ভাষা প্রতিযোগ-ভাষা নিয়ে একটি দিন by আক্কাস সিকদার

চৈত্রের প্রথম দিনের উত্তাপ উপেক্ষা করে সুগন্ধা নদীর তীরে ঝালকাঠি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে গতকাল বৃহস্পতিবার বসেছিল শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা। এই মিলনমেলা ছিল বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে, ভাষা প্রতিযোগ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। গোলাপি-নীল আর সাদা পোশাকে শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষাকে নিয়ে একটি দিন কাটাল।

এইচএসবিসি-প্রথম আলো ভাষা প্রতিযোগ ২০১২-এর ঝালকাঠি অঞ্চলের প্রতিযোগে বরিশালসহ ছয় জেলার অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
সকাল নয়টার মধ্যে বিদ্যালয়ের চত্বর শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে। সাড়ে নয়টায় ঝালকাঠি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মারুফা বেগম জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর প্রতিযোগের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ভাষা প্রতিযোগের পতাকা উত্তোলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী।
উদ্বোধনী ঘোষণায় মারুফা বেগম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে তোমরাই পারবে বিশ্বদরবারে বাংলাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে।’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক তারিক মনজুর।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে ৩০ মিনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর প্রশ্নোত্তর ও আলোচনাপর্বে ঝালকাঠিতে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য দেন ভাষাসংগ্রামী মোহাম্মদ আলী খান। অনুষ্ঠানে এইচএসবিসি ব্যাংকের কর্মকর্তা রাশেদ জামান ও সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যে উপস্থিতি ও ভাষার প্রতি আগ্রহ দেখছি, আশা করি ভবিষ্যতে তা বিদ্যমান থাকবে।’
প্রশ্নোত্তর পর্বে ঝালকাঠি হরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী অরুণী জানতে চায়, প্রভাতের উচ্চারণ ‘প্রোভাত’ কেন? পিরোজপুরের সুনন্দা দাস জানতে চায়, বাংলায় আঞ্চলিক ভাষা আছে, অন্য ভাষায় আছে কি না? ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করে—গল্প, উপন্যাস ও কবিতায় ছেলেমানুষি, ছেলেখেলা, এসব বলা হলেও ‘মেয়েমানুষি’ বা ‘মেয়েখেলা’ বলা হয় না কেন?
এ রকম নানা প্রশ্নের ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক তারিক মনজুর, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের সভাপতি বিনয় বর্মণ, মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের প্রভাষক কুদরত-ই-হুদা ও প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক জাফর আহমদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ঝালকাঠি প্রতিনিধি মো. আক্কাস সিকদার ও ঝালকাঠি বন্ধুসভার সভাপতি আফজাল হোসেন।
ভালো আর সেরা প্রশ্নের জন্য ছিল বই উপহার। এরপর ঝালকাঠি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের হাতে ভেন্যু স্মারক তুলে দেন ভীষ্মদেব চৌধুরী। বক্তব্যের পরে ঝালকাঠি বন্ধুসভার সদস্যরা সংগীত, নৃত্য পরিবেশন ও কবিতা আবৃত্তি করেন।
পুরস্কার বিতরণ পর্বে শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। উচ্চমাধ্যমিক বিভাগে বরিশাল সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের সুদীপ্ত সরকার প্রথম, ঝালকাঠি সরকারি কলেজের আসিকুর রহমান দ্বিতীয়, বরিশাল রয়েল সেন্ট্রাল কলেজের মো. আসিক আলম তৃতীয়; মাধ্যমিকে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর কাজী সিরাজাম মুনিরা প্রথম, ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পপি হালদার দ্বিতীয়, বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ঐশী তৃষ্ণা তৃতীয়; নিম্নমাধ্যমিকে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সওদা মেহজাবিন প্রথম, ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের রাদিয়া ফারহান দ্বিতীয়, বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মেহজাবিন রহমান তৃতীয়; প্রাথমিকে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ফাহিমা আক্তার প্রথম, ঝালকাঠি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের আয়শা মিম দ্বিতীয় ও ঝালকাঠি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মো. জামিল সাহরিয়ার তৃতীয় স্থান অধিকার করে। ঝালকাঠি বন্ধুসভার সদস্যরা অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা করেন।

No comments

Powered by Blogger.