ভালো, তবে ফাঁকফোকর পূরণে নিষ্ঠা দরকার-পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ২০১০

সংসদে উত্থাপনের পর এখন পাস হওয়ার অপেক্ষায় সংশোধিত পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ২০১০। পরিহাস এই, ১৯৯৫ সালের যে আইনটি সংশোধন করা হলো, সেটি যে কত অকার্যকর ও দুর্বল, নতুন আইন এসে সেই ফাঁকগুলো তুলে ধরল। গত ১৪ জুলাই জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এই আইনটি উত্থাপিত হয় এবং আগামী অধিবেশনে তা পাস হওয়ার কথা।


নতুন আইনে ক্ষতিগ্রস্ত যে কেউ দূষণকারীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে এবং জেলায় জেলায় পরিবেশ আদালত স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, জলাধার ভরাট, পাহাড় কাটা, ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য, জাহাজ ভাঙা বা কাটার ফলে সৃষ্ট দূষণ এবং পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার নিয়ম ভঙ্গ করাকে সরাসরি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওপরে বলা প্রতিটি কাজই পরিবেশদূষণের প্রধান কারণ এবং বছরের পর বছর তা নির্বিঘ্নে করা হচ্ছে। ১৯৯৫ সালের আইনে এসব বিষয়ে স্পষ্ট বিধান না থাকার পরও কীভাবে এ রকম আইন সংশোধনে এত দেরি হলো, তা সত্যিই সমালোচনার বিষয়। কিন্তু দেরিতে হলেও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর চাপে যে তা সংশোধিত হচ্ছে, এটা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
আগের আইনটি যতটাই দুর্বল, ততটাই অকার্যকর ছিল। সেই আইনে পরিবেশদূষণের বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন সাপেক্ষে তাদের মাধ্যমেই করতে হতো। অন্যদিকে পরিবেশদূষণের প্রধান কারণগুলোকে অপরাধ হিসেবে গণ্যই করা হতো না। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া তেমনটা জোরদার করার প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন ছিল না। এখন প্রতিটি জেলায় পরিবেশ আদালত স্থাপনের প্রয়োজনের কথা আইনে বর্ণিত হয়েছে।
কিন্তু বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো হয়ে রয়েছে সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বর্জ্য পরিশোধনযন্ত্র (ইটিপি) স্থাপনে গড়িমসির বিষয়টি। উচ্চ আদালত চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যেই ইটিপি স্থাপনকে বাধ্যতামূলক করেছিলেন। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে এর জন্য সংশ্লিষ্টদের আরও এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ জেনেশুনে আরও এক বছরের জন্য পরিবেশদূষণ করতে দেওয়া। আদালতের সঙ্গে আইনের এই বিসংগতি কার স্বার্থে করা হয়েছে, সেই প্রশ্নটি তাই ওঠা দরকার।
সাধারণভাবে প্রস্তাবিত সংশোধনীকে সাধুবাদ জানালেও, এর ফাঁকফোকর পূরণ এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না। সংসদসহ সংশ্লিষ্ট সবার এ ব্যাপারে আপসহীন হওয়াই কাম্য।

No comments

Powered by Blogger.