের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বৈঠকে জুলাই মাসের মধ্যে দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন শেষ করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। সম্মেলনের তারিখ প্রধানমন্ত্রীর দৈনিক কর্মসূচির সঙ্গে মিলিয়ে পরবর্তী সময়ে নির্ধারণ করা হবে।
বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাঁদের নিজ নিজ বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। যেসব সাংগঠনিক ইউনিটে সমস্যা রয়েছে সেগুলো প্রধানমন্ত্রী নিজে সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে বসে সমাধান করবেন বলেও বৈঠকে জানান শেখ হাসিনা।
ব্রিফিং : বৈঠক শেষে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা হবে। তবে তা হতে হবে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে। আলোচনা হবে এবং আগামী নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে- এমন মন্তব্য করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলোচনা হচ্ছে এবং আরো হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিরোধী দলের ১০ জুন অর্থাৎ আগামীকালের আলটিমেটাম প্রসঙ্গে সৈয়দ আশরাফ বলেন, 'এটা রাজনৈতিক আলটিমেটাম। এ ধরনের আলটিমেটামের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে হরতালের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারা জনগণ মেনে নেবে না।'
বৈঠক প্রসঙ্গে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে যেসব কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে তা অবহিত করা হয়। ভবিষ্যতেও যেসব কাউন্সিল হবে তা জানানো হবে। তৃণমূল পর্যায়ের কাউন্সিল শেষ করে যথাসময়ে দলের জাতীয় কাউন্সিল করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.