চুনাপাথরের খনির সন্ধান মিলল জয়পুরহাটে

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে চুনাপাথরের খনির সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর। চুনাপাথরের এ খনি অঞ্চলটি দৈর্ঘ্যে ১২ কিলোমিটার ও প্রস্থে ৮ কিলোমিটার বিস্তৃত বলে ধারণা করছেন অধিদপ্তরের বিজ্ঞানীরা। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুনিরা আক্তার চৌধুরী চুনাপাথর পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


গত এপ্রিল মাসে পাঁচবিবি সদর উপজেলার আগাইর গ্রামে খনিজ সম্পদ আহরণের লক্ষ্যে খনন শুরু করে ভূতাত্ত্বিক জরিপ দল। গতকাল রবিবার ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর সেখানে চুনাপাথর পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
এ বিষয়ে মুনিরা আক্তার চৌধুরী বলেন, 'ভূপৃষ্ঠ থেকে এক হাজার ৪৯৮ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন শেষে চুনাপাথরের বড় মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।' খনি অঞ্চলটির আয়তন কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'দৈর্ঘ্যে ১২ কিলোমিটার ও প্রস্থে ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আমরা চুনাপাথরের অস্তিত্ব পেয়েছি।' কবে নাগাদ এ খনি থেকে চুনাপাথর উত্তোলন করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এরই মধ্যে একটা ড্রিলিং পয়েন্ট ঠিক করা হয়েছে খনি অঞ্চলের মাঝামাঝি স্থানে। সেখানে ১৮ ফুট পর্যন্ত ড্রিল (খনন) করার পর কিছু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ রয়েছে। খুব শিগগিরই আবার ড্রিলিং শুরু হবে।'
ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পের জন্য পাঁচ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
একটি ভূতাত্ত্বিক জরিপ দল গত ২ এপ্রিল থেকে অনুসন্ধান শুরু করে। পাঁচবিবি উপজেলার আয়মারসুলপুর ইউনিয়নের আগাইর গ্রামে কূপ খননের পর তারা সেখানে চুনাপাথরের সন্ধান পায়। পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হলে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর রবিবার ওই নমুনাটি চুনাপাথর (লাইম স্টোন) বলে নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, গত বছরের শেষের দিকে খনিজ সম্পদের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পাঁচবিবির আগাইর গ্রামে প্রথমে চালানো হয় ভূ-পদার্থিক জরিপ। প্রথম দফার ওই জরিপে সেখানে খনিজ সম্পদের সম্ভাব্যতা পেয়ে গত ১৬ মার্চ থেকে চূড়ান্ত অনুসন্ধানের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়। এর জন্য ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ড্রিলিং প্রকৌশল বিভাগের পাঁচজন সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে ২২ সদস্যের একটি জরিপ দল ওই গ্রামের ৪০ শতাংশ জায়গা নিয়ে শুরু করে কূপ খনন প্রক্রিয়া। সার্বিক প্রস্তুতি শেষে গত ২ এপ্রিল শুরু হয় কূপ খনন। টানা দুই মাসে এক হাজার ৪৯৮ ফুট খননের পর গত ৩১ মে প্রাথমিকভাবে তারা চুনাপাথরের সন্ধান পায়।
জরিপ দলের সহকারী পরিচালক (ভূতত্ত্ব) নাজওয়ানুল হক জানান, তাঁরা খনিজ সম্পদের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে এখানে তিন হাজার ফুট খননের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেন। গত ৩১ মে এক হাজার ৪৯৮ ফুট খননের পর যে পাথর পাওয়া যায় তাতে প্রাথমিকভাবে তাঁদের ধারণা হয় এটি চুনাপাথর। শেষ পর্যন্ত তাঁদের সেই ধারণা সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী জুনের মধ্যে এ খননকাজ শেষ হলে চুনাপাথরের এই খনির বিস্তৃতি নিশ্চিত করা যাবে।
ড্রিলিং প্রকৌশল বিভাগের সহকারী পরিচালক মহিরুল ইসলাম বলেন, 'আমরা চলতি জুন মাস পর্যন্ত খননকাজ চালাব। আশা করা যাচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে অন্তত তিন হাজার ফুট খননকাজ সম্পন্ন হবে। আর তখনই মূল্যবান খনিজ সম্পদ চুনাপাথরের মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এদিকে চুনাপাথর পাওয়ার খবরে পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, 'চুনাপাথর পাওয়া গেছে এমন খবরে এলাকার মানুষের মতো আমিও খুশি। এর আগে জয়পুরহাটে উৎকৃষ্টমানের চুনাপাথর পাওয়া গেলেও আজ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। আগাইরে পাওয়া চুনাপাথর খুব দ্রুত উত্তোলনের মাধ্যমে এলাকা তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করি।'

No comments

Powered by Blogger.