কর্মসংস্থান বৃদ্ধি-শিক্ষাদক্ষতা অর্জন অপরিহার্য

দারিদ্র্য কমেছে বাংলাদেশে। মানুষের আয়ও বেড়েছে। কিন্তু কর্মক্ষমতা ও যোগ্যতা আশানুরূপ বৃদ্ধি না পাওয়ায় মজুরি বৃদ্ধির হিসাব এখনো রয়ে গেছে নিম্নপর্যায়ে। ফলে, গোটা দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে নিম্ন মজুরির ফল। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে শ্রমিকদের দক্ষতার বিষয়টি।


দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতার মাত্রা এখনো নিম্নস্থানে অবস্থান করার কারণে তাদের মজুরিও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। ফলে, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির পরও বাংলাদেশ রয়ে গেছে অর্থনৈতিক সমস্যার একটি দেশ হিসেবে। সামগ্রিক বিবেচনায় বাংলাদেশের শ্রমব্যবস্থায় ইতিবাচক ও নেতিবাচক ফল- দুটোই বিরাজমান। এখানে শ্রমিকদের দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রটি এখনো নেতিবাচক রয়ে গেছে, পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগটি বেড়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৮ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হয়। অভ্যন্তরেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয় ১৭ লাখ লোকের। বাকি এক লাখও বসে থাকে না। তারা চলে যায় বিদেশে। এই হিসাব দেশের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের জন্য আশাব্যঞ্জক কোনো বার্তা বয়ে আনছে না, তবে এটা বলে দিচ্ছে, এই খাতে বাংলাদেশ সতর্ক দৃষ্টি না রাখলে দেশের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ব্যাপক শূন্যতা সৃষ্টি হবে। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকেও তা প্রতিহত করতে পারে। আর এর কুপ্রভাব সামাজিক জীবনকেও আক্রান্ত করতে পারে। শিক্ষাব্যবস্থার যে পরিবর্তন হয়েছে, তারও মোড় ঘুরিয়ে দিতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বলার সময় এসেছে, শিক্ষার হার এবং সুযোগ বেড়েছে- এই তথ্য মেনে নিলেও শিক্ষার মান উন্নত হয়নি। স্পষ্টত স্লোগানে পরিবর্তন আনার সময় হয়ে গেছে। বলতে হবে, এই মুহূর্তেই মানসম্পন্ন শিক্ষা সম্প্রসারণ অপরিহার্য। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশের উৎপাদনশীলতা স্থিতিশীল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন উৎপাদনশীলতার অন্য দিকগুলোকে ইতিবাচক দিকে প্রবাহিত করতে হলে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুদিন আগেও নিম্নগামী ছিল। কিন্তু হালে তা বাড়ছে এবং অতিসম্প্রতি তা বেড়ে গিয়ে ১০ বিলিয়ন ডলারের মাত্রা অতিক্রম করেছে। সুতরাং এত ইতিবাচক দিক থাকার পরও আমাদের আগামী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আশঙ্কাজনক হবে, এটা ঠিক নয়। যাতে শ্রমব্যবস্থায় অদক্ষ জনশক্তির পরিমাণ করে যায়, তাদের কর্মাশ্রয়ী শিক্ষায় শিক্ষিত করা সম্ভব হয়, তাহলে আগামীতে বাংলাদেশকে কর্মসংস্থানের যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, তা অনেকাংশে সহজতর হয়ে যাবে। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় করতে হলে এখানে অবকাঠামোগত সুবিধাগুলো বৃদ্ধি করতে হবে দ্রুত। বিদ্যুৎ সমস্যার মতো জটিল বিষয়গুলোকেও গুরুত্বসহ বিবেচনা করতে হবে। তা না হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সুবিধা বৃদ্ধি হবে না।

No comments

Powered by Blogger.