প্রতিপক্ষ ভারত, স্বপ্ন আজ... by সাইদুজ্জামান

একসময় বলা হতো শুধু মাশরাফি বিন মর্তুজাকে নিয়ে। এশিয়া কাপে তাঁর সঙ্গে যোগ হয়ে গেছে পুরো বাংলাদেশ দল। ভারতের বিপক্ষে দারুণ কিছু ঘটিয়ে ফেলে বাংলাদেশ- গত কদিনের ঢালাও এ ফিসফাসের সঙ্গে কিন্তু নূ্যনতম মিল নেই পরিসংখ্যানের। ২৩ ম্যাচের ২১টিতেই হারা দল কিনা স্বপ্ন দেখছে! তবে ক্রিকেটের পরিসংখ্যান তো গাধা।

বাংলাদেশের বিপক্ষে চার ম্যাচেই দুটা সেঞ্চুরি করে সাফল্যের আকাশে বিরাট কোহলি। অথচ দশবারের চেষ্টাতেও তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। কোহলির ১৫২-এর বিপরীতে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেন্ডুলকারের ওয়ানডে গড় তো রীতিমতো বিস্ময়কর, ৪২.৪৪, যা কিনা তাঁর ক্যারিয়ার গড়ের (৪৪.৬৪) চেয়েও কম!
আপাতত তোলা থাকুক পরিসংখ্যান। মাঠের, বিশেষ করে ম্যাচের দিনের নৈপুণ্যের উত্থান-পতনটাই আসল। কোহলি কেন, ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডারে বীরেন্দর শেবাগের উপস্থিতিতেও বাংলাদেশ দলের কাছে সবচেয়ে সমীহ আদায়কারী ব্যাটসম্যানটির নাম ছিল গৌতম গম্ভীর। ভারত ম্যাচে যাঁর হাত বল দিয়ে আশার আলো খোঁজেন অধিনায়ক, সেই মাশরাফিও ভারতীয় ব্যাটিং তারকাদের তালিকায় ওপরের দিকে রাখেন এ বাঁহাতি ওপেনারকে। মাঠে দাঁড়িয়ে যে ব্যাটসম্যানকে ১০ ইনিংসে ২টা সেঞ্চুরি আর ৩টা ফিফটি করতে দেখেছেন, তাঁকে সমীহ করবেন না কোন বোলার? এক দিন আগে সম্মিলিতভাবে ভারতীয় টপ অর্ডার ভীতির সঙ্গে মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং সুরেশ রায়নার কথা 'স্মরণ' করেছিলেন মাহমুদ উল্লাহ।
তাই আজকের ম্যাচে শেবাগের অনুপস্থিতিকে স্বস্তির কোনো উপলক্ষই মনে করছেন না মুশফিক, 'শেবাগ অবশ্যই অনেক উঁচুমানের ব্যাটসম্যান। তবে একই সঙ্গে ভারতের এ দলটার ব্যাটিংও খুব শক্তিশালী। এদের বিপক্ষে বোলিং করা খুবই কঠিন।'
অতীত এবং ফর্ম মিলিয়ে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের প্রায় সব নামই বাংলাদেশ দলের ম্যাচ পরিকল্পনার অনেকটা জুড়ে। তবে ফর্ম হারিয়ে ফেললেও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকটা টেন্ডুলকারের নামে উৎসর্গকৃত। কাল অনুশীলনে ম্যাসাজ টেবিলে শুতে গিয়ে পড়ে যেতেই ভারতীয় মিডিয়ার হাহাকার, 'কিছু হলো না তো!' টেন্ডুলকারের হাসিই আশ্বাস হয়ে জানাল যে না, কিছু হয়নি। নেটে স্থানীয় এক পেসারের বলে অনায়াস কাভার ড্রাইভ করা দেখে তাঁদের স্বস্তি, 'নাহ্, এবার আর শর্ট কাভারে ক্যাচ-ট্যাচ দেবেন না বস (টেন্ডুলকার)।' কিন্তু অনুশীলনে যত হাস্যোজ্জ্বলই থাকুন না কেন, ভেতরে আসা বলে পুরনো অস্বস্তি কিংবা অধুনা শর্ট কাভার ফিল্ডারকে নিয়মিত খুঁজে পাওয়া টেন্ডুলকার আজই বহু প্রতীক্ষিত সেঞ্চুরির 'সেঞ্চুরি' করে ফেলবেন- এ বিশ্বাসের সঙ্গে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ দারুণ কিছু ঘটিয়ে ফেলার সম্ভাব্যতা সংক্রান্ত আলোচনার কোথায় যেন মিল! ২৩ ম্যাচের মাত্র ২টা জেতা দল আজ বাজিমাত করে দেবে বলে বাজি ধরাটা আপাতত দেশাত্মবোধের প্রামাণ্য দলিলই। তেমনি এক বছরের প্রতীক্ষার হতাশা এবং ক্লান্তির চেয়েও প্রবলতর চাপ সামলে আজই অনন্য সে ল্যান্ডমার্ক ছুঁয়ে ফেলার নিশ্চয়তা দিতে পারেন একনিষ্ঠ শচীন সমর্থকই। নইলে ভারত থেকে আগত সাংবাদিকরা কেন বারবার জানতে চাইবেন, 'বল ভেতরে আনতে পারে, এমন বোলার আছে তোমাদের? তোমাদের ক্যাপ্টেনও কি শর্ট কাভারে ফিল্ডার দাঁড় করাবে?'
ডিজিটাল যুগে ক্রিকেটারের শক্তি কিংবা দুর্বলতা লুকিয়ে রাখার কোনো উপায় নেই। তাই নিশ্চিত থাকুন, টেন্ডুলকারকে থামানোর চিরায়ত এ মন্ত্র জপবে বাংলাদেশও। সঙ্গে টুকটাক 'কথাবার্তা' বলে তাঁর স্নায়ুচাপ বাড়ানোর চর্চাও চলবে বাংলাদেশ দলের পক্ষ থেকে। যদিও ভারতের এ ব্যাটিং জিনিয়াসের প্রতি প্রভূত শ্রদ্ধাশীল মুশফিক, 'আমি প্রথম দিনই বলেছি। আমি চাই এবং আশা করি এই টুর্নামেন্টেই তাঁর একশতম একশটা পূরণ করুক।' তবে, 'সেটা যেন আমাদের বিপক্ষে না হয়।' উইকেট যে রকম দেখেছেন, তাতে সম্ভবত পাকিস্তান ম্যাচের একাদশ নিয়েই ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। সকালের অনুশীলনেই মুশফিক দেখেছেন, 'উইকেটে ঘাস আছে।' তাই আজও একাদশে তৃতীয় পেসারের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'রাজিব (শাহাদাত হোসেন) আক্রমণাত্মক বোলার। ওয়ানডেতে অন্তত এ রকম একজন বোলার দরকার।' শুরুতে মাশরাফি-শফিউল ইসলামরা রানের চাকা আটকে রাখার পাশাপাশি যদি ব্রেক থ্রু এনে দিতে পারেন, তাহলে প্রথম চেঞ্জে শাহাদাতের আক্রমণাত্মক বোলিং দিয়ে ভারতের হেভিওয়েট ব্যাটিং লাইন এলোমেলো করে দেওয়াটাই বাংলাদেশের পরিকল্পনা। স্বপ্নও বলতে পারেন!
বিনয় কুমার নিজে ভারতীয় বোলিং আক্রমণের সদস্য। তাই বিপক্ষ অধিনায়কের এ মূল্যায়ন মানেন কী করে তিনি? ভারতীয় ব্যাটিং শক্তির ভূয়সী প্রশংসাকারী বাংলাদেশ অধিনায়কের মতে, 'পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার তুলনায় ভারতের বোলিং অনেক দুর্বল।' যা মুশফিকুর রহিমের ব্যক্তিগত অভিমত জানিয়ে ভিন্ন মতই দিয়েছেন ভারতীয় পেসার বিনয় কুমার। তবে এশিয়ার তিন হেভিওয়েটের বোলিং শক্তি বিশ্লেষণের পর গণভোটে বিনয় কুমারের বিপক্ষে ল্যান্ডস্লাইড জয় হয়েছে মুশফিকের! কিন্তু দুর্বল বোলিং পেয়ে ব্যাটিং স্বর্গের সবটুকু সুখের আস্বাদ নিতে পারবেন তো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা? নাকি আজকের ম্যাচটাও হয়ে থাকবে এক-দুজনের নৈপুণ্যের সঙ্গে অন্যদের তাল মেলাতে না পারার হতাশা হয়ে? মুশফিক আশাবাদী, 'গত ম্যাচে সাকিব এবং নাসির ভালো খেলেছে। ওদের সঙ্গে আমি কিংবা রিয়াদ ভাই (মাহমুদ উল্লাহ) যদি ভালো খেলতে পারতাম, তাহলে ম্যাচের ফল অন্য রকম হতো।'
যথারীতি প্রথম ম্যাচের পুনরাবৃত্তি প্রত্যাশা করছেন না মুশফিক। সঙ্গে চেষ্টা তো আছেই। চেষ্টার সুফল প্রত্যাশায় মিলে গেলে পরে? জোরজার করেও বাংলাদেশ অধিনায়কের মুখ থেকে 'জিতবই' কথাটা বের করা যায়নি, 'হার-জিতটা বড় কথা না। আমি আগেই বলেছি, বড় দলের বিপক্ষে নৈপুণ্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই সবচেয়ে জরুরি।'
এ 'ধারাবাহিকতা'র পুরোটাজুড়ে ব্যাটসম্যানরা। ভারত যত রানই করুক, এমন উইকেটে ব্যাটিংটা যেন ঠিকঠাক থাকে- আজ ম্যাচ শুরুর মুহূর্তের দলীয় প্রার্থনা এটাই।

No comments

Powered by Blogger.