মাঠ ছাড়ছে না বিএনপি বহিষ্কারের ঝুঁকি নিতেও রাজি প্রার্থীরা by মোশাররফ বাবলু ও শফিক সাফি

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মাঠ ছাড়ছে না প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যেকোনোভাবেই হোক তারা নির্বাচনী মাঠে থাকবে। এ ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিসিসি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে কৌশলী ভূমিকায় এগুচ্ছেন দলটির আগ্রহী প্রার্থীরা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের শরিক দল থেকে কারা প্রার্থী হচ্ছেন এবং বিএনপি ও চারদলীয় ঐক্যজোটের শরিক দলের কারা প্রার্থী হতে চান, তা দেখেই সিদ্ধান্ত নিতে চায় বিএনপি হাইকমান্ড। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য গতকাল সোমবার রাতে সিঙ্গাপুর গেছেন। তিনি দেশে ফেরার পর দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে ডিসিসি নির্বাচনের ব্যাপারে বৈঠক করবেন।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ হয়ে যাওয়ায় হেভিওয়েট প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। এ অবস্থায় দলের মধ্যম সারির নেতাদের মধ্য থেকে অনেকেই ডিসিসি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন।
দলীয় সূত্র জানায়, বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হিসেবে কাদের সমর্থন করা যায় তার একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেছে বিএনপি। সে অনুযায়ী দলের দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে। নির্বাচনের ব্যাপারে সরাসরি কিছু না বলে মাঠে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একাধিক সাবেক কাউন্সিলর জানিয়েছেন, দল নির্বাচনে যাক বা না যাক, দলীয় নেতারা নির্বাচনের মাঠে থাকবেন। সরকারি দলকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দিতে রাজি নন তারা। দল থেকে বহিষ্কৃত বা স্বেচ্ছায় পদ ছেড়ে দিয়ে হলেও অনেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে।
বিএনপির একাধিক নেতা মন্তব্য করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে সরকারকে ১০ জুনের আলটিমেটাম দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল। গতকাল নির্বাচন কমিশন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে দিয়েছে। ২৪ মে ওই নির্বাচন। এ অবস্থায় আলটিমেটামের কারণে দলটি না পারছে তাৎক্ষণিক আন্দোলনে যেতে, না পারছে নির্বাচনে সরাসরি অংশ নিতে।
ডিসিসি নির্বাচন প্রসঙ্গে গতকাল দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা বলেন, 'রবিবার দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় যেসব বক্তব্য উঠে এসেছে তাতে অধিকাংশ নেতা ডিসিসি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের সিদ্ধান্ত আসেনি। তাঁরা বলেন, বিএনপি হয়তো সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে নির্বাচন থেকে দূরেও থাকবে না। মোটকথা, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যেভাবেই হোক নির্বাচনী মাঠে থাকবে বিএনপি।'
নির্বাচনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না থাকায় কাউন্সিলর কিংবা মেয়র পদে বিএনপির কেউ প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামেননি। তবে গতকাল তফসিল ঘোষণার পর অনেকেই সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সাবেক কাউন্সিলন ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী আবুল বাশার বলেন, 'আমি মেয়র ও কাউন্সিলর দুটি পদেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। যে নির্বাচনই হোক আমি করব। খালি মাঠ সরকারি দলকে ছেড়ে দেব না।'
সাবেক কাউন্সিলর মকবুল আহমেদ আখন্দ বলেন, 'দল নির্বাচনে অংশ না নিলেও আমি লড়ব। বহিষ্কার বা স্বেচ্ছায় পদ ছেড়ে দিয়ে হলেও নির্বাচনের পক্ষে আমি।'
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিরপুরের সাবেক এক কাউন্সিলর বলেন, 'মহানগরের যৌথ সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নেতারা আমাদের মৌখিকভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে বলেছেন। এমনকি রবিবার জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায়ও ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।'
সিনিয়র নেতারা যা বলেন : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) বিভক্ত করার বিরুদ্ধে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ডিসিসি নির্বাচন জাতীয় নয়, স্থানীয় সরকারের ব্যাপার। এ নির্বাচনে আমাদের ভূমিকা কি হবে এখনই বলা যাবে না।'
আপনি চমকের কথা বলেছেন। কী ধরনের চমক আসতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বলে দিলে তো আর চমক থাকল না।'
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা বলেন, এই নির্বাচনে বিএনপি যাচ্ছে কি না এখনো আলোচনা হয়নি। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে উদ্দেশ্যে ঢাকাকে বিভক্ত করেছে তা সফল হবে না।
মহানগরের সদস্য সচিব আবদুস সালাম বলেন, 'সরকার কৌশলে আইন করে আমাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়। কিন্তু আমরা তাদের সে সুযোগ দেব না।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাউকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে দলের ওপর। তবে কেউ নিজ থেকে প্রচার চালাতেই পারেন।
বিএনপির সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা : ঢাকা মহানগর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা এক নেতা জানান, তিনটি নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ায় ঢাকা মহানগরে এখন মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৯৩টি। তবে নির্বাচন হবে ৯০টিতে। এসব ওয়ার্ডে কাদের সমর্থন দেওয়া যায়- এ নিয়ে খসড়া তালিকা করেছে বিএনপি। উল্লেখ্যযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন- কাজী আল ইমাম আসাদ (ওয়ার্ড নম্বর ২), হাজী রফিকুল ইসলাম (৪), মজিবুল বাসিত আঞ্জু (৬), ফেরদৌসি আহমেদ মিষ্টি (৮), মনোয়ার হোসেন ডিপজল (৯), মাসুদ খান (১০), শামীম পারভেজ (১১), রুনা আক্তার (১২), কাজী হযরত আলী (১৭), আবদুল আলি নকি (১৯), আবুল কালাম আজাদ (২০), আক্কেল আলী (২২), এনামুল হক (২৫), মামুনুর রহমান ফজু (২৬), গোলাম হোসেন (২৭), শামছুল হুদা (২৯), এডিএম বাদশা (৩০), মকবুল আহমেদ আকন্দ (৩২), হারুনুর রশিদ (৩৩), সাজ্জাদ জহির (৩৫), নুরুল আমিন (৩৭), আলিমুর জামান (৪০), আবু বকর সিদ্দিক (৪১), আরজুদা বাশার লাকি (৪৪), আতিকুল ইসলাম নকি (৪৫), জসিম উদ্দিন মাহমুদ (৪৭), আবুল খায়ের (৪৯), সিরাজুল ইসলাম (৫০), আবদুল লতিফ (৫১), জাহাঙ্গীর হোসেন (৫২), আরিফুল ইসলাম (৫৩), এমএ মজিদ (৫৫) ও মজিবুর রহমান মজিব (৫৮)। এ ছাড়া ৬০ থেকে ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছেন যথাক্রমে মোশাররফ হোসেন খোকন, আলতাফ হোসেন, মীর আশরাফ আলী, মিসেস মোর্শেদা, আনোয়ার পারভেজ বাদল, ৬৫ নম্বরে হাজী শহীদুল ইসলাম, হুমায়ূন কবির, আজিজুল্লাহ, মো. রফিক, মো. মোহন, ৭১ থেকে ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে যথাক্রমে একাব্বর হোসেন মোল্লা, সারিকা সরকার, এমএ ছামাদ, কাজী আবুল বাশার, মোজাম্মেল হক, মকবুল ইসলাম খান টিপু ও লিয়াকত জুয়েল; ৮০ নম্বরে আবদুস শাহেদ মন্টু, ৮১-তে হাজী লিয়াকত আলী, ৮৪-তে আতিকুল্লাহ, ৮৫-তে বাদল সরকার, ৮৮-তে হাজী আবদুল রাশেদ, ৮৯-তে মীর হোসেন মীরু এবং ৯০-তে রয়েছেন মোজাম্মেল হোসেন।
৭০ নম্বর ওয়ার্ডে গতবার কাউন্সিলর ছিলেন হাজী আহমেদ হোসেন। তিনি মারা যাওয়ায় সেখানে নতুন প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে। একই অবস্থা ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে। ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর চৌধুরী আলম প্রায় দুই বছর নিখোঁজ, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে মির্জা খোকন দেশে নেই। আর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল এম এ কাইয়ূম এবার উত্তরের মেয়র প্রার্থী।

No comments

Powered by Blogger.