জনস্বাস্থ্য-আমরা কি অতিরিক্ত ওষুধ খাচ্ছি? by মশিউল আলম

যে দেশে মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬০ শতাংশ এত দরিদ্র যে অসুস্থ হলে ওষুধ কিনতে পারে না, সে দেশে এমন প্রশ্ন অদ্ভুত শোনাতে পারে: আমরা কি অতিরিক্ত ওষুধ খাচ্ছি? কারও কারও কাছে অদ্ভুত মনে হলেও ওষুধ কেনার সামর্থ্য যাঁদের আছে, তাঁদের সবার জন্য প্রশ্নটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য এ বিষয়ে যাঁরা মোটামুটি ওয়াকিবহাল,

তাঁদের কাছে এটি কোনো প্রশ্ন নয়। তাঁদের ধারণা নিশ্চিত: বাংলাদেশের মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করছে। যেকোনো চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, পরিসংখ্যান ছাড়াই তিনি সায় দিয়ে মাথা নাড়বেন। আর যদি জিজ্ঞাসা করেন, রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত, অপ্রয়োজনীয় ওষুধের নাম তিনি লেখেন কি না, উত্তরে তিনি হয়তো বলবেন: তিনি নিজে তা করেন না, অন্যদের কেউ কেউ করেন।
গত মাসের ২৫ তারিখে ঢাকায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) নামের একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘জনগণের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা, ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ, ব্যবহার ও জনসচেতনতা’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা বলেন, চিকিৎসকদের অনেকেই রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের নাম লেখার সময় নীতিমালা মানছেন না। তাঁরা অপ্রয়োজনীয় নানা ওষুধের নাম লেখেন। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও গবেষক সায়েদুর রহমান বললেন, দেশের মানুষ বছরে ছয় হাজার কোটি টাকার ওষুধ সেবন করে। এর অর্ধেকটাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত, অর্থাৎ তিন হাজার কোটি টাকার ওষুধ অপচয় করা হয়। এটা শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, এর স্বাস্থ্যগত ক্ষতির দিকটিও বিরাট। স্বাস্থ্যগত ক্ষতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শ্রমশক্তিতে, জাতীয় উৎপাদনব্যবস্থায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিটি দেশের জাতীয় ওষুধনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তিনটি মৌলিক বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপের পরামর্শ দিয়ে থাকে: ১. সর্বসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার আলোকে ওষুধের মূল্য নির্ধারণ ও তা সহজলভ্য করা, ২. ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং ৩. র‌্যাশনাল ইউজ অব ড্রাগ বা ওষুধের প্রয়োজনানুগ বা যুক্তিসংগত ব্যবহার নিশ্চিত করা। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ওষুধনীতি গ্রহণ করার পর থেকে প্রথম দুটি ক্ষেত্রে বেশ উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু তৃতীয়টি, অর্থাৎ ওষুধের প্রয়োজনানুগ ও সঠিক (র‌্যাশনাল) ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি; বরং এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রবণতাই বাড়ছে বলে গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা লক্ষ করছেন। এখানে বলা প্রয়োজন, র‌্যাশনাল ইউজ অব ড্রাগ বলতে শুধু প্রয়োজনীয় পরিমাণ ওষুধের ব্যবহার বোঝায় না, সঠিক ব্যবহারও বোঝায়। অর্থাৎ যে অসুখের জন্য যে ওষুধ যে মাত্রায় যত সময় ধরে সেবন করা প্রয়োজন, তা করাও ওষুধের র‌্যাশনাল ইউজের অন্তর্গত।
ওষুধের অতিরিক্ত ও বেঠিক ব্যবহারের মাত্রা নির্ধারণের কোনো ব্যবস্থা আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত নেই। আন্তর্জাতিক অনুশীলনের সঙ্গে তুলনামূলক বিচারে প্রতিটি ব্যবস্থাপত্রে গড়ে তিনটির বেশি ওষুধের ব্যবহারকে মনে করা হয় ‘স্ট্যাটিস্টিক্যালি সিগনিফিক্যান্ট’, অর্থাৎ সংখ্যাগত দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে এমন সম্ভাবনাই বেশি যে অধিকাংশ ব্যবস্থাপত্রে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় পরিসরে গবেষণা-জরিপ কখনো হয়নি; ১৯৯৪ সালে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো একটি সমীক্ষা চালিয়েছিলেন সায়েদুর রহমান (তখন তিনি ওই কলেজের শিক্ষক ছিলেন)। স্বেচ্ছাচয়িত দৈবচয়নের (র‌্যানডম সিলেকশন) ভিত্তিতে সংগৃহীত মোট ৫১৪টি ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) বিশ্লেষণ করে তিনি দেখেছেন, প্রতিটি ব্যবস্থাপত্রে নির্দেশিত ওষুধের গড় সংখ্যা ৩ দশমিক ১৩। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ওষুধ সেবনের পরামর্শ পাওয়া গেছে মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের ব্যবস্থাপত্রে (৩ দশমিক ৫)। শিশুবিশেষজ্ঞদের ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম (২ দশমিক ৩৮); কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শ সবচেয়ে বেশি। ৭২ দশমিক ২ শতাংশ শিশুবিশেষজ্ঞ অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দিয়েছেন। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের ব্যবস্থাপত্রেও অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শ বেশি—৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ। ওই গবেষণাপত্রে মন্তব্য করা হয়েছে, বেশিসংখ্যক ওষুধ সেবনের পরামর্শ থেকে সঠিকভাবে রোগনির্ণয়ে চিকিৎসকদের ব্যর্থতার আভাস-ইঙ্গিত মেলে। শিশুবিশেষজ্ঞ ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ প্রদানের প্রবণতা অপেক্ষাকৃত বেশি সম্ভবত এই কারণে যে, শিশু ও নারীদের মধ্যে সংক্রামক রোগের হার বেশি। বিশেষত, শিশুদের ক্ষেত্রে জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সংক্রমণের প্রবণতা থাকে বলে শিশুবিশেষজ্ঞরা বাড়তি ঝুঁকি না নিয়ে অবিলম্বে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। মা-বাবাদের পক্ষ থেকেও শিশুর দ্রুত আরোগ্যের আকাঙ্ক্ষা থাকে; এ জন্য তাঁদের চাপও শিশুবিশেষজ্ঞদের অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ভূমিকা রাখে বলে গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘জার্নাল অব হেলথ, পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রিশনে’ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রের তথ্য অনুযায়ী, চার বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ২৬ শতাংশকেই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করা হয়েছে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে। বলা হয়েছে, গড়ে ১১ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিৎসকদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, তাঁদের শতকরা ৬০ জন রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ব্যবস্থাপত্র দেন কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই, কেবল রোগের লক্ষণ দেখে ও বিবরণ শুনে। হেলথ ওয়াচের একটি প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মোট প্রায় ২০ হাজার মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ আছেন, যাঁরা নিজ নিজ কোম্পানির ওষুধ বিপণনে চিকিৎসকদের মন জয় করতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকেন। তাঁরা অতি উচ্চমাত্রায় ‘টার্গেট ওরিয়েন্টেড’। টার্গেট পূরণের জন্য তাঁরা নানা ধরনের প্রণোদনা চিকিৎসকদের দিয়ে থাকেন। ওষুধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের সম্পর্কে তথ্য রাখে, তাঁদের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র মনিটর করে। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে বছরে মোট দেড় হাজার কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি হতো, ২০১০ সালে বিক্রির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ মোট ওষুধ বিক্রি বেড়েছে চার গুণ। কিন্তু জনসংখ্যা চার গুণ বাড়েনি। অর্থাৎ অতিরিক্ত ওষুধের ব্যবহার বেড়েছে ব্যাপক হারে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের একজন অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করলেন এভাবে: লোকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ খাচ্ছে, এর মানে বেশি পরিমাণে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। ওষুধ বেশি বিক্রি হলে সবার লাভ—ওষুধ কোম্পানির লাভ, ডাক্তারদের লাভ, সরকারেরও লাভ। ওষুধ কোম্পানির মুনাফা বাড়ে, ডাক্তারদের উপঢৌকন ইত্যাদি বাড়ে; সরকারও বেশি কর পায়।
ওষুধের প্রয়োজনানুগ, যুক্তিসংগত, সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজন নির্ভুলভাবে রোগনির্ণয়, সুনির্দিষ্টভাবে সঠিক ওষুধ নির্বাচন ও ওষুধের সঠিক সরবরাহব্যবস্থা। প্রথম দুটি কাজ চিকিৎসকদের। এ ক্ষেত্রে যে ঘাটতি রয়েছে, তা বেশ স্পষ্ট। হেলথ ওয়াচ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, একজন চিকিৎসক গড়ে প্রত্যেক রোগীর পেছনে সময় দেন মাত্র ৫৪ সেকেন্ড। নির্ভুলভাবে রোগনির্ণয়ের জন্য এটা যে যথেষ্ট নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর নির্ভুলভাবে রোগনির্ণয় না হলে সঠিক ওষুধ নির্বাচনও সম্ভব হয় না। সঠিক ওষুধ নির্বাচনে চিকিৎসকদের ব্যর্থতার পেছনে ওষুধ সম্পর্কে সঠিক তথ্যের অভাবকেও দায়ী করা হয়। বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা বাজারে প্রচলিত ওষুধ সম্পর্কে তথ্যের ব্যাপারে নির্ভরশীল পুরোপুরি ওষুধ কোম্পানিগুলোর দেওয়া তথ্যের ওপর। বিভিন্ন মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত ওষুধের বিজ্ঞাপন আর ওষুধ কোম্পানিগুলোর মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের সরবরাহ করা লিটারেচার থেকে চিকিৎসকেরা ওষুধ সম্পর্কে যে ধারণা পান, তার ভিত্তিতেই রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। বহু বছর ধরে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার বর্ষীয়ান চিকিৎসক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়ো ইউনিভার্সিটির ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ক্যালভিন কুনিনের একটি লেখার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে লিখেছেন, প্রকৃত অর্থে এ দেশে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার যোগ্যতা নির্ণয়ের কোনো ব্যবস্থা বা বিধান নেই। তাঁরা গুরুতর কোনো ভুল করলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।...সর্দিকাশি থেকে শুরু করে ক্যানসার পর্যন্ত যেকোনো ব্যাধির জন্য এ দেশের চিকিৎসকেরা ভিটামিন থেকে শুরু করে ভিনক্রিস্টাইন পর্যন্ত যেকোনো কিছু প্রেসক্রাইব করতে পারেন।
ওষুধের সঠিক সরবরাহ বা প্রোপার ডিসপেনসিংয়ের ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে বিরাট। দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ওষুধের দোকান আছে প্রায় ৩০ হাজার; লাইসেন্সবিহীন বা অবৈধ দোকানের সংখ্যাও প্রায় সমানসংখ্যক। অবৈধ দোকানগুলোয় নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি হয়। একই প্রবণতা কিছু বৈধ দোকানেও রয়েছে। তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক প্রবণতা হলো, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই তারা সব ধরনের ওষুধ বিক্রি করে থাকে। এ দেশে প্রকৃত অর্থে ‘প্রেসক্রিপশন ওনলি ড্রাগ’ বা শুধু ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী বিক্রি করা যাবে এমন কোনো ওষুধ নেই। টাকা থাকলেই যেকোনো ওষুধ কেনা যায়, ব্যবস্থাপত্রের কোনো দরকার পড়ে না। বিপুলসংখ্যক মানুষ অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ওষুধের দোকানের বিক্রয়কর্মীদের পরামর্শে ওষুধ কিনে থাকেন। সুইডেনের কারোলিনস্কা ইউনিভার্সিটির গবেষক এস এম আহমেদ তাঁর পিএইচডি গবেষণা সন্দর্ভে তথ্য দিয়েছেন, বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী তথা দরিদ্র, হতদরিদ্র, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী—যাঁদের মধ্যে নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ নারীপুরুষ আছেন, তাঁদের অন্তত ৪০ শতাংশ অসুস্থ হলে নিজেরাই নিজেদের চিকিৎসা করেন।
সব মিলিয়ে আমাদের জনস্বাস্থ্যের চিত্র—শিশুমৃত্যু, প্রসূতিমৃত্যু ইত্যাদি হ্রাসের সূচক যতই আশাব্যঞ্জক দেখাক না কেন—ভালো নয়। সামর্থ্যবানেরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করছেন তা-ই শুধু নয়, ভুল ওষুধ সেবন করছেন ভুল মাত্রায়, ভুল পরিমাণে; একসঙ্গে সেবন করছেন একাধিক ওষুধ। ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া (এডিআর—অ্যাডভার্স ড্রাগ রিঅ্যাকশন), ওষুধে-ওষুধে প্রতিক্রিয়া (ড্রাগ ইন্টারঅ্যাকশন) ইত্যাদি ক্ষতিকর দিক নির্ণয়ের কোনো ব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই। যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশেই এডিআরের ফলে বছরে গড়ে এক লাখ মানুষ মারা যায়। তাহলে বাংলাদেশের মতো দেশে পরিস্থিতিটা কী, তা অনুমান করা যায়।
আমাদের একটি জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি আছে; আছে একটি ওষুধ অধ্যাদেশ এবং তার আলোকে প্রণীত একটি জাতীয় ওষুধনীতি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছে জাতীয় ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর’, দেশের ৩৩টি জেলায় রয়েছে এর শাখা অফিস এবং প্রতিটি অফিসে একজন করে ড্রাগ সুপারিনটেনডেন্ট। চিকিৎসকদের জন্য আছে মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল, তাঁদের রয়েছে একটি আচরণবিধি—কোড অব মেডিকেল এথিকস। সবকিছু থাকার পরও কেন আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থার এই দশা (কেউ কেউ বলবেন, দুর্দশার এ বর্ণনা যথেষ্ট হলো না, সামগ্রিক চিত্র আরও গুরুতর)? এককভাবে কোনো পক্ষ বা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা ঠিক হবে না। বলতে হয়, চিকিৎসক সমাজ নিজেদের আচরণবিধি মেনে চললে, ঔষধ প্রশাসন আপন দায়িত্ব পালনে তৎপর থাকলে, ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিপণন তৎপরতা আরেকটু কম ‘অ্যাগ্রেসিভ’ আর বেশি নৈতিক হলে এবং সর্বোপরি রোগীসাধারণ আরেকটু সচেতন হলে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতে পারত না।
মশিউল আলম: সাংবাদিক।
mashiul.alam@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.