উচ্চশিক্ষায় সব মেধাবী সুযোগ পাবেন তো?-এইচএসসি পরীক্ষার ফল

বুধবার প্রকাশিত ২০১১ শিক্ষাবর্ষের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল এককথায় অত্যন্ত আনন্দদায়ক। দেশের আটটি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭২ দশমিক ৩৬ শতাংশ—গত বছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

মোট ৩৪ হাজার ৩৮৫ জন শিক্ষার্থী এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন—গত বছরের চেয়ে আট হাজার ৮৭৩ জন বেশি। এবার মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল গত বছরের তুলনায় বেশি; কিন্তু অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী হার কমেছে। উচ্চমাধ্যমিকের সীমানা পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার দুয়ারে পা রাখলেন যেসব শিক্ষার্থী, আমরা তাঁদের জানাচ্ছি আন্তরিক অভিনন্দন। একই সঙ্গে শিক্ষকসমাজ ও অভিভাবকদের ধন্যবাদ।
উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে গ্রেড পদ্ধতি প্রবর্তনের পর থেকে পরীক্ষায় ভালো ফল করার যে ধারা লক্ষ করা গেছে, তার ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রয়েছে। এটি একদিকে যেমন আনন্দের বিষয়, তেমনই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য উদ্বেগের বিষয়ও বটে। জিপিএ-৫ পেয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থী ও তাঁর অভিভাবকের মনে প্রত্যাশা জাগে ভালো বিষয়ে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু যোগ্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা যে হারে ও যতটা বাড়ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় আসনসংখ্যা সে হারে বাড়ছে না। ফলে প্রতিযোগিতা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। মেধাবীদের একটা বড় অংশ যোগ্যতা অর্জন সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ না পেলে তা থেকে হতাশার সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞান বিভাগের যেসব মেধাবী শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন, তাঁদের অধিকাংশই প্রকৌশল শাস্ত্র ও চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়তে চান। কিন্তু পাবলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আসনসংখ্যা বেশ সীমিত। ফলে অধিকাংশেরই প্রত্যাশা পূরণ হবে না। এ সমস্যার সমাধান কী—দেশে আরও মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশলবিদ্যা পড়ার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো।
মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকেও প্রচুরসংখ্যক শিক্ষার্থী এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তাঁরাও নিজেদের পছন্দমতো বিষয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে চাইবেন। কিন্তু আসনস্বল্পতার কারণে বাদ পড়ে যাবেন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানের জন্যও আসনসংখ্যা বাড়ানো, বিভাগের আয়তন বাড়ানো, নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
আরেকটি বিষয়ও ভেবে দেখা দরকার বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের উচ্চশিক্ষা প্রয়োজন আছে কি না। উচ্চমাধ্যমিকের পর জীবিকাভিত্তিক বিশেষায়িত শিক্ষার প্রতি কীভাবে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করা যায়, তা-ও ভেবে দেখতে হবে। মেধাবীরা যদি শুধু চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যবসায় প্রশাসক ইত্যাদি ‘আকর্ষণীয়’ পেশার দিকেই যান, তাহলে শিক্ষক হবেন কারা? শিক্ষার মাধ্যমে দেশকে উন্নত করতে হলে ভালো শিক্ষক প্রয়োজন। মেধাবীরা যাতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করতে আগ্রহী হন, সে লক্ষ্যেও রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষিত জনশক্তির মেধার সদ্ব্যবহার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ জন্য জাতীয় ভিত্তিতে বড় পরিকল্পনা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.