গ্লুকোমা : চিকিৎসা নিলে থাকবেন ভালো by অধ্যাপক ডা. এম নজরুল ইসলাম

আজ (১৬ মার্চ ২০১২) বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস। নীরব অন্ধত্বের কারণ গ্লুকোমা বিষয়ে সচেতন করার জন্য বিশ্ব গ্লুকোমা সমিতি প্রতিবছরই আয়োজন করে থাকে বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ এবং বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস। 'গ্লুকোমা চিকিৎসা নিলে থাকবেন ভালো, নিভবে না জীবনের আলো'- এই হচ্ছে এ বছরের বিশ্ব গ্লুকোমা দিবসের স্লোগান বা প্রতিপাদ্য বিষয়।

বিশ্ব গ্লুকোমা সমিতি প্রদত্ত এই স্লোগানে বোঝানো হয়েছে, গ্লুকোমা দুরারোগ্য ব্যাধি নয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে পারলে গ্লুকোমা নিয়ে সারা জীবন ভালো থাকা যায়। গত ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছরই মার্চ মাসে বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস পালন করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া গত ২০১০ সাল থেকে সপ্তাহব্যাপী বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। এ বছর ১১-১৭ মার্চ ২০১২ বিশ্বব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ এবং ১৬ মার্চ বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটি Free Glaucoma screening camp, লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার বিতরণ, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এই সপ্তাহজুড়ে দিবসটি পালন করছে।
সারা বিশ্বে প্রায় এক কোটি লোক গ্লুকোমা রোগে ভুগছেন। গ্লুকোমা রোগটি এখন আর দুই দশক আগের মতো অপরিচিত নাম নয়। বাংলাদেশের অনেকেই এখন গ্লুকোমা রোগের নাম শুনেছেন এবং চোখের এই রোগটি সম্পর্কে সামান্য হলেও ধারণা আছে। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, শতকরা অন্তত ১০ জন মানুষ এখন সামান্য হলেও এ রোগটির সম্বন্ধে ধারণা রাখেন।
গ্লুকোমা সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা- গ্লুকোমা হলেই চোখ অন্ধ হয়ে যাবে এবং এর কোনো চিকিৎসা নেই। এই ধারণায় কিছু সত্যতা থাকলেও পুরোপুরি সত্য নয়। এটা সত্যি, গ্লুকোমা চোখের একটি মারাত্মক অসুখ এবং চিকিৎসার আগ পর্যন্ত যেটুকু দৃষ্টি কমে গেছে, সেটা আর ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়। তবে যেটুকু দৃষ্টি বিদ্যমান আছে, সেটুকু সুচিকিৎসা দিয়ে বাঁচানো যায়। গ্লুকোমার সফল অপারেশন হলে সারা জীবনের জন্য আর ড্রপ বা ট্যাবলেট ব্যবহারের প্রয়োজন নাও হতে পারে। গ্লুকোমা নির্ণয়ের পর গ্লুকোমার রোগী মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েন। যখন বুঝতে পারেন, তার চোখের রোগটি স্থায়ী এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি ও দৃষ্টির পরিসীমার আর কখনো উন্নতি হবে না, তখন তাঁরা খুবই মানসিক চাপে থাকেন।
আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চোখের ওষুধ ব্যবহার করলে এবং চোখের চাপ স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রাখতে পারলে ভালো থাকার সম্ভাবনা ৮০-৯০ শতাংশ।
গ্লুকোমাও সারা জীবনের রোগ। ওষুধ ব্যবহার করে বা শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে চোখের চাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে হবে। তিন-চার মাস পর পর চিকিৎসককে দিয়ে চোখের চাপ এবং চোখের ভেতরের অপটিক নার্ভের অবস্থা ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করাতে হবে। গ্লুকোমা রোগীর বছরে অন্তত একবার চোখের যাবতীয় ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা ছাড়াও দৃষ্টির পরিসীমা পরীক্ষা করা উচিত। এ ছাড়া চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে আধুনিক কয়েকটি পরীক্ষা যেমন- রেটিনার রঙিন ছবি, ওসিটি মেশিনের সাহায্যে রেটিনার নার্ভ ফাইবার এনালাইসিস, অপটিক ডিস্কের পরীক্ষা ইত্যাদি করানো যেতে পারে। গ্লুকোমা চিকিৎসার জন্য Early Diagnosis বা প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ছোট শিশুদের গ্লুকোমা হতে পারে। জন্মগত গ্লুকোমা থাকলে চোখের আকৃতি বিশেষ করে কর্নিয়া বা নেত্রস্বচ্ছের আয়তন বাড়তে পারে। চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে, চোখ ট্যারা হয়ে যেতে পারে। এসবের কোনো লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। শিশুদের গ্লুকোমার চিকিৎসা ওষুধ দিয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না, এ জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শল্য চিকিৎসা করাতে হয় এবং ৭০-৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই এ চিকিৎসা সফল হয়।
গু্লকোমা হলে দুশ্চিন্তা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করালে গ্লুকোমা নিয়েই প্রায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব। আপনার দৃষ্টি যতটুকু ভালো আছে, এটা দিয়ে বাকি জীবন ভালোভাবেই বসবাস করতে পারবেন। তবে তার জন্য দরকার দৈনন্দিন জীবনের কিছু নিয়ম ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা।

লেখক : চক্ষু বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
ও প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট, বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটি

No comments

Powered by Blogger.