ছাত্রী উত্ত্যক্তকারীকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে-ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হামলা

বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব কারণে সহিংসতা হয়, তার অন্যতম হলো বহিরাগতদের দাপট। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (এমএমসিএইচ) এবার সেই দাপটের প্রকাশ ঘটেছে এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার মধ্য দিয়ে। প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী ও চিকিৎসক তাদের সন্ত্রাসের শিকার হয়ে আহত হয়েছেন। ঘটনা ঘটেছে দেড় ঘণ্টাজুড়ে। এত দীর্ঘ সময় পুলিশের দেখা পাওয়া যায়নি। তারা এসেছে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর।


তিন বহিরাগত এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করাই কি এমএমসিএইচের শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের অপরাধ? তারই শাস্তি দিতে শ-খানেক বহিরাগত সংঘবদ্ধভাবে হাসপাতালজুড়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরাও রুখে দাঁড়ান। সাধারণভাবেই বড় সরকারি হাসপাতালে পুলিশ থাকে। তা ছাড়া ময়মনসিংহের মতো শহরে পার্শ্ববর্তী থানা থেকে পুলিশ আসতেও বেশিক্ষণ লাগার কথা নয়। শহরে পুলিশ ও র্যাবের টহলযানও থাকার কথা।
ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার জেরে তিন বহিরাগতকে ধাওয়া করার ঘটনার পরই হাসপাতাল প্রশাসন ও পুলিশের সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তৎক্ষণাৎ পুলিশের সাহায্য চেয়েছিল কি না, তাও জানা দরকার। এলাকা থেকে লোকজন জড়ো করে ফিরে এসে সংঘবদ্ধ আক্রমণ করার মধ্যে যথেষ্ট সময় ছিল এবং সেই সময়ে পুলিশ তৎপর হলে অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনা এড়ানো যেত। কিন্তু তা না করায় ক্ষতি হলো দুটি: প্রথমত, একটি সহিংস ঘটনার শিকার হলেন অনেকে; দ্বিতীয়ত, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কারণে রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হলো।
বাংলাদেশে প্রায় সর্বত্রই আবাসিক উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ‘বহিরাগত’ সমস্যা দেখা যায়। এলাকাবাসী, বিশেষ করে তরুণদের ধারণা, তাঁদের এলাকায় প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই বাইরে থেকে এসেছে, তাই ‘বহিরাগত’ হিসেবে তাঁদের মান্য করতে হবে। সেই মান্যতা আদায়ের প্রকাশ ঘটে ‘এলাকার জোর’ দেখানোর মাধ্যমে। আবার শিক্ষার্থীদের মধ্যেও স্থানীয়দের ব্যাপারে স্পর্শকাতরতা দেখা যায়। উভয়ের সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েনের জন্ম এ কারণেই। এটা দূর করায় এলাকাবাসী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের পারস্পরিক দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ থাকা উচিত। অন্যদিকে পুলিশ ও প্রশাসন যেহেতু এই টানাপোড়েন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, সেহেতু অশান্তি ঠেকাতে তাদেরও এদিকে বাড়তি নজর থাকা দরকার। এমএমসিএইচের বেলায় সেই সতর্কতা তারা দেখায়নি। অন্য সব উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো এমএমসিএইচ কর্তৃপক্ষের এলাকাবাসীর সঙ্গে দূরত্ব কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত হোক। এ ধরনের মাস্তানদের পক্ষ না নিয়ে এলাকাবাসীরও উচিত তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করা। ছাত্রী উত্ত্যক্তকারী যে-ই হোক, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.