ভুল by ইমরুল কায়েস

ভুল কেন হয় তা নিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা বিস্তর গবেষণা করেছেন। একটি মতবাদ বলে, মনের সচেতন অংশের ওপর অবচেতনের কারসাজিতেই ভুল হয়ে বসে। যে কথাকে আপাতদৃষ্টিতে ভুল মনে হয় তা আসলে ভুল নয়। কোনো এক জটিল কারণে অবচেতন একে সঠিক বলেই গণ্য করে এবং সেভাবেই প্রকাশ করে।

বেফাঁস মন্তব্য, বিব্রতকর কাজ মস্তিষ্কের সংকেতেই ঘটে যায়। একটা যুক্তি, পদ্ধতি মেনেই সেটা ঘটে। কিন্তু মনের সচেতন অংশ সক্রিয় হলে ভুলটি ধরা পড়ে যায়। তৎক্ষণাৎ সে জন্য অনুশোচনা জাগে। অনেক সময় আমরা স্যরি বলি, দুঃখ প্রকাশ করে ভুলের সুরাহা করতে চাই। প্রায়ই আমরা শুনি অনিচ্ছাকৃত ভুলের কথা। নির্ভেজাল ভুল অবশ্যই অনিচ্ছাকৃত। বলতে গেলে, কোনো একটি কাজ ভুল হতে হলে তাকে অনিচ্ছাকৃত হতেই হবে। কিন্তু সমাজ যখন জটিল হয়ে পড়ে, তখন অনিচ্ছাকৃত ভুলের সঙ্গে কিছু ইচ্ছাকৃত ভুলের দেখাও আমরা পাই। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ যথেষ্ট, কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভুলের জন্য অনেক সময় দুঃখ প্রকাশ যথেষ্ট বলে মনে হয় না। ইচ্ছাকৃত ভুলের তালিকায় কিছু ভুলকে তাই বলা হয় ক্ষমার অযোগ্য ভুল। অবশ্য অনিচ্ছাকৃত ভুলও ক্ষমার অযোগ্য হয়ে পড়তে পারে। কোন ভুলটি আসলেই ভুল, কোন ভুলটি অনিচ্ছাকৃত আর কোন ভুলটি ক্ষমার অযোগ্য তা সামাজিক মানদণ্ডেই নির্ধারিত হয়। সমাজ ও মনের জটিল বয়নের মধ্যে কোন ভুলকে কীভাবে বিচার করা হবে তা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। দেখা যায়, কোনো ভুল খুব বিব্রতকর, কিন্তু তা নিয়ে রীতিমতো হাস্যরস চলছে। আবার কোনো ভুল খুব সামান্য, কিন্তু তা নিয়েই দুই পক্ষে লাঠালাঠি লেগে গেছে। বৃহস্পতিবারের সমকালের লোকালয় পাতায় আরেক ভুলের দেখা মিলল। এ এক অভিনব ভুল। বাপ্পী শর্মা ক্লিনিকে প্রস্রাব পরীক্ষা করতে গিয়ে জানলেন, তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েছেন। বাপ্পী শর্মা অবশ্যই পুরুষ। স্বাভাবিক কারণেই তিনি হতভম্ব। শরীরবৃত্তে কোনো অঘটন তার ঘটেনি। কোনো হরমোনাল পরিবর্তনের আলামতও মেলেনি। তারপরও প্রস্রাব পরীক্ষায় দেখা গেল তিনি গর্ভবতী। হতে পারে, কোনো নারী চিকিৎসার্থীর সঙ্গে প্রস্রাব পরীক্ষার টিউব বদল হয়ে যাওয়ার কারণেই এমন ঘটেছে। কক্সবাজারের একটি ক্লিনিকে এমন ঘটতেই পারে। জেলা শহরগুলোতে ততটা সচেতনতার সঙ্গে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না। তাই টিউব অদলবদলের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। এমন হলে তা শোধরানো হয়। নতুন করে প্রস্রাব পরীক্ষার আয়োজন হয়। কিন্তু বাপ্পী শর্মার ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। তার প্রস্রাব পরীক্ষার কাগজে ডাক্তাররা তাকে গর্ভবতী বলেই শনাক্ত করে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। তিনি প্রস্রাব পরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন জন্ডিসের জন্য, ডাক্তারদের সেদিকে মনোযোগ যায়নি বলাই বাহুল্য। পরীক্ষা কাগজে বাপ্পীকে পুরুষ হিসেবে উল্লেখ করার কথা। সেখানেও তাদের চোখ যায়নি। বড় ভুল বলতে হবে। এ কেমন ভুল? ইচ্ছাকৃত, অনিচ্ছাকৃত নাকি ক্ষমার অযোগ্য? ক্লিনিক, প্যাথলজি সেন্টারগুলোর ভুল কি আমাদের দেশে ক্ষমার অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে কখনও? দিব্যি ভুল রিপোর্ট দিয়ে চলেছে তারা, প্রতারণা আর অভিযোগেরও শেষ নেই। তবু কি তাদের শাস্তি পাওয়ার কোনো উদাহরণ আছে? পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক। ফলে এই ক্লিনিকগুলোর ভুলকে ভুল বললে তা ভুলের জন্যই অপমানজনক মনে হবে। বরং এগুলো হলো অপরাধ। আশার কথা, কক্সবাজারের ওই ক্লিনিকের এই ভুলকে অপরাধ হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় সিভিল সার্জন। তিনি ঘটনার বিহিত করবেন বলে কথা দিয়েছেন। তাই হোক। কিছু অপরাধের বিহিত না হলে আশার আলো কোথায় দেখা দেবে?

No comments

Powered by Blogger.