'আবার তোরা মানুষ হ' by গৌরব জি পাথাং

আমার লেখার এ শিরোনামটি একটি চলচ্চিত্রের নাম। ক'দিন ধরে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে আমার মনে এ কথাটিই বারবার উচ্চারিত হচ্ছিল। তাই এ শিরোনামটিই লেখার জন্য বেছে নিলাম। শিরোনাম দেখে হয়তো অনেকেই ভাবছেন, আমি মানুষের অমর্যাদা করছি কিংবা বাংলাদেশের মানুষকে মানুষ ভাবছি না। কিন্তু আসলে তা নয়।


আমরা মানুষ হয়েও প্রকৃত মানুষ হয়ে না ওঠা এবং মনুষ্যত্ব বিলুপ্তির কারণে যে অশান্তি ও অমানবীয় আচার-আচরণ প্রকাশিত হচ্ছে তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমার এ লেখা। ছোটকালে সারাংশ ও ভাবসম্প্রসারণ পড়তে গিয়ে শিখেছিলাম, জন্মের পরেই পশু-পাখি সহজেই পশু-পাখি হয়ে ওঠে; কিন্তু মানুষ শত সাধনার পরেই মানুষ হয়ে ওঠে। মানুষ হওয়ার জন্য তাকে আপ্রাণ সাধনা করতে হয়। বর্তমানে আমরা যে পরিবেশ-পরিস্থিতিতে আছি, সেটা মানবীয় পরিবেশ মনে হয় না। নইলে এত মরণ, হত্যা, ধ্বংস, খুন, ধর্ষণ কেন?
ভাবতে অবাক লাগে, যে শিক্ষালয়ে মানুষের মনুষ্যত্ব বিকশিত হওয়ার কথা, যেখানে মানবতার ফুল ফোটার কথা, সেখানেই মানবতা লাঞ্ছিত হচ্ছে। মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী লাঞ্ছিত হচ্ছে এবং শিশুছাত্র নির্যাতিত হচ্ছে। আরোগ্য ও চিকিৎসা পাওয়ার আশায় মানুষ কত চিকিৎসালয়ে গিয়ে হয়রানি ও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। শুধু সেখানেই নয়, বিচারালয়ে গিয়েও লাঞ্ছিত হচ্ছে মানুষ, পুলিশের কাছে গিয়ে সেবার পরিবর্তে নির্যাতন পেতে হচ্ছে নিরীহ মানুষকে। কোথাও নিরাপত্তা নেই আমাদের। বাসে, ট্রেনে, পার্কে, ঘরে, বাইরে সর্বত্রই বিপদ ও মৃত্যুর ফাঁদ। এসব কেন ঘটে, কখন ঘটে? মানুষ যখন মানুষ থাকে না তখনই তো এসব ঘটে। স্বার্থের কারণে কিংবা নিজের পশুবৃত্তিকে তৃপ্ত করার জন্যই এসব ঘটে। গত দু'একদিনের খবরগুলো পড়লেই তা বোঝা যাবে। গত ৩০ মে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, আদালত চত্বরে এক বিচারপ্রার্থী তরুণী এবং তার মাকে পুলিশ প্রকাশ্যে নির্যাতন ও হয়রানি করেছে। এ থেকে বোঝা যায়, ন্যায়বিচারের আশায় অনেক মানুষই এমন মানুষরূপী অমানুষের দ্বারা নির্যাতিত হয়, লাঞ্ছিত হয়। এরপর ১ জুন একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিল টেকনাফের হোয়াইক্যাংয়ের একটি চাকমাপল্লীতে পুলিশ কর্তৃক নির্যাতন ও লাঞ্ছিত হওয়ার খবর। এ ঘটনা অতিক্রান্ত হতে না হতেই ৩ জুন আরেকটি বীভৎস ও অমানবীয় ঘটনা বেরিয়ে এলো। হাতিরপুলের পরীবাগে এক তরুণীকে টুকরো টুকরো করে কমোডে ফ্লাশ করে স্যুয়ারেজে ফেলে দিতে চেয়েছিল। ভাবতেই ঘৃণা হয় এবং অবাক লাগে! কোনো মানুষ কি আরেক মানুষকে এভাবে পশুর মতো কেটে টুকরো টুকরো করতে পারে? কী অমানবীয়! কী নিষ্ঠুরতা! এখন মনে পড়ছে ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাগৈতিহাসিক গল্পের সেই 'ভিখু' চরিত্র। হয়তো তার মতোই তাদের আচরণ। আজ তাই তাদের উদ্দেশে বলতে ইচ্ছা করছে, 'আবার তোরা
মানুষ হ'।

স বনশ্রী প্রকল্প, রামপুরা, ঢাকা
 

No comments

Powered by Blogger.