অগ্নি-৫: দশটি বিশেষ দিক

সমর শক্তিতে আরো একধাপ এগিয়ে গেলো ভারত। ভারতের সমরভাণ্ডারে এবার সংযুক্ত হতে যাচ্ছে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র বা আইসিবিএম। অগ্নি-৫ নামের এই আইসিবিএম নিঃসন্দেহে প্রতিবেশী সমর প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় ভারতকে কৌশলগত সুবিধাজনক অবস্থায় রাখবে।

বৃহস্পতিবার ভারত তার বহুল প্রতিক্ষিত আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের(অগ্নি-৫) সফল পরীক্ষা চালায়। বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় প্রদেশ উড়িষ্যা রাজ্যের হুইলার দ্বীপ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় ক্ষেপণাস্ত্রটি। দ্বীপে অবস্থিত ইনটিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ(আইটিআর) থেকে তিনস্তর বিশিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণ করা হয়।
প্রথমে স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় উৎক্ষেপণের সময় নির্ধারন করা হলেও খারাপ আবহাওয়ার কারণে তা পিছিয়ে যায়। অবশেষে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১২ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সকাল আটটা সাত মিনিটে সম্পন্ন হয় উৎক্ষেপণ।

ক্ষেপণাস্ত্রটির নকশা প্রণয়ন এবং নির্মাণের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের (ডিআরডিও) বিজ্ঞানীরা। উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে দাবি করে তারা বলেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি ভারত মহাসাগরে অবস্থিত তার লক্ষ্যবস্তুতে সঠিকভাবেই আঘাত করেছে।

এখানে অগ্নি-৫ সম্পর্কিত কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো-

● ভারতের আগে পৃথিবীতে মাত্র পাঁচটি দেশ আইসিবিএমের মালিক ছিলো। অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ভারত পৃথিবীর ষষ্ঠ দেশ হিসেবে আইসিবিএমের অভিজাত ক্লাবে ঢুকে গেলো। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি চূড়ান্তভাবে ভারতের সামরিক বাহিনীর অস্ত্রভণ্ডারে সংযোজিত হতে ২০১৪-২০১৫ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে বলে ডিআরডিও কর্মকর্তারা জানান।

● পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ায় চীনের রাজধানী বেইজিয়ে আঘাত করার সামর্থ্য আছে অগ্নি-৫ এর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রতি প্রতিবেশী চীনের সামরিক হুমকির জবাব হিসেবে দেখা হচ্ছে অগ্নি-৫ কে। সম্প্রতি তিব্বতের ভারত সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে চীন। মনে করা হচ্ছে এর জবাব হিসেবে ভারত অগ্নি-৫ এর এ পরীক্ষা চালালো।

● ডিআরডিও’র প্রধান ভিকে সারসোয়াতের দাবী অনুযায়ী অগ্নি-৫ এর আওতায় শুধু চীনই নয় বরং সমগ্র এশিয়া সহ ইউরোপ এবং আফ্রিকার অংশ বিশেষও রয়েছে।

● তবে একবার নিক্ষিপ্ত হলে অগ্নি-৫ কে থামানো যাবেনা। বুলেটের চেয়ে বেশি গতিবেগ সম্পন্ন  অগ্নি-৫ এক টন ওজনের পারামাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ থেকেও উৎক্ষেপন করা যায়।

● ৫ হাজার কিলোমিটার পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে সেনাবাহিনীতে সংযোজনের আগে আরো বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করা হবে। সামরিক বাহিনীতে সংযোজিত হলে এটি হবে ভারতের সবচেয়ে দূরপাল্লার পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র।

● অগ্নি-৫ এর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভারত এখন যে কোনো ক্ষেপণাস্ত্রে পারমাণবিক অস্ত্র সংযোজন করতে সক্ষম হবে।

● কক্ষপথে ছোট আকারের কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপন করতেও সক্ষম অগ্নি-৫। ভবিষ্যতে কক্ষপথে কোনো কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস করতেও অগ্নি-৫কে ব্যবহার করা সম্ভব।

● শুধুমাত্র ভারতের কেবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটির (সিসিএস) সিদ্ধান্তের পরপরই ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করা যাবে।

● তিন ইঞ্জিন বিশিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫ কঠিন জ্বালানি দিয়ে চলে। প্রথম রকেট ইঞ্জিন এটিকে ৪০ কিলোমিটার উচ্চতায় তুলবে। এরপর দ্বিতীয় ইঞ্জিন তুলবে ১৫০ কিলোমিটারে। তৃতীয় ইঞ্জিন ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ভূপৃষ্ঠের ৩০০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত নিয়ে যাবে। এবং চূড়ান্তভাবে ক্ষেপণাস্ত্রটি ৮০০ কিলোমিটার উচ্চতায় উঠে যাবে। এর এটি মূল লক্ষ্যবস্তুর দিকে এগিয়ে যাবে।
● ডিআরডিও’র দাবি- অগ্নি-৫ দেড়মিটারের একটি টার্গেটেও (যেমন একটি গাড়ি) আঘাত হানতে পারে।

প্রসঙ্গত, অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে পৃথিবীর ষষ্ঠ দেশ হিসেবে আইসিবিএম’র অভিজাত ক্লাবে ঢুকে গেলো বলে দাবি করছে ভারত। তবে যতক্ষণ না ভারত ৮ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের ক্ষেপণাস্ত্রের মালিক হচ্ছে ততক্ষন পর্যন্ত তারা আইসিবিএম ক্লাবের সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি নাও পেতে পারে। কারণ অগ্নি-৫ এর রেঞ্জ ৫ হাজার কিলোমিটার।

No comments

Powered by Blogger.