মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সম্পদ-সর্বসমক্ষে হিসাব প্রকাশ কাঙ্ক্ষিত

মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টাসহ সরকার বা প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োজিত সমমর্যাদা ও তুলনীয় মর্যাদার ব্যক্তিদের সম্পদের হিসাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিতে হবে_ সোমবার এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে মন্ত্রিসভায়। প্রতি বছর ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতারা আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়েই প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ হিসাব দেবেন।


এটা সবার জানা যে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এ ধরনের হিসাব প্রকাশের অঙ্গীকার করেছিল। এতে বলা হয়, প্রতি বছর প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের বিবরণ জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। মন্ত্রিসভায় বিষয়টি অনুমোদনের পর বলা যায়, কথা অনুযায়ী কাজ করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে নাগরিকদের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার কথা। আইনে এ রিটার্নের বিবরণ সর্বসমক্ষে প্রকাশে বেশ কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু তা জনপ্রতিনিধি কিংবা মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না। এ বিধান মূলত ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্তদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিবেচনা থেকে প্রণীত হয়েছে। দেশবাসী আশা করবে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেসব ব্যক্তির সম্পদ ও আয়ের বিবরণী জমা পড়বে তা জনসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ করা হবে। এ ধরনের দায়িত্ব যাদের ওপর অর্পিত হবে কিংবা যারা তা গ্রহণে আগ্রহী হবেন, তাদের সম্পদ সংক্রান্ত তথ্য গোপনের সুযোগ নেই। ব্যবসায়িক গোপনীয়তা বজায় রাখার বিষয়টি যাদের কাছে প্রাধান্য পাবে তাদের এ ধরনের দায়িত্ব গ্রহণ অনুচিত। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা ও ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত সম্পদ বাড়ানোর অভিযোগ অনেক বছর ধরেই রয়েছে। এর পেছনে কখনও সত্যতা থাকে, কখনওবা কেবল ধারণার ভিত্তিতে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। তা নিরসনে তাদেরই ভূমিকা রাখা উচিত। পত্রিকান্তরে খবরে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্যদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সম্পদের বিবরণী সংক্রান্ত প্রতিটি ফাইল দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্তের জন্য প্রেরণ করা হবে এবং কারও বিবরণীতে কোনো গরমিল পাওয়া গেলে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হবে। তার কাছ থেকে দেশবাসী এমন মনোভাবই প্রত্যাশা করে থাকে। বাংলাদেশে দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে, এমন ধারণা জনমনে রয়েছে এবং তা অমূলক নয়। মন্ত্রিসভার সদস্যরা দুর্নীতির ঊধর্ে্ব_ এটা তুলে ধরা গেলে সমাজের সর্বত্র তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বেই। এটা ঠিক যে, বর্তমান মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের গুরুতর কোনো অভিযোগ এ পর্যন্ত ওঠেনি। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি পূর্ববর্তী চারদলীয় জোট সরকারের তুলনায় যথেষ্ট ভালো। জনসাধারণ এ অবস্থাকে স্বাগত জানায়। তবে কানাঘুষা একেবারে নেই, সেটা বলা যাবে না। এ কারণে সরকারের দায়িত্বে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আর্থিক স্বচ্ছতা প্রকাশ করা একান্তভাবেই কাম্য। এক বা দু'জনের জন্য সরকারের ভাবমূর্তির ওপর কালিমালেপন কাম্য হতে পারে না। শেখ হাসিনার সরকার দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যা ব্যতিক্রমী। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ করেও তারা নতুন নজির গড়তে পারেন। এ প্রক্রিয়ায় ভুল হিসাব প্রদান কিংবা দায়িত্ব পালনকালে সম্পদের অস্বাভাবিক স্ফীতি ঘটার কারণে কারও বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে জনসাধারণ তাকে স্বাগত জানাবে এবং সার্বিকভাবে তা সরকারের জনপ্রিয়তাই বাড়াবে।
 

No comments

Powered by Blogger.