অভিমত ভিন্নমত

শ্রমিকের আইন ভঙ্গ, সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ মালিকের হয়ে সরকার পোশাকশ্রমিকদের জন্য যে মজুরিসীমা বেঁধে দিয়েছে, তাকে পর্বতের মূষিক প্রসব বললে ভুল বলা হয় কি? তাঁদের পর্বতসমান দুঃখ-দুর্দশা, বছরের পর বছরজুড়ে তাঁদের আন্দোলন, প্রধানমন্ত্রীর বিরাট প্রতিশ্রুতি এবং শিল্পমালিকদের অঢেল বিত্তবিলাসের সঙ্গে তুলনায় এই মজুরি অতি সামান্য।


এই সামান্য মজুরিটুকুও আবার এখন দেওয়া হবে না, আগামী দুই ঈদের আগেও মিলবে না, মিলবে নভেম্বরে। কতটা মিলবে আর কতগুলো কারখানায় তা দেওয়া হবে তার কোনো নিশ্চয়তাও শ্রমমন্ত্রীর ঘোষণা থেকে তাঁরা পাননি। শ্রমিকদের হতাশ হওয়া তাই যুক্তিসংগত। হতাশা যৌক্তিক, দাবিও অন্যায় নয়; কিন্তু অগ্রহণযোগ্য হলো তাঁদের প্রতিবাদের ধরন। আন্দোলনরত শ্রমিকদের যে ক্ষুদ্র অংশ ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা হয়তো অনেকেরই সমর্থন পাবেন না। কিন্তু প্রথমেই মেনে নিতে হবে, সরকার-ঘোষিত ওই মজুরি না মানার অধিকার শ্রমিকের আছে। কারণ পেটটা তাঁদের, ক্ষুধাটা তাঁদের, বঞ্চনার সার্বক্ষণিক অনুভূতি তাঁদেরই হয়। তাই তাঁদের মনে হতেই পারে, সরকার তাঁদের আশার ছলনায় ভুলিয়ে শেষ মুহূর্তে মালিকপক্ষের সুবিধা অনুযায়ী মজুরি নির্ধারণ করেছে। এবং দেখা যাচ্ছে, এই মজুরি দেওয়া হবে কি হবে না, সেটা পরের কথা; এই মুহূর্তে মালিকপক্ষ খুশি। কেননা, শ্রমিক আন্দোলনের ব্যাপকতা, জনমতের অভূতপূর্ব সমর্থন এবং সরকারি হম্বিতম্বি মিলিয়ে মনে হচ্ছিল, পোশাকশিল্পের অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা বোধহয় এই প্রথম তাঁদের শ্রমের ন্যায্য দাম পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই যে লোকগানে বলে, ‘সোনা দিবার চায়ারে বন্ধু, রূপাও নহে যে দিলি। আরে পিতল-কাঞ্চন দিয়া অবলা ভুলালি রে’। কিছু নেতাকে গ্রেপ্তার করে, বাকিদের ভয় দেখিয়ে এবং অন্যদের ব্যক্তিগত সুবিধার টোপ গিলিয়ে পোশাকশ্রমিকদের সত্যিই ‘অবলা’ করে দিয়ে তাঁদের দাবিকে নীরব করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। নইলে দুই দিন আগেই যাঁরা তিন হাজার টাকা মজুরি কোনোভাবেই মানবেন না বলেন, পরের দিনই কীভাবে তাঁরা ‘আত্মসমর্পণ’ করেন? সে কারণেই প্রশ্ন ওঠে, তিন পক্ষের সমঝোতায় আসলেই কি তিনটি পক্ষ ছিল? নাকি ছিল সরকার ও মালিকের যৌথ পক্ষ!
তাই ৪২টি সংগঠনের নেতারা মালিকপক্ষের ভবন বিজিএমইএতে বসে চাপের মুখে যখন সমঝোতা হয়েছে বলছেন, বলছেন শ্রমিকদের শান্ত হতে, তখনো সাভার ও ফতুল্লায় হাজার হাজার শ্রমিক মজুরিকাঠামোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন। এবং পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের দমনের পথ বেছে নিয়েছে। এ রকম বানানো সমঝোতা কি টিকবে? আজ যেকোনোভাবে আন্দোলন দমন করা গেলেও বিক্ষোভের আগুন যে ধিকিধিকি জ্বলতে থাকবে না, ঈদের আগে যখন আবারও বেতন-ভাতা-বোনাস-ইফতার-সেহিরর ভাতা ইত্যাদি নিয়ে সমস্যা দেখা দেবে, তখন কি আবারও বিক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবে না?
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে শ্রমিকেরা অবশ্যই আইন ‘ভঙ্গ’ করেছেন। কিন্তু আর কোনো পথে তাঁরা কি জানাতে পারতেন যে তাঁদের জীবন-যাপন অসম্ভব হয়ে উঠছে? কিন্তু পেট চালানোর মতো মজুরি চাওয়া তো মতপ্রকাশ বা রাজনৈতিক সভা করার মতো ঐচ্ছিক ব্যাপার নয় যে, চাইলেই স্থগিত রাখা যায়। অভাব তো স্থগিত থাকছে না।
যাঁদের নিয়মতান্ত্রিক সংগঠন করতে দেওয়া হয় না, যাঁদের সঙ্গে চাকর-বাকরের মতো ব্যবহার করা হয়, যাঁদের হয়ে কথা বলার কেউ নেই, যাঁরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের আগুনে পুড়তে পুড়তে তাঁদের মালিকদের দামি গাড়ি-বাড়ির বিলাস দেখে মনে ঘৃণা জন্মে, সেই ঘৃণা কখনো না কখনো প্রকাশিত হবেই।
আনোয়ার হোসেন
পুরানা পল্টন, ঢাকা।

চিনি নয়, ডাল-ভাত
বর্তমান সরকার নির্বাচনের আগে জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা ক্ষমতায় যেতে পারলে দ্রব্যমূল্য মানুষের সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসবে। তারা ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু দেড় বছর ধরে শুধু চিনির দাম নিয়ন্ত্রণ ছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এ সরকারের তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
মানুষের সাধারণ খাদ্য তালিকায় থাকে ভাত, শাকসবজি, ডাল আর মাছ-মাংস। তিন বেলা খাবারের মধ্যে ঠিক কোন জায়গাটিতে চিনি দরকার তা খুঁজে পাই না। শিশুখাদ্যের সঙ্গে চিনি লাগে বটে, কিন্তু অধিকাংশ শিশু তিন বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি ভাত খায় (সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী গরিব)। তাহলে কেন চিনি নিয়ে বাড়াবাড়ি? সকাল-বিকেল চা কিংবা মিষ্টান্ন তৈরি ছাড়া চিনি আমাদের কোন কাজে লাগে?
যে বাঙালি মাছে-ভাতে বাঙালি, তার মাছ তো দূরে থাক, ডাল-ভাতই জুটছে না তিন বেলা। মোটা চালের কেজি ৩০ টাকা আর ডালের কেজি ১০০ টাকার ওপরে। অন্যান্য জিনিসের বাজারদর আর না-ই বা তুলে ধরলাম। কয়েক দিন ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী আর শিল্পমন্ত্রী চিনির দাম কত হবে তা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। রোজার মাসে একটু শরবত বা জিলাপি খাওয়া কি এতই জরুরি যে অন্য সবকিছুর দাম নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই?
শ্রমিকেরা বেতন বৃদ্ধির জন্য সংগ্রাম করছেন। কারণ, তাঁরা আর পেরে উঠছেন না দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে প্রতিরোধ তো করতেই হবে। সরকারের প্রতি আহ্বান, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করুন; তা না হলে দরিদ্র পোশাক-শ্রমিকদের সঙ্গে যদি মধ্যবিত্তরাও বিক্ষোভ শুরু করে তাহলে কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
সাবিনা পারভীন, ইন্দিরা রোড। sabink99@yahoo.com

চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবিতে গত ২৬ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। তাঁদের এই বিক্ষোভ চট্টগ্রাম নগরে ছড়িয়ে দিয়ে আন্দোলনকারীরা যানবাহন ভাঙচুর করেন এবং পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরদিন সোমবার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়; আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। দাবি আদায়ের পথ হিসেবে সহিংসতা-ভাঙচুর অত্যন্ত নিন্দনীয়। নব্বইয়ের দশকের পর থেকে বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন-ফি বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে একের পর এক একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলাও উদ্বেগজনক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ফি বৃদ্ধির যৌক্তিকতা কী? বর্ধিত ফি থেকে প্রাপ্ত অর্থ কি বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলসংকটের সমাধান করবে? ফি বাড়ানোর অর্থ হলো, যেসব শিক্ষার্থীর পারিবারিক অবস্থা সচ্ছল নয়, কিংবা যাঁরা খণ্ডকালীন কাজ করে উচ্চশিক্ষার আনুষঙ্গিক খরচ মেটান, তাঁদের ওপর আরও বেশি বোঝা চাপানো এবং শেষ পর্যন্ত তাঁদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ সংকোচন। তাই ফি বাড়ানোর এই চেষ্টা বরাবরই বড় প্রতিবাদের মুখে পড়েছে।
বিগত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেতন ও ফি বাড়ানোর ক্ষেত্রে যেমন তোড়জোড় দেখা গেছে, শিক্ষার মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে তেমন কোনো উদ্যোগ কি দেখা গেছে? না। বরং উচ্চশিক্ষায় মানের দিক থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক নানা রেটিংয়ে এটা স্পষ্ট।
একটি শক্তিশালী, আধুনিক অর্থনীতি এবং একটি শক্তিশালী সমাজ গঠনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অপরিহার্য। আমাদের একুশ শতকের অর্থনীতির জন্য বিপুল জনগোষ্ঠীকে সুদক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ অবারিত রাখা প্রয়োজন। তা ছাড়া প্রযুক্তি, শিক্ষা ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে উদ্দীপ্ত করে। উচ্চশিক্ষায় বিনিয়োগের প্রভাব অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতার ওপর পড়ে; তাই সমাজের সর্বস্তর থেকেই উচ্চশিক্ষা পাওয়ার সুযোগ থাকা সামগ্রিকভাবে মঙ্গলজনক। ভারত ও চীন উচ্চশিক্ষার সুযোগ অবারিত করে সফলতা পেয়েছে। আমাদেরও এ থেকে শিক্ষা নিয়ে উচ্চশিক্ষা খাতে প্রয়োজনমাফিক সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত।
দেশের অর্থনীতি এবং যুবসমাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে যাঁরা ভাবেন, তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সম্মিলিতভাবে চিন্তা করা ও নীতি প্রণয়ন। সবার জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ অবারিত রাখতে হলে বেতন ও ফি হতে হবে ন্যায়সংগত। কিছুদিন পর পর নানাভাবে বেতন ও ফি বাড়ানো এবং তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মোটেও অভিপ্রেত নয়।
মাহবুব আলম, শ্যামলী, ঢাকা।

আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি
এ মুহূর্তে সর্বত্র আলোচনার বিষয়, সংবিধান সংশোধন এবং বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফেরা। কিন্তু বাহাত্তরের যে সংবিধান নিয়ে এত আলোচনা, সেটা কতখানি ত্রুটিমুক্ত ছিল, সে প্রশ্নও আজ জরুরি হয়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী বাহাত্তরের সংবিধানকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মূল দলিল হিসেবে গণ্য করা হলেও তাতে এ দেশের আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। পরবর্তী ৩৮ বছরে এই সংবিধান বেশ কয়েক দফা সংশোধন করা হলেও তাতে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়নি। সংবিধানের ২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না।’ এতে বাংলাদেশের আদিবাসীরা তাদের যথাযথ মর্যাদা পায়নি।
প্রতিবাদ যে হয়নি, তা নয়। ’৭২-এর সাংবিধানিক গণপরিষদের একমাত্র আদিবাসী সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা গণপরিষদের অধিবেশনেই এই অসংগতির প্রতিবাদ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কথা সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করার দাবি জানান। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রবল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তার সেই বক্তব্য সেদিন হারিয়ে গিয়েছিল।
এ কথা আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য যে বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়াও অনেক জাতির মানুষ বসবাস করে। তাদের সবারই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা, এমনকি প্রথাগত স্থানীয় সরকার কাঠামো। এসব জাতি-সমপ্রদায়ভুক্ত মানুষের ভিন্ন ভিন্ন কৃষ্টি, আচার ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকেই কেবল সমৃদ্ধ করেনি; বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বহুমাত্রিক গণতান্ত্রিক বিকাশেও তা হয়ে উঠেছে অপরিহার্য অংশ।
আদিবাসীদের শুধু সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিলেই চলবে না, প্রতিটি আদিবাসী জাতিসত্তার ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকেও স্বীকৃতি দিতে হবে। আদিবাসীদের প্রধান সমস্যা হলো ভূমি। তাদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের কথা সংবিধানে লিপিবদ্ধ না থাকলে সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিষয়টি অর্থপূর্ণ হবে না।
সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে তিন পার্বত্য জেলা প্রশাসন বরাবর প্রেরিত এক পত্রে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি বাসিন্দাদের যেন ‘উপজাতি’ হিসেবে গণ্য করা হয়, ‘আদিবাসী’ নয়। অন্যদিকে সংসদে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বিল’ (২০১০) পাস হয়েছে। এটি আইন আকারে গেজেটভুক্ত হওয়ার পর দেখা গেল, মাত্র ২৭টি জাতি-গোষ্ঠীকে তাতে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এগুলো আদিবাসীদের সম্পর্কে রাষ্ট্র, প্রশাসন তথা ক্ষমতাকাঠামোর ঔপনিবেশিক মানসিকতাই প্রকাশ করে। এমনকি এটা সংবিধানে বর্তমানে স্বীকৃত অধিকারেরও লঙ্ঘন।
৯ আগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবস। সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশের আদিবাসীরাও দেড় দশক ধরে এ দিবসটি পালন করে আসছে। প্রতিবছর তারা সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিও তুলছে। এ বছর এই দাবি আরও জোরালো হবে বলেই মনে হয়। শুধু বক্তৃতা আর বিবৃতিতে নয়, আমাদের আইন প্রণেতা, সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত বিশেষ সংসদীয় কমিটির সদস্য আর ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার—সবাই আদিবাসীদের এ দাবিটি এবার পূরণে আন্তরিক হবেন, বিশ্ব আদিবাসী দিবসের প্রাক্কালে এটাই প্রত্যাশা।
তারেক আহমেদ
মিরপুর, ঢাকা।

অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করুন
মুনাফাখোর, মজুতদার, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাগরিকজীবন অতিষ্ঠ। একশ্রেণীর অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর সীমাহীন অর্থলিপ্সার শিকার। তারা ইচ্ছামতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ায়। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়েছে। দাম বাড়ানোর সময় তারা আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে ওই দ্রব্যের মূল্য কমে গেলে তারা আর সে দ্রব্যের দাম কমায় না।
দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণহীন বৃদ্ধির পরিণতিতে রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে চুল কাটার সেলুন পর্যন্ত সবাই নিজেদের ইচ্ছামতো মূল্য বাড়ায়। যে চিকিৎসকের ভিজিট দুই মাস আগে ছিল ৫০০ টাকা, তাঁর ভিজিট হয়ে গেল ৮০০ টাকা। কিছু বলার কেউ নেই, দেখার কেউ নেই। নগরের মধ্যে চলাচলকারী বাসের ভাড়া দুই টাকা থেকে রাতারাতি হয়ে গেল তিন টাকা। এমনকি ফটোস্ট্যাট মেশিনওয়ালারাও বাড়িয়ে দিল দাম। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির নিয়ন্ত্রণহীন প্রবণতা দেখা যায়; কিন্তু কোনো প্রতিকারের উদ্যোগ নেওয়া হয় না।
রোজার মাস এগিয়ে আসছে; রোজার শেষে আসবে ঈদুল ফিতর। ইতিমধ্যে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীচক্র প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাকের ডগায় চিনির কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ চক্রটি আবার নতুন করে চালের সংকটের পাঁয়তারা করছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীচক্রের সঙ্গে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারীর সংস্থার কিছু লোকের গোপন যোগসাজশ রয়েছে। চিনি, সয়াবিন তেল ও চাল কেলেংকারির নায়কদের নিয়ে প্রশাসন মনিটরিং কমিটি গঠন করে। তারা সেখানে নীতিনির্ধারকদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ভুল পথে পরিচালিত করে থাকে।
একদিকে পণ্যদ্রব্যের মূল্য বেশি নিয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা চলছে, অন্যদিকে দুধ ও মাছে ফরমালিন, ফলমূলে কার্বাইড ইত্যাদি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার করে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে চলেছে। শাকসবজি তাজা রাখার জন্যও ব্যবহূত হচ্ছে নানা রকমের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। এ ছাড়া আছে ভেজালের বাড়াবাড়ি। নষ্ট, পচা খাদ্যশস্যের সঙ্গে ভালো খাদ্যশস্য (চাল, ডাল ইত্যাদি) বিক্রি করা হয়; বিভিন্ন গুঁড়া মসলায় ইটের গুঁড়ো, সরিষার তেলে সাইট্রিক অ্যাসিড মেশানো হয়। শিঙারা, চামুচা, পুরি ইত্যাদি খাবার তৈরিতে ভোজ্যতেলের সঙ্গে মেশানো হয় শিল্পকারখানায় ব্যবহার্য তেল (পোড়া মবিল, স্পিন্ডাল ওয়েল ইত্যাদি)। ভেজাল দুধ তৈরির বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ গুঁড়ো দুধ বিদেশ থেকে আমদানি করে দেশের বাজারে বিক্রি করা হয়, মাঝেমধ্যে তা ধরা পড়ে সংবাদ শিরোনাম হয়। গুঁড়ো দুধে মেলামিন নামের ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো নিয়ে একবার বেশ হইচই হলো। তারপর সব চুপচাপ। এখন আমাদের শিশুরা যেসব গুঁড়ো দুধ খেয়ে বড় হচ্ছে, সেগুলো নিরাপদ কি না তা-ই বা কে জানে। বাজারে হরেক রকমের রঙিন পানীয়, ফ্রুটজুস এবং অন্যান্য খাবারে ক্ষতিকর রং ও প্রিজারভেটিভ মেশানো হয়। এগুলো সবই মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। শিশুদের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর। কিডনি ও লিভারের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে মূলত এসব কারণেই।
অসাধু ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশকে ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যের বাজার ও পরীক্ষাগারে পরিণত করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। নিম্নমধ্যবিত্তরা যা আয় করছেন তার সিংহভাগই ওষুধ ও চিকিৎসার খরচ জোগাতে চলে যাচ্ছে।
তাই সিন্ডিকেট করে দ্রব্যপণ্যের দাম বাড়ানো, খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশানো, মেয়াদোত্তীর্ণ শিশুখাদ্য আমদানি ও বিক্রি ইত্যাদি অপকর্মের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। এ মুহূর্তে সরকারের চ্যালেঞ্জ আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা।
এস এম নাজের হোসাইন
সভাপতি, কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটি।
cab.chittagong@yahoo.com

সম্পাদকীয়’র প্রতিবাদ
১৪ জুলাই প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী বলবেন’ শিরোনামের সম্পাদকীয়টি দুই সপ্তাহ বিদেশে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের নিমিত্তে অবস্থান করায় যথাসময়ে আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। যেভাবে বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছে, যথার্থ নয়। সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সব সময় আমি সোচ্চার ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছি এবং ভবিষ্যতেও করব। সে লক্ষ্যে কোনো অন্যায়কারী ও দুষ্কৃতকারীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া আমার নীতিবহির্ভূত।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানা সীমান্তে বেশ কিছু দিন ধরেই ওই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় কালোবাজারি ও অবৈধ কর্মকাণ্ড চলছে। আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁকে অনৈতিক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে এবং তা বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্ণপাত করেননি। সম্প্রতি একটি বড় ধরনের অপরাধের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়। তাঁর কৃতকর্মের কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁকে বদলি করে। একই সঙ্গে তাঁর কৃত কর্মকাণ্ড বিভাগীয় তদন্তের জন্য অুনরোধ জানানো হয়।
সমগ্র বিষয় সঠিকভাবে অনুসন্ধানপূর্বক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনা ও সম্পাদকীয় লেখা গণমাধ্যমের অপরিহার্য কর্তব্য। যেভাবে এ ঘটনার সঙ্গে আমাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, আমি এর প্রতিবাদ জানাই।
আবদুল মতিন খসরু, সাংসদ; বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক।

পিন্টু-মিন্টুরা খেলবে কোথায়?
কিশোর বয়সী দুই ভাই পিন্টু ও মিন্টু ধানমন্ডির উল্টো দিকে স্টাফ কোয়ার্টারে থাকে। পরিবারটিকে আমি চিনি। ওদের মায়ের সহাস্য অনুযোগ হলো, স্কুল ছুটি হলেই দুই ভাই বাড়িতে কোনোরকমে বইপত্র রেখেই ছোটে রাস্তার ওপাশের ধানমন্ডির মাঠটাতে। ক্রিকেটের মৌসুমে ক্রিকেট খেলে আর ফুটবলের মৌসুমে ফুটবল। কিন্তু পিন্টু-মিন্টুর জন্য দুঃসংবাদ যে ধানমন্ডির মাঠটা পাঁচিলবন্দী হতে চলেছে। মাঠটায় এখন খেলবে কেবল ধানমন্ডি ক্লাবের পেশাদার খেলোয়াড়েরা।
এ দেশে কিছু মানুষ আছে, খোলা জায়গা দেখলেই তারা একটা কংক্রিটের স্থাপনা গড়তে চায়। এ ক্ষেত্রে এবার ব্যবহার করা হচ্ছে ‘লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল’-এর নাম। অতি-উৎসাহী মোসাহেবদের কারণে অতীতে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সুযোগ মোসাহেবদের দেওয়া ঠিক নয়।
পাঁচিল দিয়ে ঘিরতে হলে প্রথমেই কাটা পড়বে বেশ কিছু গাছ। আর আজ পাঁচিল হয়েছে তো কাল অফিসঘর হবে, পরশু তার নিচে দোকান বসবে। ধানমন্ডি ক্লাবের কর্তাব্যক্তিরা বলেছেন যে দোকানপাট হবে না, কিন্তু এসব ব্যবসায়ী কর্মকর্তাদের মুখের কথার কি কোনো দাম আছে? তা ছাড়া আজ এক কমিটি, কিছুদিন পর আরেক কমিটি এসে সিদ্ধান্ত পাল্টে দিতে পারে। একসময়ের শান্ত-সবুজ ধানমন্ডি আবাসিক এলাকাটা কীভাবে ক্রমেই দোকান ও ব্যবসার কেন্দ্র হয়ে উঠে আজ এক কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। নিঃশ্বাস ফেলার একটা জায়গা ছিল ধানমন্ডির ওই সবুজ মাঠটা। হারাধনের শেষ ছেলের মতো সেটাও এখন হারানোর পথে।
আমার বাসার পেছনেই ধানমন্ডির এই খেলার মাঠ। জানালা দিয়েই দেখা যায়, শত শত কিশোর বালক কত আনন্দে খেলাধুলা করছে। বিকেলবেলা ওইটুকু একটা মাঠ কষ্টেসৃষ্টে ভাগ ভাগ করে ক্রীড়ারত শত শত ছেলেকে দেখলে বোঝা যায়, ঢাকা শহরে খেলার মাঠের কতই না অভাব। ১১ জন পেশাদার খেলোয়াড় তৈরি করতে দুই হাজার বালক-কিশোরের জীবন থেকে খেলার আনন্দ চিরতরে ঘুচিয়ে দেওয়া কোনো সুবিবেচনার কাজ নয়, গণতান্ত্রিক তো নয়ই।
কেবল বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কারও নাম ব্যবহার করেছে বলেই সর্বসাধারণের ব্যবহারের অত চমৎকার একটা মাঠের সমস্ত কর্তৃত্ব একটা বিশেষ ক্লাবকে দিয়ে ফেলা কতটা সংগত, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের প্রতি এই ধনী ক্লাবটার কর্তাব্যক্তিদের যদি সত্যিকারের ভালোবাসা থেকেই থাকে, তাহলে তাঁদের ক্লাবের অর্থে তাঁরা কোনো খালি জায়গা কিনে নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করে নেন না কেন? শত শত ছেলের একটা খেলার মাঠকে এভাবে কুক্ষিগত করা কেন?
ঢাকা শহরের এখন অনেক স্বাস্থ্যসজীব ফুসফুসের দরকার। ধানমন্ডির মাঠকে কংক্রিটের আবরণে ঢেকে মৃতপ্রায় এ শহরের আরও একটা ফুসফুসকে স্তব্ধ করে দেওয়ার যে পাঁয়তারা চলছে, সেটা এখনই বন্ধ হওয়া কাম্য। ধানমন্ডির এই মাঠটা যদি পাঁচিলবন্দী করেই ফেলা হয়, আমাদের পিন্টু আর মিন্টু তখন খেলবে কোথায়?
তানভীর মোকাম্মেল, চলচ্চিত্র নির্মাতা, ঢাকা।


লিখুন, পাঠিয়ে দিন
প্রিয় পাঠক, প্রথম আলোয় প্রকাশিত সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রতিবেদন ইত্যাদি নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া/ভিন্নমত আমাদের লিখে পাঠান। সমসাময়িক অন্যান্য বিষয়েও আপনার অভিমত, চিন্তা, বিশ্লেষণ সর্বোচ্চ ৪০০ শব্দের মধ্যে লিখে পাঠিয়ে দিন ডাকযোগে:

অভিমত, সম্পাদকীয় বিভাগ, প্রথম আলো, সিএ ভবন,
১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
ই-মেইলে (এমএস ওয়ার্ড অ্যাটাচমেন্ট):
obhimot@prothom-alo.info

No comments

Powered by Blogger.