সমুদ্র আমাদের

আন্তর্জাতিক আদালতের রায় বাংলাদেশের পক্ষে বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে দীর্ঘ বিরোধের অবসান হয়েছে। সমুদ্র আইনসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের (ইটলস) রায় অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরের ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বাংলাদেশ সব ধরনের সমুদ্রসম্পদের

অধিকারী হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ এই বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকার মৎস্য, খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, খনন, উত্তোলন ও ব্যবহার করতে পারবে। এ ছাড়া এই রায়ের ভিত্তিতে দ্রুতই মহীসোপানের সীমানা নির্ধারণবিষয়ক জাতিসংঘ কমিটিতে বাইরের সীমানা নির্ধারণ হবে। তাতে বাংলাদেশ ৪৬০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপান এলাকার অধিকারী হতে পারে। স্বাধীনতার চার দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জনগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। দেশবাসীর সঙ্গে কালের কণ্ঠও এই সাফল্যে আনন্দিত। আমরা আশা করছি, ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান বিরোধ নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যে মামলা রয়েছে, একইভাবে অতি দ্রুত তাও নিষ্পন্ন হবে এবং বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ তার সার্বভৌমত্ব সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সম্ভাব্য যে গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে, তাকে মোট ২৮টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি মিয়ানমার এবং ১০টিতে ভারত তাদের মালিকানা দাবি করে আসছিল। ফলে একটি মাত্র বিরোধহীন ব্লক বাংলাদেশের ছিল। এই রায়ের ফলে মিয়ানমারের দাবি করা ১৭টি ব্লকের মালিকানা বাংলাদেশের বলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল। বাংলাদেশ এখন এই ১৮টি ব্লকেই গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে যেতে পারবে। হেগের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে ভারতের সঙ্গে বিরোধের ব্যাপারে যে মামলা রয়েছে, ২০১৪ সালের মধ্যে তারও রায় পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সমুদ্র আইন বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে যেই ন্যায্যতার ভিত্তিতে রায় হয়েছে, সেই একই পদ্ধতি অনুসৃত হলে ভারতের দাবিও অসার প্রমাণিত হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মোট ২৮টি ব্লকেরই মালিকানা অর্জন করবে। জলসীমায় এই সার্বভৌমত্ব অর্জনকে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের মতোই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, স্বাধীনতা-পরবর্তী ৩৮ বছরে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টিকে আমরা এক প্রকার অবহেলাই করে গেছি। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর যে কটি ভালো কাজ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো সেই নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে এসে বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যাওয়া। ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালত ইটলস-এ যায়। ইটলস-এর প্রদত্ত রায়ই চূড়ান্ত এবং এর বিরুদ্ধে কোনো আপিলেরও সুযোগ নেই। অন্যদিকে ভারতের বিরুদ্ধে মামলায় বাংলাদেশ গত বছরের ৩১ মে কাউন্টার মেমোরিয়াল জমা দিয়েছে। আগামী ৩১ মে ভারতের কাউন্টার মেমোরিয়াল জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা আরো দুই মাস অর্থাৎ ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় নিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০১৪ সালের মধ্যেই এই রায়ও পাওয়া যাবে।
স্থলসীমার মতোই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশের জলসীমা। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কেন এত দিন আমাদের রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনাকারীদের কাছে গুরুত্ব পেল না, তা বোধ্যগম্য নয়। বর্তমান সরকারের কাছে অন্তত এই একটি বিষয়ে হলেও জাতি কৃতজ্ঞ থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.