রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ ইলিয়াস আলী

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি এম ইলিয়াস আলীর সন্ধান মিলছে না। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঢাকা থেকে রহস্যজনকভাবে 'নিখোঁজ' এ নেতার ব্যবহৃত প্রাইভেট কার ও একটি মোবাইল ফোন বনানীতে তাঁর বাসার অদূরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।


তাঁর গাড়িচালক আনসারের খোঁজও পাওয়া যাচ্ছে না।
ইলিয়াস আলীর পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে এ নিখোঁজ ঘটনায় সরকারের কোনো গোয়েন্দা সংস্থা অথবা র‌্যাবের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে পুলিশসহ কোনো সংস্থাই ইলিয়াস আলীকে হেফাজতে নেওয়ার কথা স্বীকার করেনি।
এ ঘটনায় ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তাহসিনা রুশদীর লুনা বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। লুনা তাঁর স্বামীকে জীবিত ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
এদিকে গতকাল রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ইলিয়াস আলীর বাসায় যান এবং তাঁকে খুঁজে বের করা হবে বলে তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের আশ্বাস দেন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনার সঙ্গে র‌্যাব-পুলিশ জড়িত থাকার ব্যাপারে বিরোধী দলের দাবি নাকচ করে দেন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে কয়েকজন লোক বনানীতে ইলিয়াস আলীর বাসায় যান। সেখানে তাঁরা কথাবার্তা বলে রাত পৌনে ১০টার দিকে বেরিয়ে যান। ইলিয়াস আলীও তাঁদের সঙ্গে যান। ইলিয়াস ওঠেন তাঁর স্ত্রীর ব্যবহৃত প্রাইভেট কারে, সঙ্গে আগতদের কয়েকজন। অন্যরা বেরিয়ে যান দুটি মোটরসাইকেলে করে। আগতদের কয়েকজন সিলেটের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। এর পর রাত দেড়টার দিকে বনানীর আমতলী ক্রসিংয়ের কাছে একটি প্রাইভেট কার পরিত্যক্ত দেখতে পেয়ে লোকজন ভিড় করে। টহল পুলিশ গিয়ে গাড়ির ভেতরে পাওয়া একটি মোবাইল ফোনের কললিস্ট ধরে বিভিন্ন নম্বরে ফোন করে নিশ্চিত হয়, এটা বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গাড়ি। পরে ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে জানানো হয়। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইলিয়াস আলীর কোনো সন্ধান মেলেনি।
এ ব্যাপারে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ সোহায়েল কালের কণ্ঠকে বলেন, সাবেক এ সংসদ সদস্যের নিখোঁজ সংবাদ পেয়ে র‌্যাবের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। তাঁর সন্ধান পেতে র‌্যাব সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাঁকে র‌্যাব হেফাজতে নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।
গতকাল রাজধানীর বনানীর ২/১ নম্বর সড়কে অবস্থিত ইলিয়াস আলীর বাসা 'সিলেট ভবন'-এ গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কান্নার রোল চলছে। ইলিয়াস আলী স্ত্রী-সন্তানসহ এই বাড়িতে উঠেছেন চার মাস আগে। ছয়তলা বাড়ির পঞ্চম তলায় তিনি থাকতেন। ইলিয়াস আলীর মালিকানাধীন নবনির্মিত ভবনটির ছয়তলায় শুধু একজন ভাড়াটিয়া উঠেছেন। বাকি অংশে কোনো ভাড়াটিয়া নেই। ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ সংবাদ জানাজানির পর গতকাল সকাল থেকে স্বজনদের পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীরাও বাড়িটিতে ভিড় করেন। তাঁরা সবাই ইলিয়াস আলীকে জীবিত উদ্ধারে জোর দাবি জানালেও কিভাবে তিনি নিখোঁজ হলেন বা কেউ তাঁকে অপহরণ করেছে কি না, সে ব্যাপারে কেউ কোনো ধারণা দিতে পারছে না।
ইলিয়াসের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা গতকাল সকালেই ইলিয়াসের বাসায় ছুটে যান। সেখানে অবস্থানকালে রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালক আনসারকে রাত থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা নিখোঁজ হয়েছেন। বিষয়টি আতঙ্কের। অবিলম্বে তাঁদের খুঁজে বের করার জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।' তিনি এ নিখোঁজ ঘটনার সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতা আছে বলে ধারণা প্রকাশ করেন।
ইলিয়াস আলীর বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শফিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, গত মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ইলিয়াস আলী বাসা থেকে বের হন। সে সময় গাড়িতে তাঁর সঙ্গে আরো দুজন ছিলেন। এর আগে ইলিয়াস তাঁর বাড়ির নিচতলার অফিসে ছয়-সাতজনের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন। এর মধ্যে দু-তিনজন ইলিয়াস আলীর সঙ্গে নতুনভাবে পরিচিত হন। কথা শেষে সবার সঙ্গে করমর্দন করে তিনি গাড়িতে উঠে বেরিয়ে যান। অন্যরা দুটি মোটরসাইকেলে করে সেখান থেকে চলে যান। সর্বশেষ বাড়িটিতে যে কয়েকজনের সঙ্গে ইলিয়াস কথা বলেছেন, তাঁদের পরিচয় জানাতে পারেননি তত্ত্বাবধায়ক শফিক। তাঁদের মধ্যে দু-একজন সিলেট এলাকার বলেই ধারণা প্রকাশ করেন তিনি।
আরো জানা যায়, নিখোঁজ ঘটনার পর নেতা-কর্মীসহ অনেকেই গতকাল ইলিয়াসের বাড়িতে এলেও গত রাতে আসা ওই ব্যক্তিদের কেউ সেখানে আসেননি। তাঁরা এলে তত্ত্বাবধায়ক শফিকুর তাঁদের চিনতে পারবেন বলে জানান।
ঘটনা তদন্ত প্রসঙ্গে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার লুৎফুল কবীর বলেন, 'পুলিশের পক্ষ থেকে সম্ভব সব কিছুই করা হচ্ছে। দেশের সব থানায় ইতিমধ্যে বার্তা পাঠানো হয়েছে। ইলিয়াস আলীর আত্মীয়স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি সর্বশেষ কার কার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন, তাও দেখছি আমরা।' সাবেক এমপির ব্যবহৃত গাড়িটি বনানীর আমতলী ক্রসিং এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ওই গাড়ির চালক আনসারেরও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা বনানী থানায় একটি জিডি করেছেন। তার ভিত্তিতেই অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বনানী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কাজী মাইনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। তাঁকে খুঁজে বের করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।' রাত দেড়টার দিকে আমতলী ক্রসিংসংলগ্ন সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে একটি প্রাইভেট কার পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে লোকজন ভিড় করে। পরে টহল পুলিশ খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে ডান পাশের দরজা খোলা অবস্থায় গাড়িটি দেখতে পায়। গাড়ির ভেতরে একটি মোবাইল ফোনও পাওয়া যায়। ওই ফোনের কললিস্ট ধরে বিভিন্ন নম্বরে ফোন করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটি ইলিয়াস আলীর গাড়ি। পরে ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি গাড়ির বর্ণনা পেয়ে দাবি করেন, গাড়িটি তিনি ব্যবহার করেন। তবে প্রয়োজনে তাঁর স্বামী ইলিয়াসও ব্যবহার করেন। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী বলেন, 'গত রাতে সে (ইলিয়াস) আমার গাড়িটি নিয়েই বের হয়।'
এ বিষয়ে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর স্বামী মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চালকসহ দুজন লোকের সঙ্গে ওই গাড়িতে করে বনানীর বাসা থেকে বের হয়ে যান। রাতে পুলিশ গাড়িটি উদ্ধার করে তাঁকে খবর দিয়ে জানায়, পরিত্যক্ত অবস্থায় গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাঁর স্বামী ইলিয়াস ও চালক গাড়িতে ছিলেন না। সকালে বনানী থানায় তিনি একটি জিডি করেন।
স্ত্রী লুনার আবেদন : ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তাঁর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। নিজ অ্যাপার্টমেন্টে তিনি রীতিমতো আহাজারি করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে স্বজনরা তাঁকে একটি কক্ষে বিশ্রামের জন্য সরিয়ে নেন। তিন সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কান্নারত লুনা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী স্বজন হারানোর বেদনা বোঝেন। তাই তাঁর কাছে বিনীত নিবেদন, তিনি যেন আমার স্বামীর দ্রুত খোঁজ দেন। সরকার চাইলে যেকোনো মুহূর্তে নিখোঁজ মানুষের সন্ধান দিতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। পুলিশ-র‌্যাবসহ সবার কাছে বিষয়টি জানিয়েছি, কিন্তু কেউ খোঁজ দিতে পারছে না।' তিনি বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার প্রতি অনুরোধ, আমার স্বামী কোথায় আছেন, জানতে চাই। আপনাদের কাছে থাকলে তা-ও বলুন। জীবিত না থাকলে তাঁর লাশ আমার কাছে ফেরত দিন।'
তসবিহ হাতে কান্নারত লুনা দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরীর স্ত্রী শাহেদা ইয়াসমীন, এমপি শাম্মী আখতার, নিলুফার চৌধুরী মনিসহ কয়েকজন লুনাকে বিশ্রামের জন্য অন্য কক্ষে সরিয়ে নেন। ছেলে আবরার ইলিয়াস অর্ণব ও লাবিব শারার এবং মেয়ে সাইয়ারা নাউয়াল বাবার নিখোঁজ সংবাদে ও মায়ের শারীরিক অবস্থা দেখে ভেঙে পড়েছে। তারাও সারাদিন কেঁদেছে।
ইলিয়াস আলীর ছেলে লাবিব শারার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মঙ্গলবার দুপুরে তার বাবা (ইলিয়াস আলী) সিলেট থেকে বিমানে ঢাকায় ফেরেন। দুপুর ৩টার দিকে বাসায় এসে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমান। বিকেলে আম্মা আমাকে মিরপুরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমরা বাসায় ফিরে দেখি, আব্বু নিচ তলার গেস্টরুমে পাঁচ-ছয়জন লোকের সঙ্গে কথা বলছেন। আমরা আসার পর চিকিৎসার খোঁজ নেন। আমরা আব্বুকে রেখে লিফটে ওপরে যাই। এরপর রাত পৌনে ১০টার দিকে আব্বু ড্রাইভারকে নিয়ে গাড়িযোগে বাসা থেকে বের হয়ে যান। আব্বুর সঙ্গে আরো কে বা কারা ছিল, তা আমরা জানি না। যারা ছিল তাদের আব্বু চেনেন। এরপর রাত দেড়টার দিকে আমরা পুলিশের মাধ্যমে খবর পাই। রাতে পুলিশ ও র‌্যাব বাসায় আসে।'
এদিকে স্বামীর নিখোঁজ হওয়া এবং গাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তাহসিনা রুশদীর সকালে বনানী থানায় যে জিডি করেন, তার নম্বর ৪০৩। ইলিয়াস আলী ও গাড়ির চালক আনসারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি। জিডিতে তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেছেন, 'রাত পৌনে ১০টায় ইলিয়াস আলী বাসা থেকে চালককে নিয়ে বের হয়ে যান। রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো গ-২৯-৪৪১৫) উদ্ধার করেছে বলে জানায়। আমি গাড়ির নম্বর শোনার পর বলি, গাড়িটি আমাদের। আমি ওই ঘটনা শুনে হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। এরপর রাতেই র‌্যাবের মহাপরিচালক ও পুলিশকে জানাই। এখন পর্যন্ত আমার স্বামীর কোনো খোঁজ পাইনি।'
এদিকে গতকাল সকালে বনানী থানায় গিয়ে উদ্ধার করা গাড়িটি দেখা যায়। গাড়ির পেছনে বাম্পার বাঁকা, একটি লাইট ভাঙা দেখা যায়। গাড়ি উদ্ধারের স্থল সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে গিয়ে রাতের ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। কখন ও কিভাবে গাড়িটি সেখানে রাখা হলো, সে ব্যাপারেও পুলিশকে তথ্য দিতে পারেনি কেউ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার শেখ মারুফ হাসান গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে জানান, সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীর স্ত্রী সাধারণ ডায়েরি করার পর থেকে থানা পুলিশের পাশাপাশি তাঁরাও এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। তাঁদের একাধিক টিমও খোঁজ-খবর নিচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত তাঁরা এই নিখোঁজের ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাননি।
গোয়েন্দা পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা জানান, এ ব্যাপারে তাঁরা ইলিয়াস আলীর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে ইতিমধ্যে কথা বলেছেন। ইলিয়াস আলী সার্বক্ষণিক যাদের সঙ্গে কথা বলতেন, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের মোবাইল টেলিফোনের কল লিস্ট ধরেও তাঁরা কাজ করছেন। লক্ষ রাখছেন অনেকের মোবাইল ফোনের ইনকামিং ও আউট গোয়িং কলের ওপর। তবে তাঁদের ধারণা, ইলিয়াস আলী তাঁর নিজ বলয়ের কোনো প্রতিপক্ষের অপহরণের শিকার হয়ে থাকতে পারেন। তাঁর সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটে অনেকেরই দলীয় আধিপত্য নিয়ে বিরোধ আছে। এ ছাড়া টাকার লেনদেন নিয়েও তাঁর সঙ্গে কারো বিরোধ আছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে এই নিখোঁজ হওয়ার রহস্যটা তাঁর নিজ বলয়ের মধ্যেই লুকিয়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সর্বশেষ তিনি বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় এবং কাদের সঙ্গে যাচ্ছিলেন সেটাও পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। তিনি যে দুজনের সঙ্গে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যান, তাদের পরিচয় বের করার ব্যাপারেও চেষ্টা চলছে। ইলিয়াস আলীর পরিবারের সদস্যরাও অনেক কিছু গোপন করছে বলে গোয়েন্দারা ধারণা করছেন।
ইলিয়াসের বাড়িতে সাহারা
ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিরোধী দলের অভিযোগের মাঝেই গত রাতে ইলিয়াসের বাড়িতে হাজির হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। এ সময় ইলিয়াস আলীর স্ত্রী-সন্তানদের সান্ত্বনা ও আশ্বাস দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইলিয়াসের পরিবারের সদস্যদের বলেন, 'যারাই এ ঘটনায় জড়িত থাকুক তাদের খুঁজে বের করা হবে। সরকার আন্তরিকভাবে বিষয়টি দেখছে। ঘটনার সঙ্গে পুলিশ-র‌্যাব জড়িত নয়। গোয়েন্দা সংস্থা তাঁকে হেফাজতে নিলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমি তা জানতাম।'
রাত পৌনে ১১টায় পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বনানীতে অবস্থিত ইলিয়াস আলীর বাসভবনে যান। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জীবিত অবস্থায় ইলিয়াসকে উদ্ধারের আকুতি জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।'
ইলিয়াসের ছেলে লাবিব শারার কালের কণ্ঠকে বলে, 'স্বরাষ্ট্রমন্ত্র্রীকে আম্মু জিজ্ঞাসা করেছেন কেন এবং কারা এ রকম জনপ্রিয় নেতাকে নিয়ে গেল? পুলিশ ও গোয়েন্দারা ছাড়া এর আগে তো কেউ এভাবে রাজনৈতিক নেতাকে ধরে নিয়ে যায়নি। তাহলে আমরা কি বুঝব?' এসব প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চুপ ছিলেন বলে লাবিব জানায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায় আধা ঘণ্টা ইলিয়াসের বাড়িতে অবস্থান করেন।

No comments

Powered by Blogger.