জনপ্রশাসন-দলীয়করণের শেষ কোথায়? by আলী ইমাম মজুমদার

জনপ্রশাসন দলীয়করণের ফলে এর মান ও গ্রহণযোগ্যতা ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে—এটা দেশের সুশীল সমাজ প্রতিনিয়তই বলছেন। যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতার বাইরে থাকে, তারা প্রশাসন দলীয়করণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সোচ্চার হয়। আর ক্ষমতায় গেলে দলীয়করণ করায় তারাই অধিকতর তৎপর হয়।


কোনো রাজনৈতিক দল এটা একবারও ভেবে দেখছে না, রাষ্ট্রযন্ত্রের এ অপরিহার্য প্রতিষ্ঠানটি নিরপেক্ষ রাখা হলে তার মান ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। এতে সরকার পরিচালনায় অধিকতর দক্ষতার ছাপ দেখা যাবে এবং উপকৃত হবে দেশ ও সমাজ।
ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের জনপ্রশাসনের ধারাবাহিকতা আমরা পেয়েছিলাম ১৯৪৭ সালে। এর মান ছিল অতি উঁচু। তবে অভাব ছিল জনসম্পৃক্ততার। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি তেমন সংবেদনশীলও ছিলেন না তাঁরা। এর প্রধান কারণ হতে পারে পাকিস্তান রাষ্ট্রটির শাসকেরা অনেকটা সূচনা থেকেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিপরীতমুখী অবস্থানে ছিলেন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও লিয়াকত আলী খানের মৃত্যুর পর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্বলতায় সামরিক ও বেসামরিক আমলারাই রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভূমিকায় এসে পড়েন। তাঁরাই নিয়ে নেন রাজনীতিবিদের ভূমিকা। তবে নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন ইত্যাদি ছিল সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং যোগ্যতাই ছিল এর মাপকাঠি। মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল না বললেই চলে। দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা যায় ক্ষমতাসীন সরকার পরিচালিত ১৯৫৪ সালের নির্বাচন কমিশনবিহীন পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীসহ তাঁর দল শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।
তবে ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি ও সেনাবাহিনীপ্রধান রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে মাঠ প্রশাসনকে ব্যবহার করতে শুরু করেন। শুরুতেই গণভোট এবং ১৯৬৫ সালের সূচনায় মৌলিক গণতন্ত্রীদের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হওয়ার জন্য যথেচ্ছ ব্যবহার করেন মাঠ প্রশাসনকে। রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য প্রশাসনের নিরঙ্কুশ ব্যবহারের সূচনা সম্ভবত তখন থেকেই।
অন্যদিকে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পূর্ব বাংলার মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর মেধাবী উচ্চশিক্ষিত তরুণেরা ক্রমেই কেন্দ্রীয় সার্ভিসগুলোতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পেতে থাকেন। তাঁদের অনেকের প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা সুবিদিত ছিল। ফলে জনপ্রশাসনের বাঙালি সদস্যরা ক্রমান্বয়ে এ দেশের স্বাধিকার আন্দোলনের সমর্থক হয়ে ওঠেন। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিনির্ধারণী পদগুলোতে তাঁরা খুব কমই যেতে পেরেছেন। এসব কর্মকর্তা জনসম্পৃক্ততা না থাকার অপবাদও অনেকাংশে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন। সময়ান্তরে কেউ কেউ প্রত্যক্ষভাবে আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অংশীদার হয়ে পড়েন। এর মাঝে ঐতিহাসিক আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলায় দুজন অভিযুক্ত হয়ে কারা নির্যাতন ভোগ করেন। ছয় দফা ও এগারো দফা আন্দোলন আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে আরও দৃঢ় ভিত্তি দেয়। ১৯৬৯-এর সামরিক শাসনও এ ভিত্তিকে দুর্বল করতে পারেনি; বরং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হলে বাঙালি সামরিক বাহিনীর অনেকের মতো বেসামরিক প্রশাসনের (পুলিশ, ইপিআর, আনসারসহ) একটি উল্লেখযোগ্য অংশও এর শরিক হয়। কেউ সম্মুখ সমরে অংশ নেন। কেউ কেউ শাহাদাতবরণ করেন। কেউ বা মুজিবনগর সরকারে কর্মকর্তা বা কর্মচারী হন। স্বাধীন হলো বাংলাদেশ। আশা করা হয়েছিল স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তার সীমার মধ্যে থেকে নিজের নিজের দায়িত্ব পালন করবে।
যে রাজনৈতিক দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়, সেই দলের সাংগঠনিক ভিত্তি এতই দৃঢ় আর বঙ্গবন্ধুর জনসমর্থন এতটা নিরঙ্কুশ ছিল যে দলীয় কাজের জন্য প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করার আবশ্যকতা তাদের ছিল না। তবে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সময়কালে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা নিজেদের স্বার্থে মাঠ প্রশাসনের (পুলিশসহ) কার্যক্রমের ওপর অযাচিত খবরদারি করতে থাকে। তবে এজাতীয় কোনো বিষয় বঙ্গবন্ধুর নজরে আনলে তিনি দৃঢ়ভাবে দলীয় কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে জানা যায়। তবে সেই সময়কালে কোনো কারণ ছাড়াই যেকোনো কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতির বিধান (রাষ্ট্রপতির ৯ নম্বর আদেশ) ও এর প্রয়োগ—প্রশাসন তার ধারভার হারাতে শুরু করে। কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও যথাযথ প্রক্রিয়া ব্যতিরেকে তাৎক্ষণিক প্রয়োজন বিবেচনায় বিভিন্ন ক্যাডারে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা নিয়োগ প্রশাসনের মান প্রত্যাশিত মাত্রায় রাখা গেল না। সেই সময়ে পাকিস্তানের সামরিক শাসনগুলোর সময়কালের ঐতিহ্য ভেঙে বেসামরিক প্রশাসনের সামরিক কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।
১৯৭৫ সালের অযাচিত, মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক পালাবদলের পর সামরিক আইন জারি, পরিস্থিত আবার ভিন্নরূপ নেয়। ১৯৭৭ সালের সূচনায় তদানীন্তন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা নিরঙ্কুশভাবে গ্রহণ করেন। নতুন শাসক তাঁর রাজনৈতিক দল গঠনে সামরিক ও বেসামরিক আমলাদেরই মূলত কাজে লাগান। গণভোটেও মূলত জনপ্রশাসনকে ব্যবহার করা হয়। অতঃপর রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচনে যথেষ্ট মাত্রায় প্রশাসন ব্যবহূত হয়। আবার ১৯৮১ সালের এক বিয়োগান্তুক ঘটনায় প্রাণ হারান রাষ্ট্রপতি। তদানীন্তন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন নতুন রাষ্ট্রপতিরূপে। তবে ১৯৮২ সালের সূচনাতেই তখনকার সেনাপ্রধান হুসেইন মুহাম্মসদ এরশাদ সামরিক আইন জারি করে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। তাঁর ক্ষমতাকে বৈধতা দিতে ১৯৭৭ সালের বৈশিষ্ট্যগুলোই হুবহু অনুসরণ করা হয়; বরং আরও বেশি মাত্রায়। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ব্যবহার করে প্রায় ভোটারবিহীন একটি নির্বাচন তাঁর সময়কালেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফলে জনগণের কাছে শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, গোটা নির্বাচনব্যবস্থাই অগ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিল। সেই সময়কালে—১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৮৫, ১৯৮৬ সালে তাৎক্ষণিক প্রয়োজন বিবেচনায় অনেক বেশিসংখ্যক কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয় কোনো ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ব্যতিরেকে; এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে নিয়োগপ্রক্রিয়া শিথিল করে। অধিকন্তু এ দুজন রাষ্ট্রপতির শাসনকালেই জনপ্রশাসনে সামরিক কর্মকর্তাদের ব্যাপক হারে অন্তর্ভুক্তি ঘটতে থাকে। ফলে সংকুচিত হয় বেসামরিক কর্মকর্তাদের পদায়ন বা পদোন্নতির সুযোগ। স্বাভাবিকভাবে তাঁদের মনোবলেও ভাটা পড়ে। একইভাবে এই দুটি আমলে বহুসংখ্যক বেসামরিক কর্মকর্তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই চাকরিচ্যুত করা হয়। কেউ কেউ কারাগারেও নিক্ষিপ্ত হন। পরবর্তী সময়ে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে অনেকে চাকরিও ফিরে পেয়েছিলেন।
ব্যাপক গণ-আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত অন্তবর্তী সরকার সরকারের আওতায় ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সব দলের অংশ গ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি ক্ষমতায় আসে। সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা দীর্ঘদিন পর পুনঃপ্রবর্তিত হয়।
দীর্ঘদিন পর গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা কায়েম হলে আশা করা হয়েছিল জনপ্রশাসনসহ দেশের দুর্বল হয়ে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় শক্তিশালী হবে। কিন্তু অল্পদিনে গুড়ে বালি পড়তে থাকে। প্রশাসনে দলীয়করণের অভিযোগ আসতে থাকে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে। দাবি আসতে থাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ব্যতীত দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রধান বিরোধী দলের অংশ গ্রহণ ছাড়া ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একতরফাভাবে নগণ্যসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতিতে সংসদ নির্বাচন হয়। অন্যদিকে বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে দেশ প্রায় অচল হয়ে যায়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জনতার মঞ্চ নামে বিরামহীন গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। একপর্যায়ে এতে যোগ দেন প্রজাতন্ত্রের বেশ কিছু দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। ফলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কোনো দলের প্রতি সমর্থনের বিষয়টি রাখঢাক আর রইল না। এ অবস্থার মুখে তড়িঘড়ি করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে সরকার পদত্যাগ করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। সে ব্যবস্থায় ১৯৯৬ সালের জুনে আওয়ামী লীগ এবং ২০০১-এ বিএনপি ক্ষমতায় আসে। এই উভয় সরকারের সময়কালে প্রশাসনে দলীয়করণের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে। তবে দুঃখজনকভাবে ২০০১-২০০৬ সময়কালে বহুসংখ্যক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।
২০০৭-এর সূচনায় পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও এর আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বিতর্কিত করে ফেলা হয়। ২০০৪ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে এর সূচনা। এ বয়সসীমা বৃদ্ধির ফলে পরবর্তী নির্বাচনকালে যাঁর প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কথা, তিনি বিরোধী দলের কাছে প্রথম থেকেই গ্রহণযোগ্য ছিলেন না। একইভাবে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনেও আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়। সরকারের মেয়াদ শেষের দিকে সরকারি দল ও বিরোধী দলের প্রাণঘাতী সংঘাতময় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ফলে দেশ প্রায় অচল হয়ে যায়। সেই সময়ে সদ্য বিদায় নেওয়া সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে চিহ্নিত বেশ কিছু কর্মকর্তা আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে উত্তরার একটি বাড়িতে সমবেত হন। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারিত হয় ব্যাপকভাবে। এ যেন জনতার মঞ্চেরই প্রতিকল্প একটি ছায়া। যিনি প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কথা, তিনি স্বীয় মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে এ দায়িত্ব গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। অন্য বিকল্পগুলো প্রয়োগের তেমন কোনো চেষ্টা না করে রাষ্ট্রপতি নিজে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। সাময়িক কিছুটা স্বস্তি এলেও তিনি সবার কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করতে সক্ষম হননি। এ সংকটকাল উত্তরণে তাঁর পদক্ষেপ ছিল দুর্বল বা ক্ষেত্রবিশেষে নেতিবাচক। এ ধরনের অচল অবস্থার স্বাভাবিক পরিণতিই এক-এগারো। সামরিক বাহিনীর সমর্থনে গঠিত হয় একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেই সরকার দ্রুত নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে।
২০০৭-০৮ সরকারের বিভিন্ন ধরনের মূল্যায়ন আছে। তবে সেই সময়কালে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে তাঁদের দলীয় পরিচয় আছে কি না, তা বিবেচনাতেই নেওয়া হতো না। বরং আগের সরকারের সময়কার সুবিধাভোগী কর্মকর্তা বলে যাঁরা চিহ্নিত ছিলেন, তাঁদের সুবিধাদি প্রায় অক্ষুণ্ন রেখেই বঞ্চিত অথচ যোগ্য কর্মকর্তাদের ধীরে ধীরে শূন্যপদের ভিত্তিতে উপযুক্ত পদে পদোন্নতি ও পদায়ন করা হয়। তবে সেই সময়কালে জনপ্রশাসনের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযানের শিকার হন। এর বেশ কিছু ছিল অকারণ বা তুচ্ছ কারণে।
২০০৮ সালের শেষ দিকের নির্বাচনে মহাজোট নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে। আশা করা হয়েছিল নিকট অতীতের ধারাবাহিকতা অনুসরণে প্রশাসনকে দলীয়করণের প্রভাবমুক্ত রাখার বিষয়টি কিছুটা হলেও চলমান থাকবে। কিন্তু নতুন সরকার নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তোলার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে লক্ষণীয় কোনো প্রচেষ্টাই নিল না। অথচ সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাদ দেওয়ার ফলে নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী করার যে অঙ্গীকার; তার একটি প্রধান উপাদান হতে হবে নিরপেক্ষ অরাজনৈতিক জনপ্রশাসন।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের দুটো সামরিক শাসনামলের আরেকটি বৈশিষ্ট্য প্রচুর পরিমাণে সেনা কর্মকর্তাদের বেসামরিক প্রশাসনে নিয়োগদান। মজার বিষয় নব্বই-পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকারগুলো সেই প্রক্রিয়াকে ক্রমান্বয়ে আরও জোরদার করছে। আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর জনপ্রশাসনকে মেধাবী, যোগ্য ও পক্ষপাতহীন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী কাঠামো দিতে কোনো সরকারই আগ্রহ দেখায়নি। অনেকের মতে, এখন রাজনীতির উভয় শিবিরে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা নেপথ্যে থেকে অনেক ক্ষেত্রে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছেন। জনশ্রুতি আছে, তাঁদের দাপটে ক্ষেত্রবিশেষে রাজনৈতিক নেতারাও অসহায় দর্শক কিংবা নীরব শ্রোতা। আজ প্রশাসনে নতুন যে এল, তার সামনে রোল মডেল কাদের দেখতে পাচ্ছে? জনপ্রশাসনের গন্তব্যই বা কোথায়?
আলী ইমাম মজুমদার: সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

No comments

Powered by Blogger.