ডিসিসি নির্বাচন ২৪ মে

দীর্ঘ ১০ বছর পর আগামী ২৪ মে তৃতীয়বারের মতো ভিন্ন আদলে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে। একক সিটি করপোরেশন হিসেবে নয়, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ নামে একসঙ্গে দুই সিটি করপোরেশনে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।


গতকাল সোমবার ভোটগ্রহণের এই তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন ডিসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। এর আগে একক ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছিল ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল। সে নির্বাচনে মেয়র পদে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত কোনো প্রার্থী অংশ নেননি। এবারও প্রধান বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি অনিশ্চিত।
গতকাল নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ এ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুসারে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আগামী ১৯ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ২২ ও ২৩ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২ মে।
গত ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নিয়োগ পাওয়ার পর কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশনের জন্য এটিই হবে বড় ধরনের প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, আবদুল মোবারক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, মো. শাহনেওয়াজ, ইসি সচিব মোহাম্মদ সাদিক ও সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি জানান, এ নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকবেন ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ। ২০০২ সালের ডিসিসি নির্বাচনেও এ কর্মকর্তা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন।
আর ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক খোন্দকার মিজানুর রহমান। এ ছাড়া ঢাকা উত্তরে ১২ জন এবং ঢাকা দক্ষিণে ১৯ জন জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন।
সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সম্ভাব্য প্রার্থীসহ সবাইকে নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এর অন্যথা হলে কমিশন আইন প্রয়োগে কঠোর হবে।
সিইসি আরো বলেন, 'এটি একটি বড় নির্বাচন। আমরা আমাদের প্রতিটি কাজকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। কোনোটিই ছোট করে দেখছি না। গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন ম্যানেজ করা বড় ব্যাপার। এজন্য সবার সহযোগিতা দরকার। যদিও এ নির্বাচন অরাজনৈতিক, তবুও আমরা এ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চাই।'
নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, অবিভক্ত ডিসিসির সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল । ২০০৭ সালে এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি বেশ কয়েকবার নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়। শামসুল হুদা সে সময় বলেন, 'ঢাকায় কুফা লেগে গেছে। আমরা তো কথা দিয়ে কথা রাখতে পারছি না।'
এরপর প্রধান বিরোধীদলসহ বিভিন্ন মহলের বিরোধিতা সত্ত্বেও গত ২৯ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন সংশোধনের বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন ভেঙে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ নামে দুটি সিটি করপোরেশন করা হয়। গত ১ ডিসেম্বর সংশোধিত এ আইনের গেজেট প্রকাশের পর গত ৪ ডিসেম্বর দুই করপোরেশনের ওয়ার্ডের তালিকা প্রকাশ করে প্রজ্ঞাপনও জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সরকার এ দুই সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিয়োগের কাজও শেষ করে। নির্বাচন কমিশনকে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে অনুরোধ জানানো হয়, আইন অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন তিনটি কারণে এ নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়।
গতকাল সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ আরো জানান, দুটি সিটি করপোরেশনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫২ হাজার ৯২৬। সর্বমোট ৯২টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ঢাকা উত্তরে ১২টি, দক্ষিণে ১৯টি নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। সম্ভাব্য মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা এক হাজার ৯৫৭টি ও ভোটকক্ষ ১০ হাজার ২৫৬টি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ডে ২১ লাখ ৭২ হাজার ৪২৭ জন ভোটার রয়েছেন। এতে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৬০৪ জন। মহিলা ভোটারের সংখ্যা ১০ লাখ ২৭ হাজার ৮২৩ জন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৫৬টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১৬ লাখ ৮০ হাজার ৪৯৯ জন। পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ১৬ হাজার ৮৭৮ জন, মহিলা ভোটার সাত লাখ ৬৩ হাজার ৬২১ জন।
ঢাকা উত্তরে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা এক হাজার ৮৪টি ও ভোটকক্ষের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৮১৭টি। দক্ষিণের ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৮৭৩টি ও ভোটকক্ষের সংখ্যা চার হাজার ৪৩৯টি।
উত্তরের ভোটার সংখ্যা দক্ষিণের চেয়ে দ্বিগুণ

No comments

Powered by Blogger.