ইলিয়াস আলী নিখোঁজ-এ রহস্য কি উন্মোচিত হবে

অনেক রহস্যের জাল উন্মোচিত হচ্ছে না। নাটকীয় নানা ঘটনায় শোনা যাচ্ছে নানা কাহিনী। এরই মধ্যে নতুন এক রহস্য যোগ হলো। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে উধাও বিরোধী দল বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী। ক্ষুব্ধ সিলেটে অবরোধ। বৃহস্পতিবার হরতালের ঘোষণা।


বিএনপি দাবি করেছে, ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে কঠোর আন্দোলনের হুমকি। ইলিয়াস আলীর গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে। গাড়িতে পাওয়া গেছে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন। পাওয়া যায়নি তাঁর ড্রাইভারের খোঁজ। ওদিকে মঙ্গলবার সকালে গুলশানে নিজের ফ্ল্যাটে এক নারী উদ্যোক্তা খুন হয়েছেন।
ইলিয়াস আলীর মতো নেতাদের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার নেপথ্য রহস্য কী, সেটা জানা এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এর আগে বিএনপির আরেক নেতা কমিশনার চৌধুরী আলম নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। কমিশনার চৌধুরী আলম নিখোঁজ রহস্য এখনো উন্মোচিত হয়নি। একের পর এক ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর নানা ঘটনা থেকে যাচ্ছে রহস্যের অন্তরালে। রহস্যের জাল ছিঁড়ে সত্য উদ্ঘাটন করা যাচ্ছে না। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীতে নিজেদের ফ্ল্যাটে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। ৪৮ ঘণ্টার পর ৪৮ দিনও চলে গেছে। সাগর-রুনি হত্যা রহস্য অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। আদালতে হাজিরা দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, 'আজ পর্যন্ত আমরা ব্যর্থ।' সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল ১১ ফেব্রুয়ারি। এত দিন অনেক আশার কথা শোনানো হলেও এখন ওই মামলার তদন্তকারী সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা উচ্চ আদালতে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিলেন। তিনি সরলভাবে যে স্বীকারোক্তি আদালতে দিয়েছেন, তা থেকে সমাজের অসহায়ত্বের গভীরতা বুঝতে অসুবিধা হয় না। এটা এখন স্বীকার করে নিতেই হবে, আমরা এক গভীর সংকটের দিকে যাচ্ছি। এই সংকট যে আরো তীব্র হচ্ছে, গুলশানে ফাহিমা সুলতানার মৃত্যু সেটাই যেন নতুন করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। সাগর-রুনি হত্যা রহস্য উন্মোচিত হয়নি। আদালতে গিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে আসেন। এই ব্যর্থদের নিয়ে, ব্যর্থতা নিয়ে রাষ্ট্র কেমন করে নিশ্চিত করবে মানুষের কল্যাণ? কেমন করেই বা নিশ্চিত হবে নাগরিকের নিরাপত্তা? স্বাভাবিক কারণেই নিরাপত্তা এখন প্রধান প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সেটাই স্বাভাবিক।
ব্যাপারটা তাহলে এ রকমই দাঁড়াচ্ছে যে আমরা নিরাপত্তাহীন। যেখানে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার বা রাষ্ট্রের, সেখানে ব্যর্থতাই আপাতত প্রাপ্তি। এই অবস্থায় জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব কি শেষ পর্যন্ত জনগণ বা নাগরিকের ওপরই বর্তায়? এখানে রাষ্ট্র কি তাহলে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে, নাকি ব্যর্থতাকেই আশ্রয় করতে চায়? এমন একটি অনিশ্চিত অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। চাঞ্চল্যকর সব ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটিত হতে হবে। দায় সরকারের। সরকারকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। ইলিয়াস আলী অন্তর্ধান রহস্য থেকে শুরু করে ফাহিমা হত্যা- সব রহস্য উন্মোচিত হতে হবে।
মানুষ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চায়। একটি অনিশ্চিত যাপিত জীবন দেশের মানুষের মানবিক বিকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়। আবার আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ সমাজের স্বাভাবিকতা নষ্ট করে দেয়। এ অবস্থায় কেবল সুস্থ ও জবাবদিহিমূলক রাজনীতিই পারে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।

No comments

Powered by Blogger.