স্বল্পভাষিতা একটি মহৎ গুণ by মাওলানা শিব্বীর আহমদ

দুনিয়া ও পরকালের সার্বিক কল্যাণের দিক বিবেচনা করেই স্বভাবধর্ম ইসলামে স্বল্পভাষিতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে এর নানাবিধ উপকার ও গুরুত্বের কথা। পাশাপাশি রয়েছে বেশি কথা বলার ক্ষতির বিষয়টিও।
আমরা যদি আমাদের সামাজিক জীবনাচরণের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখব, যারা কথা বেশি বলে সমাজের চোখে তাদের মর্যাদা খুব উন্নত নয়। কারও কারও ক্ষেত্রে এ 'কথা বেশি বলা'টা অন্যদের কাছে মহাযন্ত্রণার কারণ বিবেচিত হয়। আর যে কথার চেয়ে কাজে মনোযোগী হয় বেশি, তার আলাদা একটা মর্যাদা থাকে সবার কাছে; ধন-সম্পদ তার যেমনই থাকুক না কেন।
আমাদের দেখা একটি বাস্তবতা হচ্ছে, যখন কেউ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বেশি বেশি কথা বলে, তখন সে যে কেবল অনর্থক কথাই বলে বেড়ায় এমন নয়। বরং সে জড়িয়ে পড়ে অনেক ধরনের অন্যায়-অপরাধের সঙ্গেও। যারা বেশি কথা বলে তারা মানুষের গিবত-পরনিন্দায় লিপ্ত হয় বেশি। অবচেতনভাবেই হয়তো তারা অনেকের গিবত করতে থাকে এবং এ গিবত-পরনিন্দার কারণে অনেক সময় কারও সম্মানহানি হয়। কখনও আবার দুই ব্যক্তির মাঝে সম্পর্ক নষ্টও হয়। এ কাজটি সামাজিকভাবে চরম নিন্দিত ও শরিয়তের দৃষ্টিতে এক জঘন্য অন্যায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, 'তোমাদের কেউ যেন একে অন্যের গিবত না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে?' [সূরা হুজুরাত : ১২] কখনও মিথ্যা-অশল্গীলতার সঙ্গেও মিশ্রিত হয়ে পড়ে তাদের কথাবার্তা। অনেক ক্ষেত্রেই অসংলগ্ন ও অসতর্ক কথায় তারা জড়িয়ে যায়। ফলে ঝগড়া-বিবাদও সৃষ্টি হয় কখনও কখনও। পরিণতিতে বিঘি্নত হয় সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা-সম্প্রীতি। কিন্তু যদি তারা কথাবার্তায় সংযত হতো, অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বিরত থাকত, তাহলে এ ধরনের মারাত্মক গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকা তাদের জন্য অনেক সহজ হতো। এক সাহাবী একবার জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার ক্ষেত্রে যা কিছুর আশঙ্কা করেন, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আশঙ্কাজনক কোনটি? তখন তিনি তাঁর নিজের জিহ্বাটি ধরে বললেন, এটা সবচেয়ে আশঙ্কাজনক। [তিরমিযী শরীফ] সাহাবী হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) মুক্তির উপায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি উত্তরে বললেন, তুমি তোমার জিহ্বাকে সংযত রাখ...। [তিরমিযী শরিফ] কারণ জিহ্বাকে সংযত রাখাই হচ্ছে গিবত থেকে বেঁচে থাকার প্রধান হাতিয়ার। আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে আল্লাহ ও পরকালের ওপর ইমান আনে সে যেন উত্তম কথা বলে কিংবা চুপ থাকে। [বুখারী] কম কথা বলা বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের পরিচায়ক। যে কথা কম বলে সে অনেক ধরনের অনর্থক বিষয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। গিবত-পরনিন্দা-মিথ্যা-অশল্গীল কথাবার্তা ইত্যাদি নানা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকাও তার পক্ষে সম্ভব হয়। এ জন্যই তো যারা কথা কম বলে হাদিস শরিফে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো বান্দাকে দুনিয়াবিমুখ ও স্বল্পভাষী দেখবে তখন তার সঙ্গে ওঠাবসা কর। কেননা সে হেকমতপ্রাপ্ত। [বায়হাকী]
ংধযসবফ১৩৮৬@ুসধরষ.পড়স

No comments

Powered by Blogger.