ভেল্কিবাজির পল্লী বিদ্যুৎ by আসিফ এইচ ছিদ্দিকী

পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা গ্রামে বিদ্যুতের দেখা পান মাঝে-মধ্যে; দিন-রাত মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না গ্রাম এলাকায়। যে ক'ঘণ্টা বিদ্যুতের দেখা মিলে তাও আধা ঘণ্টা স্থায়ী হয় না। যদি কখনও স্থায়ী হয়, তার আগে ১৫-২০ বার চলে বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি।


ভেল্কিবাজির বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নভাবে পাওয়া গেলেও বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় নিরবচ্ছিন্নভাবে অর্থাৎ বিল পরিশোধ করতে হয় শতভাগ। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় শতভাগ বিল আদায় করলেও বিদ্যুৎ দিচ্ছে না তার সামান্য অংশও।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকদের নূ্যনতম বিল হচ্ছে মাসে ৯৮ টাকা। বিদ্যুৎ ব্যবহার করুন আর না করুন এই বিল আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। প্রতিদিন দুই মিনিট থেকে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা স্থায়ী এই বিদ্যুৎ মিলে সর্বসাকুল্যে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ পান কাকারা ইউনিয়নের অধিবাসীরা। এই চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে গিয়ে গৃহস্থালী থেকে শুরু করে ব্যবহার্য সব ধরনের ইলেকট্রনিকস পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তার ওপর এই বিদ্যুৎ দিয়ে কোনো যন্ত্রও চালানো যাচ্ছে না। উপরন্তু প্রত্যেক গ্রাহককে এই ৯৮ টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে কোনো কারণ ছাড়াই। প্রতিদিন চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ ব্যবহারে ৯৮ টাকা বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎকে। সে সঙ্গে লোডশেডিংয়ের কারণে প্রতি মাসে আড়াইশ' টাকার মোমবাতি জ্বালাতে হচ্ছে। কেরোসিন জ্বালাতে হচ্ছে আরও একশ' টাকার, যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়া বাবদ আরও বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হচ্ছে। গ্রাহকদেরকে নূ্যনতম বিদ্যুৎ বিল ছাড়াও প্রতি মাসে এই বিপুল পরিমাণ টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। গ্রাহকরা এখন উভয়মুখী সমস্যায় পড়েছেন। শুধু লোডশেডিংয়ের কারণে এই বিপুল টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। এর দায়ভার নেওয়ার কথা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে।
এক বছরে দেশে প্রচুর নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছে, যোগ হয়েছে অনেক বিদ্যুৎ। সেই বিদ্যুতের সিংহভাগ দেওয়া হচ্ছে শহুরে নাগরিকদের কাছে। যে কারণে শহরে লোডশেডিং অনেক কমেছে। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, গ্রামে সরবরাহকৃত যৎসামান্য বিদ্যুৎও স্থানান্তর করা হচ্ছে শহরে। কেননা শহর ভালো থাকলেই সরকার নিরাপদ থাকে! শহরে একটু লোডশেডিং বেশি হলেই হইচই শুরু হয়ে যায়, সংবাদপত্রগুলো প্রধান শিরোনাম দিয়ে অনবরত খবর প্রকাশ করতে থাকে। ফলে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই গ্রামের বিদ্যুৎ কেটে শহর আলোকিত করার কাজে ব্যস্ত থাকে। পক্ষান্তরে গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ মাসের পর মাস বন্ধ থাকলেও সিঙ্গেল কলাম প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
বিদ্যুতের সার্বিক চিত্র বিশেল্গষণ করলে দেখা যায়, আগে শহর আলোকিত করাই সরকারের প্রধান কর্তব্য। সুতরাং শহর পরিপূর্ণভাবে আলোকিত করার পরই গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হোক। সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের অগ্রগতি ধরে নিলে শহর আলোকিত হতে আরও এক বছর সময় লাগবে। এ জন্য আগামী এক বছর গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হোক। এতে আমরা বিদ্যুতের জন্য আর মুখাপেক্ষি থাকব না। পুরনো যুগে ফিরে যাব।
কেরোসিনের লণ্ঠনবাতি নিয়ে বসবাস করব, সেচ পাম্প চলবে ডিজেল দিয়ে, চালের মিল চলবে পেট্রোলে, টিভি চলবে ব্যাটারিতে। ফলে আমরা অন্তত এক বছর পুরনো যুগে ফিরে যেতে চাই। যখনই বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং শহর আলোকিত করার পর গ্রামে সরবরাহের মতো বিদ্যুৎ থাকবে তখনই আমাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হোক। এই প্রতিবাদ সরকারের বিরুদ্ধে নয়, আমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে। কেননা আমাদের সবচেয়ে বড় দোষ আমরা গ্রামের বাসিন্দা।
হ চকরিয়া
hasnat.cu@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.