নিশাত খুনের নেপথ্যে সম্পত্তির বিরোধ!-ছোট বোনকেও হত্যার চেষ্টা হয়েছিল

রাজধানীর তোপখানা রোডে মায়ের চোখের সামনে মেয়েকে হত্যার নেপথ্যে রয়েছে সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব। প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে আটক দুজনকে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে তারা মুখ খুলতে নারাজ।


জানা গেছে, নিশাত বানু হত্যাকাণ্ডের আগে তাঁর ছোট বোন জেবুন্নেসা বানু জেবাকে হত্যার টার্গেট করা হয়। জুসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে তাঁকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মনিরুজ্জামান এ ঘটনা ঘটায় বলে ওই সময় দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়। এরপর মেয়েদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ওই মেয়েকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেন মা খালেদা বানু। বড় মেয়ে রাশিদা বানু চলে যান কানাডায়। মেজ মেয়ে নিশাত বানু মায়ের সঙ্গে থাকতেন তোপখানার ওই বাড়িতে। কিন্তু খুনিদের লম্বা হাত তাঁকে বাঁচতে দেয়নি।
নিশাত বানু হত্যার ঘটনায় সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ থাকা মনিরুজ্জামানের দুই ছেলে সাইফুল ও সেলিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার আটক করে ডিবি পুলিশ। ডিবির (দক্ষিণ) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. নুরুন্নবী গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আটক দুই ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে কিছু বলা যাবে না।'
রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) সৈয়দ নূরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মামলার তদন্ত চলছে। পুলিশ চেষ্টা করছে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের।'
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, ঘটনার চার-পাঁচ দিন আগে বাড়িটি ভেঙে নতুন করে গড়ার জন্য কয়েকটি ডেভেলপার কম্পানির সঙ্গে কথা বলেন খালেদা বানু। আর এ কারণে দ্রুত এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়ে থাকতে পারে।
অন্যদিকে মেয়ে খুন হওয়ার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছেন মা খালেদা বানু। তোপখানা রোডের ওই বাড়ির সামনে গতকাল পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। খালেদা বানু গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, 'নিশাতের হত্যাকারী ও তাদেরকে যারা পাঠিয়েছে, তাদের শাস্তি দেখে মরতে চাই। চোখের সামনে নিজের মেয়েকে হত্যার দৃশ্য একবারের জন্যও ভুলতে পারছি না। সারাক্ষণ সেই দৃশ্য চোখের সামনে ভাসছে।'
খালেদা বানু জানান, বাসায় যে তিন যুবক ঢুকেছিল তাদের একজনের চুল কোকড়ানো। তিনজনই সুঠামদেহী। তিনি অভিযোগ করেন, এর আগেও তাঁর ছোট মেয়ে জেবাকে প্রাইভেট কার চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে মনিরুজ্জামান। এখন মনিরুজ্জামানের ছেলেরা তাঁর বাড়িটি দখলের জন্য ভাড়াটে খুনি দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
শাহবাগ থানার পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে খালেদা বানু বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ সালে নিশাত বানুর ছোট বোন জেবাকে জুসের সঙ্গে বিষ খাইয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় মনিরুজ্জামান। এ ঘটনায় ওই সময় রমনা থানায় মামলাও হয়। ডিবির এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় মনিরুজ্জামানের ছেলে সাইফুল জানায়, ওই মামলায় তার বাবা খালাস পেয়েছিল।
নিশাতের খালু জিএম ফারুক কালের কণ্ঠকে জানান, খালেদা বানুর বড় মেয়ে রাশেদা বানুর নামে উত্তরায় ১৬ শতাংশ জমি রয়েছে। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে রয়েছে ৫০ বিঘা জমি। সব জমিরই দলিল ছিল খালেদা বানুর বাসার ট্রাংকে। এসব দলিল নিয়ে গেছে খুনিরা। তাঁর ধারণা, খুনিরা দুজনকেই হত্যা করতে চেয়েছিল। অলৌকিকভাবে খালেদা বানু বেঁচে গেছেন। তিনি বলেন, 'আমরা হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও এর পেছনে যারা আছে তাদের শাস্তি দাবি করছি।'
জিএম ফারুক জানান, নিশাত হত্যার বিষয়টি প্রবাসী বোনদের জানানো হয়েছে। তবে খালেদা বানু চান না মেয়েরা দেশে আসুক। দেশে এলে বাকি দুই মেয়েও খুনিদের টার্গেটে পরিণত হতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাতে তোপখানা রোডের ২৭/১৩/১৪ নম্বর বাড়ির নিচতলায় তিন খুনি ঢুকে নিশাত বানুকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। খুনিরা যাওয়ার সময় বাসা থেকে স্বর্ণালংকার, টাকা ও জমির দলিল নিয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.