এ কিসের আলামত!

এ দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা কি আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে? মানিকগঞ্জ জেলা সদরের উকিয়ারা গ্রামের দুটি পরিবারকে উচ্ছেদ ও একটি মন্দির ভাঙার পর তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার খবরটি পড়ে স্বাভাবিকভাবেই এমন আশঙ্কা জাগে। এ রকম হলে এ দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিরাপদে থাকবে কী করে?


সেই জায়গাটি যারা দখল করে নিয়েছে, তারা শাসকদলেরই স্থানীয় এক নেতার সাঙ্গপাঙ্গ! প্রকাশিত খবরে জানা যায়, তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জেলা শাখার ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। এটাই কি তার ধর্মবিষয়ক কাজের উপযুক্ত উদাহরণ? বটে! বলা হচ্ছে, সেখানে নাকি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হবে। কাউকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার কোনো আইনি সুযোগ আছে কি?
দুটি পরিবার বসতি থেকে উচ্ছেদ হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ, সন্ত্রাসীরা জায়গাটি পাহারা দিচ্ছে। মোটরসাইকেলে করে এলাকায় টহল দিচ্ছে। তাদেরই কিছু অনুসারী আবার মানিকগঞ্জ শহরে মিছিলও করেছে। আর মিছিলটি হয়েছে হাসপাতাল করার পক্ষে। এরপর তো রীতিমতো প্রশ্ন জাগে, এ দেশে আইন-কানুন, পুলিশ, প্রশাসন কিছু আছে কি? বাড়ি ও মন্দির দখলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই সন্ত্রাসীদের কাজকর্ম। সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে একাধিক সংবাদকর্মীকে তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ বিষয়টিও খুবই উদ্বেগজনক। টিভি ক্যামেরা এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হওয়ার পরও কোন অদৃশ্য কারণে এখন পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি_এটাও সহজে বোধগম্য নয়। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে দাবিদার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাহীন থাকবে কিংবা তাদের দলের লোকজনই সংখ্যালঘুদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করবে_ভাবতেও কষ্ট হয়। মাস কয়েক আগে ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ রাজধানীর একাধিক মন্দিরে দুর্ধর্ষ চুরি সংঘটিত হয়েছিল। সেখান থেকে স্বর্ণসহ মূল্যবান সামগ্রী চুরি হয়ে যায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। আর সেসব বিষয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপও যে কার্যকর কিছু নয়, এটাও প্রমাণ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে মানিকগঞ্জের এ ঘটনা স্বাভাবিক কারণেই সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে পারে। যেহেতু মানিকগঞ্জের ঘটনাটি চিহ্নিত একটি মহল করেছে, তাই পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু বাস্তবে তা-ই হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করা খুবই জরুরি। এখনই শক্ত হাতে দমন করতে হবে দুর্বৃত্তদের। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়া হলে দেশের অন্যান্য স্থানেও এমন ঘটনা অহরহ ঘটতে থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.