বিশ্বজয়ী-কালজয়ী রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ গ্রহের এক মহাবিস্ময়। বিশ্বজয়ী-কালজয়ী রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ ১৫০ বছর পরও আজও শুধু বাংলাভাষীর কাছেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী, এমনকি ক্ষুদ্র আঞ্চলিক জাতিসত্তার মানুষের কাছেও দারুণভাবে প্রাসঙ্গিক।


ফরাসিদেশের মানুষের কাছে সুদীর্ঘ ৪০০ বছর পরও যে অমিত শক্তি নিয়ে জীবন্ত হয়ে আছেন ভিক্টর হুগো, কিংবা রুশদেশের মানুষের কাছে গোর্কি-তলস্তয়-পুশকিন যেমন যুগ যুগ প্রাসঙ্গিক রয়ে গেছেন, ডিকেন্স-কার্লাইল অমর হয়ে আছেন ইংরেজিভাষীর কাছে, রবীন্দ্রনাথও তেমনি তাঁর নিজ ভাষা বাংলার মানুষের গণ্ডির মধ্যে তো পূজিত ও বহুলপঠিত হনই, আজ তাঁর সার্ধশততম জন্মজয়ন্তী প্রমাণ করে দিচ্ছে, তিনি সে গণ্ডি অতিক্রম করে সমগ্র ভারত তথা উপমহাদেশের প্রাণ হয়ে রয়েছেন।
স্বদেশ-বন্দনায় রবীন্দ্রনাথ নিজেই উপমহাদেশের সব বিচ্ছিন্ন ও বিপরীত মানবসত্তাকে এক মহামানবের কাতারে শামিল করতে চেয়েছেন।
'মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা, মঙ্গলঘট হয়নি যে ভরা
সবার-পরশে-পবিত্র করা তীর্থনীরে_'
রবীন্দ্রনাথ সেখানেও থেমে থাকেননি। জীবনের পরিণত অন্তিম সময়ে বিশ্বের সভ্যতাগ্রাসী সমরশক্তির বিরুদ্ধে সব মানবজাতির ঐক্য কামনা করে আহ্বান জানিয়েছেন এক মহামানবকে। মানুষের ঐক্যবদ্ধ শুভশক্তির অভ্যুত্থান চেয়েছেন অশুভশক্তির বিরুদ্ধে।
আজ তাঁর সার্ধশততম জন্মজয়ন্তীতে শুধু দুই বাংলার নয়, উপমহাদেশের দুটি প্রধান দেশ_বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যাপন অনুষ্ঠান এ শতাব্দীর এক সুগভীর তাৎপর্য বহন করছে। দুই দেশ সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যাবে রবীন্দ্রনাথকে বুকে নিয়ে, হাতে হাত ধরে মানুষের সর্বোচ্চ কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে। আর সে উদ্দেশ্যেই ঢাকায় উপস্থিত হয়েছেন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারী। জন্মজয়ন্তীর এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর গভীর অন্তর্দৃষ্টি নিয়েও রবীন্দ্র-মানসে লালিত তাঁর সুদৃঢ় অতীত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ এ দেশের আত্মীয়। রবীন্দ্রনাথে আমাদের ভাগ সমান সমান। রবীন্দ্রনাথের চিন্তাচেতনার আলোকেই তিনি বাংলাদেশকে কল্যাণ-রাষ্ট্র করার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর সমাপনী বক্তব্য : 'সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালবাসিলাম/সে কখনো করে না বঞ্চনা'_রবীন্দ্রনাথের অমর ও চিরায়ত বাণী।
বাঙালি আজ এই বাণীর মহাসত্যকে ধারণ করেই সব রবীন্দ্রবিরোধিতা, সব কূপমণ্ডূকতা, সব অজ্ঞতা ও সীমাবদ্ধতাকে চূর্ণ করে বিশ্বকবির সার্ধশততম জন্মজয়ন্তীতে আপন মুক্তি ও কল্যাণ সাধনের মধ্য দিয়ে বিশ্বমানবের কল্যাণ-অভিযাত্রায় শামিল হওয়ার দৃপ্ত শপথ নেবে। আমরা ভুলে যাব না যে রবীন্দ্রনাথ আমাদের সত্তার এক অবিভাজ্য অংশ।

No comments

Powered by Blogger.