বিরোধী দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত-সংবিধান সংশোধনে আলোচনা

সংবিধানে সংশোধনী আনতে হলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই তা করা উচিত। কারণ, দেশটা গণতান্ত্রিক, একটি নির্বাচিত জাতীয় সংসদও রয়েছে; রয়েছে সেই সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত বিশেষ সংসদীয় কমিটির উদ্যোগ সেদিক থেকে যথার্থই বটে। আগামীকাল রোববার


থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত এই কমিটি জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সাবেক প্রধান বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্দেশ্য, সবাই মিলে সংবিধান সংশোধনের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা। শুধু জামায়াতে ইসলামী ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের কাছে আলোচনা বৈঠকের আমন্ত্রণপত্র ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে। জামায়াতকে আমন্ত্রণ না জানানোর কারণ হিসেবে কমিটির মুখপাত্র সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, দলটির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অভিযোগ থাকায় তাদের বৈঠকে ডাকা হচ্ছে না। চারদলীয় জোটের প্রধান শরিক ও সংসদে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতারা ইতিমধ্যে একাধিক বৈঠকে বসেছিলেন; কিন্তু তাঁরা আলোচনায় অংশ নেবেন কি না, সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো ঘোষণা করেননি। আজ শনিবার আবারও তাঁদের বৈঠকে বসার কথা। আজ যদি তাঁরা আলোচনায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তে পৌঁছান, তবে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবনা তৈরির কাজটির গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চয়ই বাড়বে।
কিন্তু সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে যে সম্পর্ক লক্ষ করা যাচ্ছে, তাতে পরস্পরকে সহযোগিতা করার মনোভাবের প্রতিফলন নেই। এমনকি এক পক্ষ অন্য পক্ষের বক্তব্য শুনবে—এমন ধৈর্য-সহিষ্ণুতারও লক্ষণ মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি আলোচনায় যোগ দিয়ে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবনা তৈরির প্রক্রিয়াটিকে সহযোগিতা করবে—এমন ভরসা করা বাস্তবে বেশ কঠিন। রাজনীতির মাঠে যখন তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক লাভালাভের হিসাব-নিকাশই রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ ও কথাবার্তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে, তখন আওয়ামী লীগের সংবিধান সংশোধনীর প্রক্রিয়াকে গ্রহণযোগ্যতা দিতে বিএনপি এগিয়ে আসবে—এটা বোধ হয় ভাবা যায় না। সংবিধান সংশোধনে সংসদীয় কমিটিতে বিএনপি থেকে সদস্য নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল সরকার, কিন্তু বিএনপি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি; কমিটিতে নিজেদের কোনো প্রতিনিধি পাঠায়নি।
কিন্তু জাতীয়ভাবে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানের বড় ধরনের সংশোধনী প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়া হওয়া উচিত নয়। দলীয় রাজনৈতিক লাভালাভের বিষয়টি একটু দূরে সরিয়ে রাখলে এই উপলব্ধি অবশ্যই আসবে যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির এখন এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া অবশ্যকর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংসদীয় কমিটির আলোচনা বৈঠকে যোগ দিয়ে তাদের সব বক্তব্য বিশদভাবে তুলে ধরা উচিত; সংশোধনের প্রস্তাবনায় তাঁদের আপত্তি করার কিছু থাকলে সেটাও জানানো উচিত জোরালো যুক্তিসহকারে, বলিষ্ঠ ভাষায়। প্রধান বিরোধী দল হিসেবে নিজের দায়িত্ব ও ভূমিকা এভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়া বিএনপির উচিত নয়।
আমরা আশা করব, বিএনপির আজকের দলীয় সভায় বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করা হবে এবং সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ সংসদীয় কমিটির ডাকা আলোচনা বৈঠকে অংশ নেওয়ার পক্ষে দলটি সিদ্ধান্ত নেবে।

No comments

Powered by Blogger.