হুইপের ওপর হামলা-দুই ওসি প্রত্যাহার পুলিশ বাদী হয়ে দুই মামলা

জাতীয় সংসদের হুইপ অধ্যক্ষ শেখ আবদুল ওহাব, অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মালেকসহ সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর হামলার সময় কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে দুই থানার ওসিকে প্রত্যাহার করেছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ।


মনিরামপুর থানার ওসি ছয়রুদ্দিন ও অভয়নগর থানার ওসি আহসান হাবীবকে প্রত্যাহার করে খুলনার ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় গতকাল রবিবার পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে কয়েক হাজার মানুষকে। অন্যদিকে গতকালও মনিরামপুরের বিলকপালিয়া এলাকায় শত শত মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। তবে এলাকায় জোরদার করা হয়েছে পুলিশি টহল। জানা যায়, গত শনিবার সকালে মনিরামপুর উপজেলার বিলকপালিয়া এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে জোয়ারাধার (টিআরএম) প্রকল্পের কাজ উদ্বোধনে যান হুইপ অধ্যক্ষ শেখ আবদুল ওহাব। এ সময় জোয়ারাধার নির্মাণের বিরোধী গ্রামবাসী তাঁদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে। এতে হুইপ, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। বিক্ষুব্ধ জনতা পুড়িয়ে দেয় ৯টি যানবাহন। এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
এদিকে হুইপকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে অভয়নগরের নূরবাগে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সমাবেশে ওসি আহসান হাবীবের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। শনিবার রাতে অভয়নগরের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হুইপ আবদুল ওহাব অভিযোগ করে বলেন, 'পুলিশের সম্মতি নিয়েই আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। পুলিশের উপস্থিতিতে একটি মহলের ইন্ধনে কয়েক শ মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ নীরব ভূমিকায় ছিল।' এ ঘটনার জন্য মনিরামপুর, অভয়নগর থানার ওসি ও সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদকে দায়ী করেন হুইপ।
অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও ঘটনার জন্য পুলিশকে দায়ী করেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুই ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল সকালে যশোরের পুলিশ সুপার কামরুল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে শনিবার রাতেই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।'
গতকাল রবিবার অভয়নগর থানায় উপপরিদর্শক ফেরদৌস বাদী হয়ে ১০০০ থেকে ১২০০ লোককে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। একই ঘটনায় মনিরামপুর থানায় আরেকটি মামলা করেন উপপরিদর্শক তৌহিদুল। মামলায় চার-পাঁচ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আজিজুল হক, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার কামরুল আহসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা গত শনিবার হুইপের ওপর হামলার জের ধরে টেকেরঘাট এলাকায় ভাঙচুর ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া কয়েকটি দোকান ও বাড়িঘর ঘুরে দেখেন। এ সময় কর্মকর্তারা এলাকাবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.