খাল খননের জন্য কাটা হলো আড়াই হাজার গাছ! by ইব্রাহিম খলিল

রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী চালতাতলি বিলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত পাগলিছড়া খাল খননের জন্য প্রায় আড়াই হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ইরিগেশন প্রকল্পের আওতায় খাল খননে নিযুক্ত ঠিকাদার স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় জুলাই মাসের শুরু থেকে পর্যায়ক্রমে এসব গাছ কেটে ফেলেন।


এতে কৃষকেরা মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
কৃষকেরা জানান, উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের ঢেমিরছড়া এলাকার চালতাতলি বিলের প্রায় ৩০০ হেক্টর জমি শুষ্ক মৌসুমে সেচের আওতায় আনার লক্ষ্যে বিএডিসি ইরিগেশন প্রকল্পের আওতায় ভরাট হয়ে যাওয়া পাগলি ছড়া খালের দুই কিলোমিটার এলাকা খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর খালটি খননের জন্য প্রায় ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইফুল এন্টারপ্রাইজ খাল খননের দায়িত্ব পায়। গত জুন মাসের মাঝামাঝিতে শ্রমিক দিয়ে খাল খননের কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। কিন্তু জুলাইয়ের শুরু থেকে মাটি কাটার যন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে খালের তলদেশ খনন করা হয়। আর যন্ত্রটি চলাচলের জন্য কেটে ফেলা হয় খালের পাড়ে বড় হওয়া প্রায় আড়াই হাজার গাছ।
বেতাগী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুর কুতুবুল আলম জানান, চালতাতলি বিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পাগলি ছড়া খালটি দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ভরাট হয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে বিলের প্রায় ৩০০ হেক্টর জমির চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায়। এলাকাবাসীর দাবির মুখে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর খালটি খননের জন্য ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়।
তিনি বলেন, কৃষকেরা প্রায় দুই দশক আগে খালের উভয় পাড়ে আকাশমণি, মেহগনি, কড়ই, গামারি, খেজুর, আম, জাম, কাঁঠালসহ নানা প্রজাতির বনজ ও ফলদ চারা রোপণ করেন। যেগুলোর বয়স বর্তমানে ১৫-১৮ বছরেরও বেশি। আর এসব গাছ খাল খননের নামে কেটে ফেলেছেন ঠিকাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে কৃষকেরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এতে ধ্বংস হয় এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ।
চালতাতলি বিলের কৃষক আবদুর রহিম জানান, খালের দক্ষিণ তীরে তাঁর ২৭টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। যেগুলোর বাজার মূল্য ৮০ হাজার টাকারও বেশি। এ ছাড়া, খালের উভয় পাড়ের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা থেকে প্রায় আড়াই হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। যা বিক্রি করে প্রায় আট লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ঠিকাদার ও সহযোগীরা। এ ব্যাপারে ১৯ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সরেজমিনে দেখা যায়, খালের পাড়ে মাটি দিয়ে কাটা গাছের গোড়া চাপা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন এসব গাছের কিছু গোড়ালি রান্নার জন্য মাটি থেকে তুলে নিচ্ছেন। আর বিক্রি করে দেওয়া গাছ ঢেমিরছড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, রামগতি বাজার ও বিলের প্রায় ১১টি আলাদা স্থানে স্তূপ করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ইব্রাহিম নামে এক কাঠ ব্যবসায়ী ওই সময় বলেন, খালের পাড় থেকে কেটে ফেলা গাছ তিনি ঠিকাদার ও স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে কিনেছেন।
ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘খালের পাড়ের জায়গা সরকারের। সেখানে কৃষকেরা গাছ রোপণ করেছেন। কিন্তু গাছগুলোর জন্য খাল খনন করা সম্ভব হচ্ছিল না, তাই কেটে ফেলা হয়েছে। আর গাছ বিক্রির টাকা কৃষকদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
বিএডিসি চট্টগ্রাম ইরিগেশন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. ইউনুছ প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাল খননের জন্য যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেগুলো চারাগাছ বলে জানান ঠিকাদার। গাছগুলো যে মূল্যবান তা আমাদের জানা ছিল না। এ ব্যাপারে ঠিকাদারকে কারণ জানাতে বলা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আজম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএডিসির এ কাজের সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন সম্পৃক্ত নয়। তবে খাল খননের জন্য এতগুলো গাছ কেটে পরিবেশদূষণের অধিকার তো কারও নেই।’ খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.