আ. লীগকেও মাঠে থাকার নির্দেশ শেখ হাসিনার-লাঠি ধরার' হুমকি শীর্ষ নেতাদের

প্রধান বিরোধী দলের হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচির বিপরীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেও মাঠে সক্রিয় এবং জনগণের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাতার সফর শেষে দেশে ফেরার পর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণভবনে দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা দেখা করতে গেলে তাঁদের এই নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।


অন্যদিকে গতকাল বিকেলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা হরতাল-নৈরাজ্য-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক নেতা 'বিএনপির অপরাজনীতি মোকাবিলা করতে লাঠি ধরতে হবে এবং শত্রু রেখে যুদ্ধজয় হবে না' বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
শীর্ষ নেতাদের সাক্ষাৎ ও শেখ হাসিনার নির্দেশ : কাতারে চার দিনের সরকারি সফর শেষে গতকাল দেশে ফিরলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান দলীয় নেতারা। নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। এ সময় শেখ হাসিনা প্রধান বিরোধী দলের হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচির বিপরীতে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সক্রিয়ভাবে জনগণের পাশে থাকার জন্য শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দেন।
বৈঠকে বিরোধী দলের ডাকা তিন দিনের হরতালকে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো ঘটনার পরও আওয়ামী লীগ হরতাল দেয়নি। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের পর সরকারকে এ ব্যাপারে কোনো সহায়তা এবং কোনো ধরনের সুযোগ না দিয়েই বিরোধী দল হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দিয়েছে।
বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়া চৌধুরী, এইচ টি ইমাম, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বি এম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নাগরিক কমিটি আয়োজিত আগামী ২৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশ : বিএনপির 'হরতাল-নৈরাজ্য-সন্ত্রাসের' প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজনে গতকাল বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ।
সমাবেশে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, 'হরতাল-নৈরাজ্য-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।' তিনি বলেন, 'খালেদা জিয়ার অভিযোগ, র‌্যাব ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গেছে। যদি সত্যিই কোনো তথ্য থাকে, তা দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করুন।' তিনি বলেন, ১৯৯৩ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে ইলিয়াস আলী যখন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের পানির ট্যাংক থেকে ওই ছাত্র সংগঠনের কর্মী মামুন ও মাহমুদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। এ জন্য ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দিয়ে খালেদা জিয়া ইলিয়াস আলীকে গ্রেপ্তার করিয়ে দুই বছর জেলে রেখেছিলেন। এ রকম নেতার অবশ্য খালেদা জিয়ার দরকার রয়েছে।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বিএনপির 'নৈরাজ্যকর' কর্মসূচি মোকাবিলা করতে লাঠি ধরতে হবে মন্তব্য করে বলেন, 'ওরা জিতলে ওরা থাকবে, আমরা জিতলে আমরা থাকব। শত্রু রেখে যুদ্ধজয় হবে না।'
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, 'বিরোধী দল ইলিয়াস আলীকে চায় না। তারা ইলিয়াস আলীকে ইস্যু করে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।' তিনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, উপদপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম প্রমুখ।
হরতালের তৃতীয় দিনেও মাঠে আওয়ামী লীগ : বিএনপির টানা হরতালের তৃতীয় দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও আশপাশ এলাকা সরগরম করে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, ওলামা লীগ, যুব মহিলা লীগ ও ছাত্রলীগ সকাল ১০টার পর থেকে দফায় দফায় মিছিল করেছে।
সকাল ১১টার পর থেকে ছাত্রলীগের সদস্যদের 'মোটরসাইকেল মিছিল' করতে দেখা গেছে। ২০-৩০টি মোটরসাইকেলের একেকটি দল বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে বেরিয়ে আশপাশের এলাকার বিভিন্ন সড়কে চক্কর দেয়। এ ছাড়া ওই এলাকাগুলোতে মিছিল করেছেন ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে আসা নেতা-কর্মী- সমর্থকরা।

No comments

Powered by Blogger.