ফসল রক্ষা বাঁধ-ফি বছর লুটপাট

এ বছরও হাওরের ১০ লাখ হেক্টর জমির বোরো ফসল পুরোপুরি কৃষকের গোলায় উঠবে কি-না, সেটা প্রকৃতির দয়ার ওপর নির্ভর করবে। প্রতি বছরের মতো এবারও ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে এসব বাঁধ মৌসুমি বন্যার পানির তোড়কেও ঠেকা দিয়ে রাখতে পারবে না বলে বৃহস্পতিবার সমকালের তৃতীয় পৃষ্ঠায় 'প্রতি বছর

বাঁধ, প্রতি বছর লুটপাট' শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী কৃষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অনেকেই বাঁধ নির্মাণে এহেন দুর্নীতি ও গাফিলতির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পিআইসি কমিটিকে দায়ী করেছেন। যেহেতু বর্ষাকালে হাওরের চারপাশ পানিতে ভরে যায় এবং যেহেতু বন্যা হলে পানি হাওরের মধ্যে ঢুকে পড়ে সেখানকার বোরো আবাদকে নষ্ট করে দিতে পারে, সে জন্য সরকার প্রতি বছরই এসব হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের সংস্কার কাজের জন্য জরুরি বরাদ্দ দিয়ে থাকে। কিন্তু দেখা যায়, বাঁধ সংস্কারের অর্থের অধিকাংশই সংশ্লিষ্টরা দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের পকেটে পোরে। এ জন্য পাউবোর ঘাড়েই বেশি দায়িত্ব বর্তায়। তা ছাড়া হাওর এলাকার সাড়ে ৩শ' কিলোমিটার বাঁধের কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মার্চ মাসের অর্ধেক পার হয়ে গেলেও এর অর্ধেক কাজ এখনও শেষ হয়নি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী এবার আগাম বন্যা হলে হাওর এলাকার কয়েক লাখ হেক্টরের বোরো আবাদ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন উৎপাদক কৃষক আর অপ্রত্যক্ষভাবে এর দায় এসে পড়বে গোটা জাতির ঘাড়ে। রিপোর্টে দেখা যায়, সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার চামারদানী ইউপি চেয়ারম্যান অভিযোগ করেছেন, গুরমার হাওরের ৪০ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ ৫ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করার কথা থাকলেও কোথাও আড়াই ফুট, কোথাও তিন ফুট, আবার কোনো কোনো এলাকায় মাটিই পড়েনি। প্রায় সব এলাকার চিত্রই অভিন্ন। সরকারের উচিত এসব অভিযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। তবে হাওর এলাকার বোরো ফসল রক্ষা করতে হলে সরকারকে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। এতে ফি বছর সরকারি অর্থ লুটপাটও বন্ধ হবে।

No comments

Powered by Blogger.