গোদের ওপর বিষফোড়া

বাজার দরের ঊর্ধ্বমুখী চাপে এমনিতেই জনজীবনে বিরাজ করছে চরম অস্বস্তি। সাধারণ মানুষ যখন এই চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে, তখনই আবার চাপিয়ে দেওয়া হলো মূল্যবৃদ্ধির নতুন এক খড়গ। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে রীতিমতো বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এবার বাড়ানো হয়েছে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম।


অথচ বিইআরসি আইন-২০০৩ অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো-কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার বিইআরসির। বিপিসির পক্ষ থেকে অবশ্য 'সময় ছিল না'_এমন একটা যুক্তি দেখানো হয়েছে। এখন প্রতি লিটার অকটেনের দাম হবে ৭৯ টাকা। পেট্রল ৭৬ টাকা। ডিজেল ও কেরোসিন ৪৬ টাকা এবং ফার্নেস তেলের দাম প্রতি লিটার ৪২ টাকা। এক মাস আগে গত ৬ এপ্রিলও ফার্নেস তেলের দাম দুই টাকা বাড়ানো হয়েছিল। ওদিকে গাড়িতে ব্যবহৃত সিএনজির দামও বাড়তে যাচ্ছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সিএনজির দাম বাড়ানোর বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। আগামী সপ্তাহে এই মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। স্বাভাবিক কারণেই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর সিএনজির দাম বাড়লে সামগ্রিক জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়বে। সাধারণ মানুষের জন্য এটা গোদের ওপর বিষফোড়ার মতোই। বর্তমান সরকারের আমলে একযোগে সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এই প্রথম। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। প্রতিবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কথাই বলা হয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জ্বালানিসচিব সংবাদমাধ্যমকে তেমনটিই বলেছেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্ববাজারের দাম অনুযায়ী প্রতি লিটার ডিজেলে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয় ৩৩ টাকারও বেশি। প্রতি লিটার কেরোসিনে দিতে হয় ৩৩ টাকার কিছু কম। প্রতি লিটার অকটেনে আট টাকা, পেট্রলে প্রায় ১৩ টাকা করে ভর্তুকি দিতে হয়। তেলের বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব অর্থনৈতিক খাতগুলোর ওপর। একদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকারের ভর্তুকিও বেড়ে যাচ্ছে; ফলে রাজস্ব আয়-ব্যয়ের কাঠামো অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। এমনিতেই দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, তার ওপর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত সব ধরনের পণ্যের দামও বাড়বে। জ্বালানি তেল ও সিএনজির দাম বাড়লে বেড়ে যাবে যেকোনো ধরনের শিল্পোৎপাদন এবং পরিবহন ব্যয়। ব্যয় বাড়বে জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে। বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী বাজার দরের পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধিজনিত নতুন আর্থিক চাপ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে অনেকটাই কঠিন করে তুলবে। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ও বাড়বে। সরকার ডিজেল ও ফার্নেস তেলভিত্তিক অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে। এ ছাড়া দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানও ফার্নেস তেল দিয়ে চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের জ্বালানি তেলনির্ভর যাতায়াত ও গণ-পরিবহন ব্যবস্থায়ও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ খাতে এখন এমনিতেই বিশৃঙ্খলা চলছে। বিশেষ করে, নগর পরিবহনের কোনো যানবাহনই ভাড়ার ক্ষেত্রে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি তাদের আরো উৎসাহিত করবে। সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়বে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে গেলে দেশেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছিল। জনগণের কল্যাণ চায়, এমন সরকার জনগণকে চাপমুক্ত রাখতে চাইবে। বর্তমান সরকার জনকল্যাণে কাজ করছে এবং করবে_এমনটি বিশ্বাস করতে চাই আমরা। জনগণকে বাড়তি চাপ থেকে মুক্ত রাখতে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সরকারকেই সেটা ভেবে দেখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.