হীরক রাজার দেশে পুলিশের বেশে by তাওহিদ মিলটন

গবেষক: রাজামশায়, রাজ্যে এমন কী ঘটেছে, আসতে হলো আবার
গত সপ্তায় না এলাম, এর ভেতরেই নতুন কাভার?
নিশ্চয় ঘটেছে ভয়ানক কিছু, তা না হলে রাজা কেন চুপ
কী এমন ঘটেছে রাজ্যে, কেন এমন তাহার রূপ?


রাজা: চুপ করো গবেষক, সাধে কী আর ডেকেছি,
রাজ্যে এসব হচ্ছেটা কী, এই জন্য কি তোমাদের রেখেছি?
গবেষক: রাজামশায়, কী হয়েছে সবকিছু বলুন খুলে
বেশিক্ষণ ধরে রাখলে শেষে না আবার পেটটা যায় ফুলে!
রাজা: রাজ্যে এসব হচ্ছেটা কী, প্রকাশ্যে পুলিশের হাতে প্রহার
গবেষক: ওদের খাদ্যাভ্যাসে চেঞ্জ এসেছে, এখন এসবই তো আহার!
রাজা: রাজ্যের পুলিশ কী শুরু করছে এই সব
দুই দিন পর পর অভিযোগ,
আজ একে মারে তো কাল ওর গায়ে তোলে হাত
কে দিল তাদের এ সুযোগ?
গবেষক: রাজামশায়, হাসালেন, এটা কোনো ঘটনা!
এই রকম কত কিছুই তো রটে, নাকি রটে না?
পুলিশের কাজ পুলিশ করেছে হাত তুলেছে গায়,
এ নিয়ে টেনশন করা কি রাজার শোভা পায়?
রাজা: ছিঃ ছিঃ! আমার রাজ্যের পুলিশ এতই বোকা!
সামান্য কটা ঘটনা দিতে পারে না ধামাচাপা
এত এত ঘটনা চোখের সামনে তুলে রেখে
শেষে কিনা পচা শামুকে কাটলি দু-পা!
গবেষক: এই নিয়ে আপনি মোটেও নেবেন না পেইন,
হীরক রাজ্যে নতুন মন্ত্র—নো পেইন, অনলি গেইন!
রাজা: তা না হয় মানলাম কিন্তু এত কিছু কেন শুনি
রাজ্যে কেন চলছে এই সব নিয়ে কানাকানি!
জলদি করে বলে দাও, স্বয়ং রাজা চায় এর বিচার
আপাতত কাজ চালাতে এক-এ এক-এ মিলিয়ে দাও চার!
গবেষক: পুলিশের বিচার করবে পুলিশ!
পুলিশে পুলিশে জ্ঞাতি ভাই,
কাকের মাংস কাকে খায় না
ইহার উপর সত্য নাই!
রাজা: সত্য-মিথ্যা জানি না, একটা কিছু করো,
ভালো-খারাপ বুঝি না, আপাতত কজন ধরো!
গবেষক: পুলিশ এখন চলে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে,
রাজা: পুলিশকে কন্ট্রোল করার হিম্মত কি কারও নাই রে!
গবেষক: পুলিশ থেকে নিরাপদ দূরে থাকতে
পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী,
রাজা: পুলিশ কি আর মানুষ নেই!
যন্ত্র-মানব নাকি ষড়যন্ত্রী?
গবেষক: রাজামশায়, রাজ্যের যত বড় বড় পুলিশ
শুনেছি সবার নাকি রাজার এলাকায় বাড়ি,
এটা কি রাজার নতুন কোনো শখ
নাকি অন্য এলাকার পুলিশগুলো আনাড়ি!
রাজা: কে বলে এসব কথা, কোত্থেকে বয় এই বাতাস?
ভেবেছ কী, ভাত না খেয়ে হীরকের রাজা খায় শুধু ঘাস?
গবেষক: রাজামশায়, মাফ করবেন, এতটা লাগবে বুঝিনি,
আপনার সাথে থাকি তো, টক-ঝাল বুঝি না, বুঝি শুধু চিনি!
রাজা: হীরকের দেশে পুলিশের বেশে কে হাসে ওই ভয়ানক হাসি?
গবেষক: আর কে মশায়, জামাটা খুললেই তো সেই পুরোনো-বাসি!
আচ্ছা, রাজামশায় কি পড়েছেন বইটা, ফ্রাংকেনস্টাইন নাম তার
রাজা: কী আছে ওতে, হঠাৎ এ বইয়ের কেন অবতার?
গবেষক: সেখানে ছিল এক পাগলা ডাক্তার,
মানুষ মেরে বেশ নামডাক তার।
রাজা: দেখেছ, মানুষ মারলেও নাম-ডাক হয়!
গবেষক: কিন্তু সেই নাম আর কয়দিনই বা রয়!
মৃত জোড়া দিয়ে সে বানিয়েছিল এক প্রকাণ্ড দানব
ভেবেছিল ওটা কথা শুনবে, হায়রে বোকা মানব!
রাজা: কী? কথা শোনেনি, এত বড় স্পর্ধা ওই সামান্য দানবের!
গবেষক: জি, নিজের তৈরি দানবই জান নিয়েছিল মনিবের!
রাজা: এতক্ষণে বুঝলাম, কিছু একটার ইঙ্গিত আছে তোমার কথায়,
ঝটপট বলে ফেলো, দেখি লুকিয়ে রেখেছ কোথায়?
গবেষক: রাজা দেখি আজকাল ইঙ্গিতও বোঝেন
আর কদিন পর তো হয়ে উঠবেন আইনস্টাইন,
শুধু এটা বোঝেন না, এই পোষা পুলিশগুলো
একদিন হয়ে উঠতে পারে ফ্রাংকেনস্টাইন!
রাজা: হীরকের রাজ্যে দানব আসবে?
রাজার চেয়ে বড় দানব আছে নাকি তল্লাটে!
কি, ঠিক কি না?
গবেষক: ঠিক ঠিক
এলে আসুক, আমরাও গুনে দেখব
কত বড় মাইক আছে কার কল্লাতে!
রাজা: শাট আপ, চুপ করো, ব্যাটা গবেষক
ভয় করছে, দরজায় কে যেন করল নক!
গবেষক: ছিঃ ছিঃ! রাজামশায়, ভয় পেলে কি চলবে?
হীরকের রাজা ভয় পেলে লোকে কী বলবে!
রাজা: লোকের কথার খেতা পুড়ি, আছে তো বেশ সুখে
জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে পুরব সবাই মুখে!
গবেষক: রাজা কিন্তু ভুল করছেন, জনগণের কথা ভাবুন
পুলিশের হাতে তুলে দেবেন না সব ক্ষমতা
যার যা প্রাপ্য ততটুকুই দিন তাকে
একবার স্বাদ পেলে কেউ ছাড়তে পারে না এর মমতা!
রাজা: বাদ দাও ওসব ফোরকাস্টিং শক
আমি আজ যাই গবেষক, মাথাটা করছে ঝিমঝিম!
গবেষক: আপনি রেস্ট নেন, পুলিশের বিষয়টা দেখছি,
দেখি ব্যাটারা কত দূর যায়, আর কী কী করে ঘোড়ার ডিম!
তবে পুলিশের এই নির্যাতনের কথা আজ বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত!
ওরা আসলেই আর মানুষ নেই, মস্তিষ্কবিকৃত!

No comments

Powered by Blogger.