ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবিলম্বে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা উচিত-শিক্ষক-কোন্দল কত দূর যাবে?

বাংলাদেশে দলীয় রাজনৈতিক সরকার পরিবর্তন হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য থেকে শুরু করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেতৃত্বও বদলে যায়। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক শিক্ষকেরা এসব পদে আসীন হন। তাঁরা একটি পক্ষ হিসেবে পরিচিত, তাঁদের সংঘবদ্ধতার রং নীল অথবা সাদা।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও সহ-উপাচার্য হারুন-অর-রশিদও বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর নিয়োগ পেয়েছেন সেভাবেই। তাঁদের রং অভিন্ন: নীল।
সর্বশেষ খবর, সহ-উপাচার্য হারুন-অর-রশিদ ও কোষাধ্যক্ষ মীজানুর রহমান পদত্যাগ করেছেন। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের শূন্য পদে নতুন নিয়োগও হয়েছে। হারুন-অর-রশিদের ব্যাখ্যা: ‘আমি শিক্ষা ও গবেষণায় আরও বেশি মনোযোগ দিতে চাই। তাই পদত্যাগ করছি।’ আর মীজানুর রহমানের বক্তব্য: ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এই অচলাবস্থা নিরসনেই আমরা পদত্যাগ করেছি।’
কিন্তু তাঁদের পদত্যাগের প্রকৃত কারণ সম্ভবত এসব নয়। উপাচার্য আর সহ-উপাচার্যের মধ্যকার বিরোধ সুবিদিত। এ দুটি শীর্ষ পদে আসীন একই দলের এ দুজন শিক্ষককে কেন্দ্র করে বিরোধটি ছড়িয়েছে সরকারপন্থী শিক্ষকদের পুরো অংশের মধ্যেই, সহ-উপাচার্যের সঙ্গে আছেন কোষাধ্যক্ষ আর সম্প্রতি ভিড়েছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অহিদুজ্জামান। উপাচার্যের সঙ্গে সহ-উপাচার্যের বিরোধের আরও একটি কারণের কথা বলা হয়; সেটি হলো সহ-উপাচার্যের ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়টির জিন প্রকৌশল বিভাগে শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করে যোগ্যতার ঘাটতির কারণে নিয়োগ পাননি।
এই হলো প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের বর্তমান হাল! প্রতিপক্ষ দলের সঙ্গে নয়, একই দলের মধ্যে এমন অপ্রতিকার্য বিরোধ! শিক্ষকদের মধ্যকার এসব কোন্দল বিশ্ববিদ্যালয়টির নৈতিক ও প্রশাসনিক মানের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হচ্ছে; পঠন-পাঠন, গবেষণার ক্ষেত্র ও পরিবেশকে বিরূপ করে তুলেছে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের এভাবে চলা উচিত নয়; এখনই এ ধ্বংস-প্রক্রিয়া থামানো দরকার। উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী ভিত্তিতে। কিন্তু অধ্যাদেশে অস্থায়ী নিয়োগের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি বলেই তা দীর্ঘ সময় অব্যাহত রাখা উচিত নয়। তিন বছর পেরিয়ে গেছে; উপাচার্য প্যানেল নিয়োগের উদ্যোগ আগেই নেওয়া উচিত ছিল। আর দেরি না করে এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.