বলিউড-সুপারহিট হাউসফুল টু

অহংকারী হিসেবে অল্প সময়েই নাম কুড়িয়েছেন পরিচালক সাজিদ খান। প্রথম ছবি হে বেবি (২০০৭) নির্মাণের আগে তিনি শিল্পীদের বলেছিলেন, ছবিটি সুপারহিট না হলে তিনি নাম পরিবর্তন করে ফেলবেন। সাজিদের নাম পরিবর্তন করতে হয়নি। সমালোচকদের নিন্দার তোপের মুখে পড়লেও বক্স অফিসে বিজয়ীর আসনেই বসেছিল হে বেবি।


পরবর্তী সময়ে সাজিদ নির্মাণ করেন হাউসফুল (২০১০)। ছবির শিল্পীদের প্রথম শুটিংয়ের রাতেই বলেছিলেন—এই ছবিটি হতে যাচ্ছে ২০১০ সালের সবচেয়ে বড় হিট ছবি। এই ভবিষ্যদ্বাণী অবশ্য ধোপে টেকেনি। ২০১০ সালের সবচেয়ে বড় হিট ছবি ছিল দাবাং। যদিও হাউসফুল ছিল সেরা পাঁচটি হিট ছবির একটি।
এবার সাজিদ নির্মাণ করেছেন হাউসফুল ২। হাউসফুল-এর মতো এবারের ছবিটিও মুক্তি পেয়েছে আইপিএলের রমরমা মৌসুমে। অনেকে বলেছিলেন, এই সময়ে ছবি মুক্তি দেওয়াটা জেনেশুনে বিষপান করার মতোই। কিন্তু সাজিদ কারও কথা শোনেননি। হাতেনাতে ফলও অবশ্য তিনি পেয়েছেন। হাউসফুল ২ সুপারহিট হয়েছে। ছবির নায়িকা অসিনের ঝুলিতে দু-দুটি ১০০ কোটি রুপির ছবি (গজনী, রেডি) আছে। অথচ শুটিংয়ের সময় সাজিদ অসিনকে বলেছিলেন, ‘হাউসফুল ২-ই হবে তোমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় হিট ছবি।’ সাজিদ ঠিক বলেছিলেন কি ভুল, তা সময়ই বলবে। তবে মাত্র এক সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী ৭২ কোটি রুপি আয় করে চমকে দিয়েছে সাজিদের হাউসফুল ২। অগ্নিপথ-এর পর হাউসফুল ২ই এ বছরের সবচেয়ে বড় হিট ছবি। আরও কিছুদিন এমন ব্যবসা চললে, খুব শিগগিরই অসিন আরও একটি ১০০ কোটি রুপির ছবি ঝুলিতে ভরবেন। এ ছবির কল্যাণেই সাজিদ সফল পরিচালক হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন। অক্ষয় কুমার অনেক দিন পর বড় ধরনের হিট ছবি পেলেন। শুধু তা-ই নয়, হাউসফুল ২ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অক্ষয়ের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় হিট ছবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অক্ষয়-জন আব্রাহামের জুটি নতুন করে সমাদৃত হলো। বিয়ের পর রিতেশ দেশমুখের ঝুলিতে আরও একটি হিট ছবি যুক্ত হলো। ৪০ বছরের মধ্যে রণধীর কাপুর-ঋষি কাপুর ভ্রাতৃদ্বয় এবারই প্রথমবারের মতো একসঙ্গে অভিনয় করলেন। সাজিদের পরিচালনায় তাঁর প্রেমিকা জ্যাকলিন ফার্নান্দেজও প্রথমবার পূর্ণাঙ্গ নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করলেন। অক্ষয়-অসিন জুটির প্রথম পর্দা অভিষেক, মিঠুন চক্রবতী, বোমান ইরানী, চাঙ্কি পান্ডে, মালাইকা অরোরা খান, শাজান, জেরিন খান—কে নেই ছবিতে?
তবে...! এত কিছুর পরও সমালোচকেরা বসে নেই। তাঁদের কলমের খোঁচায় তুলোধুনো হয়ে পড়ছে হাউসফুল ২-এর সম্ভ্রম। রাজা সেন লিখেছেন, ‘স্বল্প আইকিউধারী দর্শকদের জন্যই হাউসফুল ২। বুদ্ধিহীন দর্শকদের বিনোদন হাউসফুল ২। কমল নাহতা বলেছেন, যাঁরা গোলমাল, ওয়েলকাম, রেডি, দাবাং, বডিগার্ড, ওয়ান্টেড ধাঁচের বিবেকহীন, সস্তা বিনোদনের ভক্ত, শুধু তাঁদের জন্যই হাউসফুল ২।’ অনুপমা ভার্মা লিখেছেন, ‘হাউসফুল ২ তে কাহিনির মাথামুণ্ডু নেই, শুধুই একটি বাড়িতে অভিনেতাদের ভাঁড়ামি প্রদর্শন! আপনার মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিন, হাউসফুল ২ দেখা থেকে বিরত থাকুন।’ ‘ছবির গানগুলো তো অখাদ্য’ লিখেছেন সমালোচক শোভা দে। অবশ্য এসব মন্তব্যে সাজিদ ত্রয়ীর (পরিচালক সাজিদ খান, প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা, সংগীত পরিচালক সাজিদ ওয়াজাদি) থোড়াই কেয়ার। সাজিদ বলেন, ‘হিন্দি ছবির অন্যতম সফল পরিচালক মনমোহন দেশাইয়ের কোনো ছবিই সমালোচকদের প্রশংসা পায়নি। ধরম-বীর, পারভারিশ, নসিব, কুলি, মর্দ, অমর আকবর অ্যান্থনি একের পর এক হিটের বারুদ নির্মাণ করেছিলেন দেশাই সাহেব। কিন্তু এসব ছবি আমজনতা সাদরে গ্রহণ করলেও আঁতেল সমালোচকদের সুদৃষ্টি পায়নি। আমি ১০ জন সমালোচককে তুষ্ট করার চেয়ে আমার লাখো-কোটি দর্শককে নিয়ে বেশি ভাবি।’
হাউসফুল ২ নিয়ে অন্য সমালোচনাও পাল্লা দিয়ে চলছে। কণ্ঠশিল্পী অভিজিত দাবি করেছেন ছবিতে ব্যবহূত ডু ইউ নো গানটি তার পুরোনো এক অ্যালবামের গানের হুবহু কপি। সংগীত পরিচালক সাজিদ ওয়াজাদি অবশ্য এই সম্ভাবন উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, তিনি একটি বিদেশি সুর থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন মাত্র। অবশ্য সব ধরনের সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে অভিনেতা অক্ষয় পাশে দাঁড়িয়েছেন ছবির পরিচালকের। তিনি বলেন, ‘সাজিদ কখনো স্টেনলে কা ডাব্বা কিংবা কাহানির মতো কোনো ছবি নির্মাণ করতে চাননি। অস্কারযোগ্য কোনো কাহিনি বলাটাও সাজিদের ধাতে নেই। কমেডি ছবি নির্মাণে সাজিদের তুলনা শুধু সাজিদই। আমরা সব সময়ই চেয়েছি দর্শকদের নির্মল বিনোদনের জন্য পাগলামিতে ভরপুর একটি ছবি উপহার দিতে। দর্শক বরাবরই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং সমালোচকদের কথায় কর্ণপাত করে সময় নষ্ট করব কেন? ’
 রুম্মান রশীদ খান
[মিড ডে, রেডিফ, ফিল্মফেয়ার, বলিউড লাইফ, হিন্দুস্তান টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে]

No comments

Powered by Blogger.