প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা ও বিচ্যুতির বীজ-চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ

সরকারের উচ্চপদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অভূতপূর্ব গতি অর্জন করেছে। বিএনপির পাঁচ বছরে প্রশাসনের বাইরে থেকে নিযুক্ত হয়েছিলেন ২৮৬ জন, আর এই সরকারের ৩০ মাসেই ২১৫ জন নিয়োগ পেয়েছেন। এই হিসাবে ৬০ মাস তথা পাঁচ বছরে হওয়ার কথা ৪৩০ জন।

এসব নিয়োগকে দলীয়করণ ও পছন্দের ব্যক্তিদের অনুগ্রহ দান হিসেবে দেখার সুযোগ আছে। এমনটা চললে সরকারি প্রশাসনে গভীর ক্ষতি হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন। উদ্বেগটা সেখানেই।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা ও বিচ্যুতি সংঘটিত হয়। প্রশাসনে ক্যাডার নিয়োগে সরকারিভাবে নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস তার প্রধানতম। এর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াতেই রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় দক্ষ কর্মশক্তির জোগান দেওয়া হয়। একে পাশ কাটালে প্রশাসনে যেমন অসন্তোষ জমে, তেমনি স্বচ্ছতা, কর্মদক্ষতা ও জবাবদিহির ঘাটতি সৃষ্টি হয়। প্রশাসনে কোনো পদ শূন্য থাকলে উপযুক্ততা সাপেক্ষে পদোন্নতির মাধ্যমে সেই পদ পূরণ করাই যুক্তিযুক্ত। প্রশাসনে উপযুক্ত লোকের ঘাটতি দেখা দিলে কিংবা প্রশাসনবহির্ভূত ব্যক্তির দক্ষতা বিশেষ প্রয়োজন হয়ে উঠলে এর ব্যতিক্রম গ্রহণযোগ্য। কিন্তু ব্যতিক্রম যখন নিয়ম হয়ে যায়, তখন তার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ জাগে। বারবার যোগ্য ব্যক্তিরা উপেক্ষিত হলে নিষ্ঠাবান ও যোগ্য কর্মকর্তারা কাজে উদ্যম হারিয়ে ফেলেন এবং প্রশাসনিক ধারাবাহিকতাও নষ্ট হয়। মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খানের মত হচ্ছে, একটি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে নিচের পাঁচটি পদের পদোন্নতির সুযোগ বন্ধ হয়। বেসামরিক প্রশাসনের জন্য এটা কোনো স্বাস্থ্যকর বিষয় নয়।
সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব বা সমপর্যায়ের পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সীমা আগে ছিল মূল পদের ১০ শতাংশ। ২০০১ সালে বিএনপির সরকার এই সীমাটি তুলে দেয়। এখন তারই সুবিধা নিচ্ছে আওয়ামী লীগের সরকার। এ রকম ঢালাও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে যোগ্য কর্মকর্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, চুক্তির মাধ্যমে নিযুক্ত সবার যোগ্যতাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। কী উদ্দেশ্যে, কার স্বার্থে সব সীমা লঙ্ঘন করে এটা করা হচ্ছে, এর ব্যাখ্যা তাই প্রয়োজন।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কেবল চুক্তিভিত্তিক নতুন নিয়োগই নয়, পুরোনো চুক্তির নবায়ন বাতিল এবং জনস্বার্থে দরকার হলে পুরোনো চুক্তি বাতিলেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এখন মনে হয়, সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণের সময় এসেছে। মন্ত্রণালয়গুলোর সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ যথাযথভাবে হয়েছে কি না, সরকারের তা প্রমাণ করা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.