সহিংসতা নয়, আলোচনাই সমাধানের পথ-প্রস্তাবিত বিমানবন্দর

আড়িয়ল বিলে একটি নতুন বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, তা যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত, তেমনই দুঃখজনক। এ ঘটনায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা মারা গেছেন এবং শতাধিক লোক আহত হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম আলোর সাংবাদিকও রয়েছেন।


এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটি সোমবার ঢাকা-মাওয়া সড়ক অবরোধের কর্মসূচি নেয়। সেই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উপায়ে পালন করলে বলার কিছু ছিল না, কিন্তু প্রতিবাদের নামে লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালানো, গাড়ি পোড়ানো কিংবা পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দেওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। প্রস্তাবিত বিমানবন্দরটির জন্য ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে মাত্র। তার পরও এ ধরনের সহিংস ঘটনা কাম্য ছিল না। প্রতিবাদের ভাষা হতে হবে শান্তিপূর্ণ। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ নেই।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চলছিল। যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে সুস্থ ও গঠনমূলক বিতর্ক হতে পারে। এ ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার আগে অনেক চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন। প্রথম প্রশ্ন, এ মুহূর্তে দেশে আরেকটি বিমানবন্দরের প্রয়োজন আছে কি না? দ্বিতীয় প্রশ্ন, প্রয়োজন থাকলেও তার জন্য উপযুক্ত স্থান কোথায় হতে পারে? তৃতীয় প্রশ্ন, পরিবেশের কম ক্ষতি করে বেশি লাভ কোথায় পাওয়া যেতে পারে? আড়িয়ল বিলের আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রস্তাবিত বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। স্থান পরিবর্তনে কি বিশেষজ্ঞদের মত নেওয়া হয়েছিল? সব দিক চিন্তাভাবনা না করে এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া কতটা যৌক্তিক, তা-ও ভেবে দেখা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলেছেন, আড়িয়ল বিল বিমানবন্দরের জন্য উপযুক্ত নয়। নিচু এলাকা হওয়ায় খরচ যেমন বেশি হবে, তেমনই পরিবেশগত ঝুঁকিও বাড়াবে। এর চেয়েও জরুরি হলো, যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ বা উন্নয়ন পরিকল্পনার আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করা। তাদের সম্মতি নিয়েই কাজটি করতে হবে। অধিকাংশ স্থানীয় বাসিন্দা সংক্ষুব্ধ থাকলে সরকারের উচিত বিকল্প ভাবা। পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরের প্রকল্পের কথা কমবেশি আমাদের জানা আছে।
আরেকটি কথা, দেশ ও জনগণের কল্যাণে প্রয়োজন হলে নতুন বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কিন্তু তার আগে বিদ্যমান বিমানবন্দরগুলোর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনো ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যে সংখ্যক যাত্রীসেবা দিতে পারে, তার অর্ধেক ব্যবহার করা হচ্ছে মাত্র। তাই এই বিমানবন্দরের যাত্রীসেবার সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং এর প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিকে বেশি মনোযোগী হতে হবে। সবশেষে বলব, যেখানেই বিমানবন্দর নির্মাণ বা অন্য কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হোক না কেন, স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আলোচনা করে এবং পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা করেই তা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.