শিক্ষক প্রশিক্ষণের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ জরুরি by মোঃ মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সারা বছর নানা ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এসব প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি বিএড কোর্স। বিভিন্ন মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা করছেন অথচ বিএড ডিগ্রি নেই এবং যারা মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকতা করতে আগ্রহী তাদের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এক বছরমেয়াদি বিএড কোর্স চালু আছে।


বিএড কোর্সে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পাঠদানের আধুনিক পদ্ধতি ও কলাকৌশলের সঙ্গে শিক্ষকদের পরিচিত করে তোলা হয়। এ ছাড়া শিক্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন, শিখনের জন্য বিশ্বাস ও মূল্যবোধ গঠন, পেশাগত মনোভাবের উন্নয়ন, দলগত কাজ পরিচালনার মাধ্যমে নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশ এবং স্কুলে শিখন-শেখানো কার্যক্রম অংশগ্রহণমূলক করে গড়ে তোলায় দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন, শ্রেণীকক্ষ ব্যবস্থাপনা, উচ্চতর দক্ষতা গঠন, আত্মোন্নয়নের জন্য প্রতিফলনমূলক অনুশীলন, কর্মসহায়ক গবেষণা পরিচালনা, পাঠ পরিকল্পনা প্রণয়ন, সমস্যা সমাধানে দক্ষতা, কম্পিউটার বিষয়ে মৌলিক দক্ষতা, ভাষাগত দক্ষতা এবং মূল্যায়ন দক্ষতা অর্জন করা বিএড কোর্স পরিচালনার অন্যতম উদ্দেশ্য। সাফল্যজনকভাবে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার জন্য প্রশিক্ষণার্থীদের সংশ্লিষ্ট টিচার্স ট্রেনিং কলেজে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সার্বক্ষণিকভাবে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অধিকাংশ টিচার্স ট্রেনিং কলেজে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে এক রকম ঢিমেতালে। শ্রেণী কার্যক্রমে প্রশিক্ষণার্থীর অনিয়মিত উপস্থিতি, নিয়মিত প্রশিক্ষণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত না হওয়া, কারিকুলামে বর্ণিত শিখনক্ষেত্রের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য আরোপিত শর্তাবলি পূরণে শিথিলতা প্রদর্শন এবং ত্রুটিপূর্ণ মূল্যায়ন ব্যবস্থা দক্ষ শিক্ষক তৈরিতে বাধা হিসেবে কাজ করছে। এসব কারণে বিএড কোর্সের কারিকুলাম যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে মনে করা হয়।
মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা খরচ করছে। ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের টিকিউআই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৬শ' কোটি টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। ১৪টি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, একটি মাদ্রাসা টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং ৫টি হায়ার সেকেন্ডারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দক্ষতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য খরচ হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব। ব্যয়িত টাকার বেশিরভাগ বৈদেশিক ঋণ হিসেবে প্রাপ্ত, যা সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হবে। ঋণ গ্রহণের জন্য সরকারকেও অনেক সময় দাতা সংস্থার কাছ থেকে নানা ধরনের অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় শর্ত মেনে নিতে হয়। কাজেই শিক্ষক প্রশিক্ষণের গুণগত মান বাড়ানোর জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে তার মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত হচ্ছে কিনা সে দিকটিই পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। কারণ মানসম্মত শিক্ষক প্রশিক্ষণের ওপর স্কুল শিক্ষার গুণগত মান নির্ভরশীল। স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিষয়বস্তু মুখস্থ করার প্রবণতা থেকে বের করে আনার জন্য সরকার নানামুখী বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কীভাবে শিশুদের সৃজনশীল করে গড়ে তোলা যায়। অথচ স্কুল শিক্ষার্থীদের যারা পড়াবেন সেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে হতাশাজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সবাই জানেন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ যদি দুর্বল এবং ত্রুটিপূর্ণ হয় তাহলে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাস্তবে দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি নির্বিশেষে প্রায় সব টিচার্স ট্রেনিং কলেজেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম একরকম ভেঙে পড়ছে। বলতে বাধা নেই, মানহীন শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রভাব পড়ছে স্কুলের পড়ালেখার ওপর। স্কুল শিক্ষায় গুণগত মান বজায় রাখার স্বার্থেই মানসম্মত শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা জরুরি।

স সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ময়মনসিংহ
সঁলরনঁৎ২৯@মসধরষ.পড়স
 

No comments

Powered by Blogger.