শেয়ারবাজার-পরিচালকদের সময় বৃদ্ধির পক্ষে সবাই by তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

একসময় সময় না বাড়ানোর কথা বললেও এখন পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে পরিচালকদের ছাড় দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলেছেন, ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ পরিচালকদের এখন শেয়ার কেনার সময় দেওয়া যেতে পারে।


গত তিন কার্যদিবসে ডিএসইর সূচক বেড়েছে ২২৪ দশমিক ১৯ পয়েন্ট। এর পেছনেও সংশ্লিষ্ট একাধিক মহলের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে গত ৩১ মে পর্যন্ত ন্যূনতম ২ শতাংশের নিচে ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারী কম্পানির পরিচালকদের হিসাব ডিএসইর হাতে পৌঁছেছে। ৩১ মের মধ্যে ২০৯টি কম্পানি তালিকা জমা দেয়। দুই স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দেওয়া ২০৯ কম্পানির শেয়ার ধারণসংক্রান্ত তথ্য মতে, ৩২ কম্পানির পরিচালকদের হাতে থাকা সম্মিলিতভাবে শেয়ার সংখ্যা ৩০ শতাংশের নিচে রয়েছে।
গতকাল রাতে ডিএসইর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আহমেদ রশীদ জানান, ৩১ মের মধ্যে ২০৯টি কম্পানি তালিকা জমা দিয়েছে। বাকি ২৬টি কম্পানিকে আবার তিন দিনের সময় দিয়ে সোমবার চিঠি দেওয়া হবে। দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে গত ২৩ মে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশের এবং এককভাবে ২ শতাংশের নিচে শেয়ারধারী পরিচালকদের তালিকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয় কম্পানি সচিব বরাবর।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, '২ শতাংশের নিচে শেয়ারধারী পরিচালকরা এসইসিতে আবেদন করেছেন বলে শুনেছি। তবে বিশদ জানি না।'
ডিএসইর সভাপতি হিসেবে এবার দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন গত ১৫ মার্চ রকিবুর রহমান বলেছিলেন, পরিচালকদের জন্য কোনোভাবেই সময় বাড়ানো হবে না। এ কথা তিনি ২১ মে পর্যন্ত বিভিন্ন বৈঠকে ও সংবাদ মাধ্যমেও বলে এসেছেন। একাধিকবার এসইসির চেয়ারম্যানের কাছে অনুরোধও করে এসেছেন। তবে রকিবুর রহমান এখন উদার অবস্থান নিয়েছেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, "নির্ধারিত সময়ে ন্যূনতম শেয়ার ধারণে ব্যর্থ উদ্যোক্তা পরিচালকরা শেয়ার কিনতে 'সুনির্দিষ্ট' প্রস্তাব দিলে এসইসির তা বিবেচনা করা উচিত। তবে ঢালাওভাবে সময় না বাড়িয়ে যেসব পরিচালক সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে শেয়ার কিনতে চান তাঁদের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।"
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতিও একইভাবে ২১ মের পর কালের কণ্ঠকে বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কম্পানির আবেদনের ভিত্তিতে এসইসি পরিচালকদের সুযোগ দিতে পারে। তবে সেটা কোনোভাবেই ১৫ দিনের বেশি নয়। কী পরিমাণ শেয়ার ও কত টাকার শেয়ার কিনবে সেটাও উল্লেখ থাকতে হবে ওই আবেদনে। যদিও এর আগে একাধিক বৈঠকে ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, পরিচালকদের কোনো রকম সময় দেওয়া ঠিক হবে না।
নতুন সুর বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদেরও। সংগঠনটির সভাপতি মিজান-উর-রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, "পরিচালকরা যদি শেয়ার না কেনেন তবে এই বাজার থেকে কারা শেয়ার কিনবেন? তা ছাড়া তাঁরা হাইকোর্টে যে রিট করেন তার রায়ও দেওয়া হয়েছে মেয়াদ শেষ হওয়ার শেষ দিনে। সুতরাং তাঁরা এখন বলতে পারেন 'আমরা আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়েছিলাম। আদালত যদি আরো দুদিন আগে রিট খারিজ করতেন তবে তো শেয়ার কেনার সুযোগ পেতাম।' এখন যদি তাঁরা আবার কোর্টে রিট করেন তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য সেটা হবে আরো খারাপ। তাই আমরা মনে করি, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এবং বাজার স্থিতিশীল করতে যেসব পরিচালক শেয়ার কেনার জন্য এসইসির কাছে আবেদন করবেন, তাঁদের আবার সুযোগ দেওয়া উচিত।" সংগঠনটি ২১ মের আগে মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন থেকে বারবার সময় না বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিল।
তিন কম্পানির ১৪ পরিচালকের পক্ষ থেকে করা রিটের শুনানি শেষে ২১ মে হাইকোর্ট এসইসির প্রজ্ঞাপন বৈধ বলে রায় ঘোষণা করলে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে আনন্দ মিছিল বের করেন বিনিয়োগকারীরা। রায়ের প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারে। কিন্তু রায়ের পরের দিন পর্যন্ত হাইকোর্টে এসইসির ২ সিসি ধারা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আরো পাঁচটি রিট হয়। পরের দিন থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার ধারণে ব্যর্থ পরিচালকরা হাতে থাকা বাকি শেয়ার বিক্রি শুরু করেন। ফলে দর পতন ঘটতে থাকে শেয়ারবাজারে। ২১ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত ডিএসইর সূচক ৩৯১ পয়েন্ট কমে ৪৬৩১.১৭ পয়েন্টে নামে। বাজারের এই নাজুক পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁরা আবার পরিচালকদের নতুন করে সময় বৃদ্ধির সুযোগ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিতে থাকেন। ডিএসই ও সিএসইর নেতারাও পরোক্ষভাবে বলা শুরু করেন পরিচালকদের সময় দেওয়া উচিত।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কম্পানির যেসব পরিচালক ২১ মের মধ্যে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁরা তাঁদের পদ হারাবেন। তাঁদের জায়গায় যেসব বিনিয়োগকারী কম্পানির পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভা পর্যন্ত ৫ শতাংশ শেয়ার ধারণে সক্ষম হবেন তাঁরা পরিচালনা পর্ষদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
৩০ শতাংশের নিচে : যে ৩২ কম্পানির হাতে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশের নিচে শেয়ার রয়েছে সেগুলো হচ্ছে এবি ব্যাংক ১৩.৯০ শতাংশ, রেনেটা ০.১৪, ন্যাশনাল টি ১.০১, ইনটেক ২.৫৬, ফুয়াং ফুড ৩.৩৬, ফাইন ফুড ৯.৩৭, ইউনাইটেড এয়ার ১২.২৪, এপেক্স এডেলকি ফুটওয়ার ১২.৫৯, অগ্নি সিস্টেমস্ ১০.৭৫, উত্তরা ব্যাংক ১৪.২৬, একটিভ ফাইন ক্যামিক্যাল ১৬.০৩, পূবালী ব্যাংক ১৬.৮৭, বেক্সিমকো ফার্মা ১৭.৯৮, মেঘনা লাইফ ইনস্যুরেন্স ১৮.২৫, বিডি থাই ১৮.৬৬, ফুয়াং সিরামিক ১৯.২৩, ইনফরমেশন সার্ভিসেস ২০.০৯, বিডিকম ২১.২৯, কর্নফুলী ইনস্যুরেন্স ২২.০৮, সালভো কেমিক্যাল ২২.৬৯, কনফিডেন্স সিমেন্ট ২৩.৪৭, বিজিআইসি ২৪.৩২, বেক্সিমকো ২৪.৪১, এসআইবিএল ২৫.৮৫, ম্যাক্সন স্পিনিং ২৬.২৩, সিএমসি কামাল ২৬.৭৫, বরকত উল্লাহ ইলেকট্রো ডায়নামিক ২৬.৮১, সিনো বাংলা ২৬.৯০, মেট্রো স্পিনিং ২৭.২১, আলহাজ টেঙ্টাইল ২৭.৩১, রংপুর ডেইরি ফুড ২৭.৯২ ও ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স ২৮.২৭ শতাংশ।

No comments

Powered by Blogger.