উৎসব-নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলের ১২৫ বছর উদ্যাপন by রফিউর রাব্বি

১৮৮৫ সালে সরকারি উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ শহরে সর্বপ্রথম ইংরেজি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় স্কুলটি বর্তমান আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের কাছাকাছি ছিল। ১৮৮৬ সালের মার্চ মাস থেকে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলের দায়িত্বভার পৌর কমিশনারদের ওপর ন্যস্ত হয়।

১৮৮৮ সালে স্কুলটি পরিচালনার জন্য দুজন কমিশনার, চারজন শিক্ষানুরাগী ও মুনসেফকে নিয়ে একটি এডুকেশন কমিটি গঠন করা হয়। ১৯০৫ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নিজস্ব ভূমি বর্তমান স্থানে স্কুলটি স্থানান্তরিত করা হয়। শুরুতে এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মহিম গাঙ্গুলী।
১৮৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলই ছিল এই অঞ্চলের একমাত্র এনট্রান্স স্কুল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এ স্কুল থেকে প্রথম এনট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন শচীভূষণ দত্ত। পরবর্তীকালে সুধীর চন্দ্র মজুমদার, করুণা কেতন সেন, সুনীল গুহ, সুভাষ ভট্টাচার্য এনট্রান্স পরীক্ষায় মেধাতালিকায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে ভারতবর্ষে স্কুলটির সুনাম গড়ে তোলেন। পরবর্তী সময়ে করুণা কেতন সেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিভিন্ন সময়ে এ স্কুলে এসেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষ বসু, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা, জ্যোতি বসুসহ অনেকে। এ স্কুলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নারায়ণগঞ্জের দীর্ঘ ইতিহাস। এ স্কুলের কৃতী ও খ্যাতিমান ছাত্রদের তালিকায় রয়েছেন চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম গভর্নর নূরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল সিদ্দিকী, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা জে. (অব.) তারেক সিদ্দিকী, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ রেহানার স্বামী শফিক সিদ্দিকী, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বর্তমান প্রধান এয়ার মার্শাল শাহ এম জিয়াউর রহমান, সাবেক সচিব ও পিএসসির সদস্য নুরুন্নবীসহ অনেকেই।
সাহিত্য-সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার ক্ষেত্রে এ স্কুলের যথেষ্ট সুনাম ছিল। দেশে ও দেশের বাইরে এ স্কুলের ছাত্ররা ক্রীড়া ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এখন পর্যন্ত পালন করে আসছে। আশির দশকে এ স্কুলের খুদে ছাত্ররা কয়েকবার পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে খেলতে গিয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলের ফুটবল দলের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। তখন কলকাতা ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বাংলা ও ইংরেজি সংবাদপত্রে স্কুলের ফুটবল দলটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরে নব্বই দশকেও এ স্কুলের ফুটবল, হকি, ক্রিকেট ও দাবা খেলোয়াড়েরা আন্তস্কুল প্রতিযোগিতায় জাতীয়ভাবে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল। পরবর্তী সময়ও এ ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থেকেছে।
আজ এ স্কুলটি ১২৫ বছর অতিক্রম করেছে। ১২৫ বছর মহাকালের হিসেবে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হলেও জীবনপ্রবাহে এর পরিসীমা নিতান্তই কম নয়। চারটি প্রজন্ম এ সময়ে এই স্কুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ছড়িয়ে পড়েছে দেশ ও দেশের বাইরে।
২২ ও ২৩ এপ্রিল ২০১১ আমাদের প্রিয় স্কুলটির ১২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ উৎসবটি উদ্বোধন করবেন। সমাপনী দিনে থাকছেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে দেশ ও দেশের বাইরের অনেকেই নাম নিবন্ধন করেছেন। ইতিমধ্যে এ উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য দেশের বাইরে থেকেও অনেকে দেশে চলে এসেছেন। কয়েক প্রজন্মের সাবেক ছাত্রদের প্রীতি সম্মিলন ও মিলনমেলা ঘটবে স্কুল প্রাঙ্গণে। এ উৎসব-অনুষ্ঠান আজকের ছাত্রদের মধ্যে আরও প্রাণসঞ্চার করবে। এ অনুষ্ঠানের দ্যুতি ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে—এটাই আমাদের সবার প্রত্যাশা।
রফিউর রাব্বি

No comments

Powered by Blogger.