যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনে কিছু করুন-রাজধানীর দুর্বিষহ জীবন

শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি হবে, এই তো স্বাভাবিক। কিন্তু দুই দিনের বৃষ্টিতেই যদি কোনো নগরের রাস্তায় নৌকা চালাতে হয়, সেটা মোটেই স্বাভাবিক নয়। রাজধানী ঢাকার কিছু রাস্তায় নৌকায় চড়ে মানুষের চলাচলের ছবি দেখতে হচ্ছে। কারণ, বৃষ্টি।
না, বৃষ্টি হলেই নগরের পথঘাট, বাজার, পাড়া-মহল্লার অলিগলি—সবখানে পানি-কাদায় দুঃসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার


কথা নয়। এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এ জন্য যে, আমরা এই মহানগরের পানিনিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করিনি। যেটুকু ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেগুলোও ঠিকমতো কাজ করে না। ময়লা-আবর্জনায় রুদ্ধ হয়েছে অধিকাংশ নালা-নর্দমা। আর এককালে এই ঢাকার ভেতর দিয়ে যে বেশ কিছু খাল বয়ে যেত, যেগুলো বৃষ্টির পানি নিয়ে গিয়ে ফেলত চারপাশের নদনদী ও নিচু জলাভূমিতে, সেসব খালের অধিকাংশই আজ বিলুপ্ত। অবশিষ্ট যে কয়েকটি এখনো টিকে আছে, তার চেহারা হয়েছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ের মতো। ফলে একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় মহানগরে।
থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে তিন-চার দিন ধরে। কিন্তু প্রবল বর্ষণ যাকে বলে, তা হয়নি। তাতেই মনে হচ্ছে, রাজধানীতে যেন এক দুর্যোগ চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে দুর্ভোগ; কাঁচাবাজারে সরবরাহ কমেছে, ফলে বেড়েছে দাম। সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়েছে: ক্রেতারা কাঁচাবাজারে ঢুকতেই পারছে না। পাইকারি বাজারগুলোও প্রায় ক্রেতাশূন্য। সবজিসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যদ্রব্যের মূল্য বেড়েছে আরেক দফা।
বৃষ্টি, কাদা, জলাবদ্ধতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বর্ণনাতীত যানজট। যানজট যেন প্রকটতর না হয়, সে জন্য রমজান শুরুর আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ছুটির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষত শিশুদের বিদ্যালয়গুলোতে ইতিমধ্যে ছুটি শুরু হয়েছে। কিন্তু তার সুফল ফলেনি, যানজট আরও বেড়েছে। এই মহানগরে মানুষের চলাচলের গতি এতটাই মন্থর হয়ে পড়েছে যে মনে হচ্ছে, এখানে জীবন স্থবির হতে চলেছে। যানজটের প্রত্যক্ষ ফল হচ্ছে কর্মঘণ্টার অপচয়, যানবাহনের অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ, বায়ুমণ্ডলের অতিরিক্ত দূষণ এবং মানুষের দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরাট চাপ।
এই সমস্যাগুলো সাম্প্রতিক নয়। রমজান চলছে বলে বা একটানা কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে বলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। বহু বছর ধরে জমে উঠেছে সমস্যার পাহাড়। পানিনিষ্কাশন-ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও পাতালরেল, উড়ালরেল নির্মাণের বড় বড় সব পরিকল্পনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেসবই দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা। কত বছর পর বাস্তবায়িত হবে, তত দিনে মহানগরের জনসংখ্যা আরও বেড়ে কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, আমরা জানি না। কিন্তু এ মুহূর্তে জনজীবনের দুর্ভোগ লাঘবের কোনো চেষ্টাই নেই। যানজট সম্পূর্ণ নিরসন সম্ভব নয়, কিন্তু সুষ্ঠু ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার দ্বারা কি এটা সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব নয়? একই প্রশ্ন জলাবদ্ধতার প্রসঙ্গেও। বিদ্যমান নালা-নর্দমাগুলো সংস্কার করে, খালগুলো দখলমুক্ত-আবর্জনামুক্ত করে পানিনিষ্কাশনের কিছু পথ তো অবশ্যই বের করা যায়।

No comments

Powered by Blogger.