ওষুধ প্রশাসনকে আরও সক্রিয় করতে হবে-দেশীয় ওষুধের মান

স্বাধীনতার পর গত ৩৯ বছর যে গুটিকয়েক খাত দ্রুত উন্নতি করেছে, ওষুধশিল্প তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। এখানে উৎপাদিত ওষুধ দেশের ৯৭ শতাংশ চাহিদাই মেটাচ্ছে না, বহির্বিশ্বেও সমাদৃত। বাংলাদেশের ওষুধ ৯০টি দেশে রপ্তানি হওয়াকে আমরা বিরাট সাফল্য বলে মনে করি।


কিন্তু এই সাফল্যের পাশাপাশি আমাদের ওষুধশিল্পে যে কিছু গুরুতর সমস্যা রয়েছে, তা-ও অস্বীকার করা যাবে না।
গত শুক্রবার প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা গেছে, বাজারে ৭০ শতাংশ ওষুধের মান যাচাই করা হয় না প্রয়োজনীয় লোকবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে। দেশে ১২ হাজার শ্রেণীর ওষুধ তৈরি হলেও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর মাত্র সাড়ে তিন হাজার ওষুধের মান পরীক্ষা করতে পারে। বাকি সাড়ে আট হাজার অপরীক্ষিত থেকে যায়। বাজারে সরবরাহকৃত প্রতিটি ওষুধ ও ভোগ্যপণ্যের মান যাচাই হওয়া প্রয়োজন। ওষুধের ক্ষেত্রে এটি আরও জরুরি এ কারণে যে এর সঙ্গে মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত। মানুষ রোগমুক্তির উদ্দেশ্যে ওষুধ সেবন করে। কিন্তু নিম্নমানের ওষুধ অনেক সময় রোগীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ২০০৮ সালে একটি কোম্পানির প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে কয়েকটি শিশুর মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে তা পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেই ওষুধে ক্ষতিকারক উপাদান ছিল। প্রকাশিত খবর থেকে আরও জানা গেছে, প্যারাসিটামল পরীক্ষার যন্ত্রটি তিন বছর ধরে বিকল। মান পরীক্ষার জন্য পাঁচটি এএইচপিএলসি মেশিন প্রয়োজন হলেও আছে দুটি, যার একটি বিকল। তা ছাড়া লোকবলেরও অভাব রয়েছে। ওষুধ অধিদপ্তরের মতো সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান এভাবে চলতে পারে না।
গত বৃহস্পতিবার পঞ্চম এশিয়ান ফার্মা এক্সপো-২০১১ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ওষুধের মান রক্ষায় নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় লোকবল ও যন্ত্রপাতি না থাকলে নজরদারি বাড়ানো কীভাবে সম্ভব? সে জন্য সরকারকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অপূর্ণতা দূর করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশেই জীবনরক্ষাকারী সব ওষুধ উৎপাদনের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এ জন্য সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্রুত ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কেরও বাস্তবায়ন সম্ভব। প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকেরাও যে অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারেন, তার প্রমাণ পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন এবং কৃত্রিম কিডনি আবিষ্কার।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে পদ শূন্য বা যন্ত্রপাতি বিকল থাকার বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না। ৭৪ জন তত্ত্বাবধায়ক দিয়ে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করাও সম্ভব নয়। সরকারের অনেক মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত লোক নিয়োগ করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই অধিদপ্তরে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হবে, যাতে বাজারজাত সব ওষুধের মান যাচাই করা যায়। একই সঙ্গে নকল ও ভেজাল ওষুধ বন্ধেও নজরদারি বাড়াতে হবে। এর ব্যত্যয় সম্ভাবনাময় ওষুধশিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.