ধানের বাম্পার ফলন

যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পুণ্য দেশ'_এই প্রবাদ-প্রবচন যেন এবার সত্যি হয়েছে। বোরো ধানের বাম্পার ফলন দেখে তা-ই বলা যায়। মাঠভর্তি সোনালি ধান দেখে কৃষকের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে। কৃষক তৃপ্তির নিশানা দেখেছিল বোরো মৌসুমের শুরুতেই। প্রকৃতি ছিল অনুকূলে। পরিমিত বৃষ্টিও হয়েছিল এবার। শুরু হয়েছিল মাঘের শেষ থেকে।


উত্তর-দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রায় পুরো এলাকায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। চাল আকারে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টন ধরা হলেও প্রকৃত উৎপাদন দুই কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এই হিসাবে এবারের উৎপাদন গত বছরের উৎপাদনের পরিমাণকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফসলের মাঠ এখন সরগরম হয়ে উঠেছে কৃষকের পদচারণে। এবার মৌসুম শুরুর আগেই ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে ব্রি-২৮ কাটার পুরো মৌসুম এটা। সপ্তাহকালের মধ্যে আরো ধান সব এলাকায় উঠতে শুরু করবে। ধান কাটা, ধান মাড়াই কিংবা ধান শুকানো_সব মিলে তাদের ফুরসত নেই মোটেও। একসময় আমন মৌসুমে যেভাবে সারা দেশে নবান্ন পালন হতো, ঠিক তেমন কোনো উৎসব এখন দেখা না গেলেও গ্রামেগঞ্জে কৃষকের আনন্দ ঠিকই টের পাওয়া যায়। এবার দামও পাচ্ছেন কৃষক। বগুড়া অঞ্চলে এখন ব্রি-২৮ ধান কাঁচা ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত মণ দরে বিক্রি হচ্ছে বলে পত্রিকায় সংবাদ হয়েছে। এতে কৃষক সন্তুষ্ট। কারণ এবার তাঁদের উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে অনেক কম হয়েছে। সরকার ইতিপূর্বে সারে ভর্তুকি বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে কৃষকের দোরগোড়ায় সার পেঁৗছে দেওয়ার কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দেশে সেচের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল নিরবচ্ছিন্ন। আবার বৃষ্টিপাতও হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার ফলন অন্য বছরের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। এখন কৃষক যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। অনেক সময়ই মধ্যস্বত্বভোগী ও দালালদের খপ্পরে পড়তে হয় কৃষককে। এসব দালালের হাত থেকে কৃষককে বাঁচাতে হবে। ধান উৎপাদনের পর কিছু অসৎ ব্যবসায়ী ধানের মজুদ করে পরবর্তী সময়ে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ খোঁজে। চালের দাম স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার চালের মজুদের সময় বেঁধে দিয়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আশা করা যায়, এতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা কমে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.