'বাচ্চু রাজাকার' পালিয়ে ভারতে, গন্তব্য পাকিস্তান

বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত মাওলানা আবুল কালাম আযাদ পাকিস্তানে পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে পালিয়ে ভারতে চলে গেছেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব। তাঁকে পালাতে সহযোগিতা করার অভিযোগে র‌্যাব তাঁর দুই ছেলেসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।


ওই চারজন হলেন আবুল কালাম আযাদের ছোট ছেলে আবুল কাশেম মুহাম্মদ মুশফিক বিল্লাহ ওরফে জিহাদ (৩৪), বড় ছেলে শাহ মোহাম্মদ ফয়সাল আযাদ (৩৬), শ্যালক কাজী এহেতাসামুল হক লিটন ও বন্ধু আবুল কাশেম আজাদ।
র‌্যাব জানায়, একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অন্যতম আসামি আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে গত ৩ এপ্রিল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য তাঁর বাসাসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে তাঁকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি এবং অভিযান জোরদার করা হয়। একপর্যায়ে গোয়েন্দা সূত্রে র‌্যাব জানতে পারে, বাচ্চু মিয়া পাকিস্তানে পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে গত ৩০ মার্চ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করার লক্ষ্যে হিলি স্থলবন্দর এলাকায় যান এবং একটি হোটেলে অবস্থান নেন। এরপর ২ এপ্রিল তিনি গোপনে হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যান। গোপনে দেশত্যাগে সহায়তা করেন তাঁর দুই ছেলে ও শ্যালকসহ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০-এর সদস্যরা গতকাল সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর সূত্রাপুরের ধোলাইখাল এলাকা থেকে মাওলানা আবুল কালাম আযাদের ছোট ছেলে আবুল কাশেম মুহাম্মদ মুশফিক বিল্লাহ ওরফে জিহাদ, শ্যালক কাজী এহেতাসামুল হক লিটনকে গ্রেপ্তার করেন। আযাদের বড় ছেলে শাহ মোহাম্মদ ফয়সাল আযাদকে সূত্রাপুরের লোহারপুল-সংলগ্ন তাঁর মামাশ্বশুর-বাড়ির এলাকা থেকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আটক করা হয়। তাঁদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় জিহাদ নিজেদের মাইক্রোবাসের পেছনের সিটের নিচে তাঁর বাবা আবুল কালাম আযাদকে শুইয়ে নিয়ে আগারগাঁওয়ে তাঁদের পারিবারিক বন্ধু ড. ইউসুফের (৪৫) বাসায় যান। ১০-১৫ মিনিট ওই বাসায় অবস্থানের পর সেখানে গাড়ি বদল করে ড. ইউসুফের মাইক্রোবাসের পেছনের সিটের নিচে শুইয়ে আবুল কালাম আযাদকে নিয়ে যাওয়া হয় দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের উদ্দেশে। রাত সাড়ে ৩টায় তাঁরা হিলিতে বাচ্চু মিয়ার বন্ধু আবুল কাশেম আজাদের হোটেল 'ক্যাপিলা'য় পেঁৗছান। ২ এপ্রিল পর্যন্ত আযাদ হিলি সীমান্ত থেকে এসএমএসের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। ৩ এপ্রিল ভারত থেকে মোবাইল ফোনে শ্যালক কাজী এহেতাসামুল হক লিটনের কাছে পরিবারের খোঁজখবর নেন।
হোটেল ক্যাপিলার মালিক আবুল কাশেম আযাদকে গতকাল সন্ধ্যায় হিলি সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। কাশেম সেখানকার সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলে র‌্যাব জানায়। এ ছাড়া আবুল কালাম আযাদের বন্ধু ড. ইউসুফ পলাতক। তাঁকে আটকের চেষ্টা চলছে।
দুই ছেলে ও শ্যালককে হাজির চেয়ে পরিবারের রিট : আবুল কালাম আযাদের দুই ছেলে ও এক শ্যালককে অবৈধভাবে আটক রাখা হয়েছে বলে দাবি করে তাঁদের হাইকোর্টে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে রিট করেছেন আযাদের মেয়ে সামানিয়া জান্নাতি। বিচারপতি আবদুল আউয়াল ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার এ রিট আবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম গতকাল বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চে আবেদনের শুনানি করতে গেলে আদালত শুনানি গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন। আদালত বলেন, এ ধরনের মামলা শুনানির এখতিয়ার তাঁদের নেই। এরপর ব্যারিস্টার অসীম আবেদনটি নিয়ে যান বিচারপতি আবদুল আউয়াল ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চে। এ আদালত আজ শুনানির দিন ধার্য করেন।

No comments

Powered by Blogger.