সুযোগ ও সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে হবে-ঢাকা-কলম্বো সহযোগিতা

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের তিন দিনের ঢাকা সফরকালে দুই দেশের মধ্যে যেসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সহযোগিতার সম্পর্ক সৃষ্টি হতে পারে।


কারিগরি শিক্ষা, সেবিকা প্রশিক্ষণ, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিনিময়, কৃষি গবেষণা, মৎস্য ও পশুসম্পদ বিষয়ে গবেষণা, রপ্তানি উন্নয়নসংক্রান্ত সহযোগিতা—এসব বিষয়ে মোট পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের মধ্যকার আনুষ্ঠানিক বৈঠকে খাদ্যনিরাপত্তা, জাহাজ চলাচল ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। দুই নেতার একান্ত আলাপে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ও গুরুত্ব পেয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্যপদে বাংলাদেশের প্রার্থিতার প্রতি শ্রীলঙ্কার সমর্থনের বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাসও পাওয়া গেছে দেশটির পক্ষ থেকে।
সবকিছু মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের এই ঢাকা সফরকে ঢাকা-কলম্বো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখা যায়। যেসব বিষয়ে সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে উন্নয়নের সুযোগ ও সম্ভাবনার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার থেকে উভয় দেশই এখনো অনেক দূরে রয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল দুই কোটি ৩৭ লাখ ডলার, আর বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার রপ্তানির পরিমাণ ছিল দুই কোটি ২৬ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এই হিসাব যথাক্রমে এক কোটি ৩৮ লাখ ও এক কোটি ২৮ লাখ ডলার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ সন্তোষজনক নয় আর শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পরিমাণটা উল্লেখ করার মতো নয়।
কিন্তু সম্ভাবনা রয়েছে ব্যাপক। এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সেসব সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়েছে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সম্মানে মঙ্গলবারের মধ্যাহ্নভোজ সভায়। অবকাঠামো, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের জন্য শ্রীলঙ্কার উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। যৌথ মালিকানায় নারকেল তেলকল, বস্ত্র, চামড়া, জুতো, প্রকৌশল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ। সংগঠনটি বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে একটি যৌথ অর্থনৈতিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯৭১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার মোট বিনিয়োগের পরিমাণ মাত্র সাত কোটি মার্কিন ডলার।
দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যের এই নিষ্প্রভ চিত্রটি উজ্জ্বল হতে পারে প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের এই সফরকালে গৃহীত প্রস্তাবগুলোর সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে। অশুল্ক বাধা দূর করা, রপ্তানিপণ্যে বৈচিত্র্য আনাসহ নানা নতুন উদ্যোগ নিতে রাজি হয়েছে দুই দেশ। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা, সেবিকা প্রশিক্ষণ, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিনিময়, কৃষি গবেষণা, মৎস্য ও পশুসম্পদ বিষয়ে গবেষণা ইত্যাদি বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিপুল সুযোগ ও সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে উভয় দেশের জনগণ ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারে। আমাদের পক্ষ থেকে সক্রিয় উদ্যোগের যেন ঘাটতি না থাকে।

No comments

Powered by Blogger.